নিজস্ব প্রতিবেদন: ঝিমিয়ে অর্থনীতি। বাড়ছে দাম। কমছে কাজের সুযোগ। লক্ষ্য থেকে অনেক পিছিয়ে কর আদায়। ভাঁড়ারে টান পড়ায় সরকারি খরচ বাড়িয়ে হাল ফেরানোর চেষ্টাতেও বাধা। বাড়তি
টাকা কোথা থেকে আসবে, স্পষ্ট উত্তর নেই। হিন্দু গ্রোথ রেট ও স্ট্যাগফ্লেশন নিয়ে নানা মুনির নানা মতের মধ্যে শনিবার বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

নিজের দ্বিতীয় বাজেট পেশ করার আগে স্বস্তিতে নেই নির্মলা সীতারমন। সরকারিই হোক বা বেসরকারি, দেশি বা বিদেশি- প্রায় সব পরিসংখ্যানই বলছে, অর্থনীতির হাল মোটেই ভালো নয়। জুলাই-সেপ্টেম্বরে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৪.৫%, যা ৬ বছরে সবচেয়ে কম। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস, চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির হার হবে ৫%। আইএমএফের পূর্বাভাস, আর্থিক বৃদ্ধির হার আরও কমে দাঁড়াবে ৪.৮%। আর্থিক বৃদ্ধির হার ১১ বছরে সবচেয়ে কম হওয়ার সম্ভাবনায়, ভারতীয় অর্থনীতি আবার হিন্দু গ্রোথ রেটে ফিরে যাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা চলছে নানা মহলে।   


অর্থনীতিকে খাদের কিনারা থেকে সরিয়ে আনতে, ৫ বছরে পরিকাঠামোয় একশো লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু টাকার জোগান কোথা থেকে হবে, তা নিয়েও থাকছে প্রশ্ন। চলতি অর্থবর্ষে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রত্যক্ষ কর আদায় গত অর্থবর্ষের চেয়ে ৫.৫% কম। প্রত্যক্ষ কর আদায়ের লক্ষ্য ১৩.৫ লক্ষ কোটি, আদায় হয়েছে ৭.৩ লক্ষ কোটি টাকা। দু'দশকে প্রথম প্রত্যক্ষ কর আদায়, বাড়ার বদলে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা কমতে পারে। জিএসটি আদায়ের পরিমাণও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা কম হতে পারে।


২.৫ লক্ষ কোটি টাকা কম কর আদায় হলে রাজকোষ ঘাটতি জিডিপি-র ৩.৩%-এ বেঁধে রাখা কার্যত অসম্ভব। রাজকোষ ঘাটতি বাড়লে সরকারি খরচ কম হবে, তাহলে আবার, অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ারও সুযোগ কমবে। কর্পোরেট করে ছাঁটাই, ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি। দুয়ে মিলে কর আদায়ে ঘাটতি। গত বাজেটে প্রত্যক্ষ কর, জিএসটি ও বিলগ্নিকরণ থেকে ২১ লক্ষ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল।তিনটি ক্ষেত্রে আর্থিক বছরের শেষে সরকারের ঘরে আসতে পারে ১৮ লক্ষ কোটি টাকা। ৩ লক্ষ কোটি টাকার ঘাটতি কীভাবে মিটবে, এ প্রশ্নের সুস্পষ্ট উত্তর নেই।  


অর্থনীতিবিদদের প্রেসক্রিপশন, বৃদ্ধির চাকায় গতি আনতে খরচ আরও বাড়াক সরকার। ভাঁড়ারে টান পড়ায়, তাহলে কি বাজার থেকে আরও ধার? আর সেই সিদ্ধান্ত নিলেও প্রশ্ন থাকছে, ধারের চেষ্টা করেও কী টাকা মিলবে? আর্থিক ঘাটতির লাগাম শিথিলই বা কতটা যুক্তিযুক্ত? সূত্রের খবর, আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে সামাল দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। তা হলে আবার রয়েছে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা। 


ডিসেম্বরে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ৭.৩৫%, যা সাড়ে ৫ বছরে সবচেয়ে বেশি। জিনিসের দাম ছাপিয়ে গেছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ৪%-এর লক্ষ্যমাত্রা। ডিসেম্বরে পাইকারি বাজারেও মূল্যবৃদ্ধির হার ২.৫৯%, যা ৭ মাসে সবচেয়ে বেশি। দাম বাড়তে থাকলে সুদ কমানো কঠিন, আর তাহলে, শিল্পমহলও নতুন ঋণ নিয়ে লগ্নিতে উত্‍সাহী হবে না। আর্থিক বৃদ্ধিতে ঢিমে গতি ও মুদ্রাস্ফীতি, দুয়ে মিলে এখন মাথা চাড়া দিচ্ছে স্ট্যাগফ্লেশনের আশঙ্কা।


অর্থনীতির এই অসুখ সিজনাল নাকি স্ট্রাকচারাল, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। সমস্যায় সাধারণ মানুষ। নোটবন্দির পরের বছর বেকারত্বের হার ৬.১%, যা ৪৫ বছরে সবচেয়ে বেশি। গত সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বরে বেকারত্বের হার ৭.৫%, যা আড়াই বছরে সবচেয়ে বেশি। কাজ নেই। ফলে, মানুষের হাতে টাকাও নেই। পরিসংখ্যানই বলছে, ২০১৭-১৮ সালে চার দশকের মধ্যে মাথাপিছু মাসিক খরচ তলানিতে পৌছেছে। সুতরাং অসুখ অনেক। অর্থমন্ত্রীর বইখাতা থেকে কী দাওয়াই বেরোয়, এখন সেদিকেই নজর গোটা দেশের। 


আরও পড়ুন- চলতি অর্থবর্ষে জিডিপি ৫%, আগামীতে ৬-৬.৫ শতাংশ, আভাস আর্থিক সমীক্ষায়