অর্থ নিয়ে কাড়াকাড়ি, চিড় `ধরছে` জোটে
কর্ণাটকে জোট সরকারের রীতি অনুযায়ী অর্থ মন্ত্রক যে `ছোট শরিকে`রই প্রাপ্য, এই বৈঠকে সে কথা বলেছেন কুমারস্বামী। তবে, দেবগৌড়াপুত্রের দাবির সামনে না দমে অর্থমন্ত্রক কেন তাদের হাতে রাখা উচিত তা `সঙ্গত যুক্তি` দেওয়ার চেষ্টা করে কংগ্রেস নেতৃত্ব।
নিজস্ব প্রতিবেদন: অর্থই অনর্থের মূল। কর্ণাটকে নবগঠিত কংগ্রেস-জেডিএস সরকারের দফতর বণ্টন ঘিরে এখন এই সার সত্যই ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সূত্রের খবর, দক্ষিণের এই রাজ্যের অর্থ দফতর নিজেদের দখলে রাখতে চাইছে জোট সরকারের দুই দলই। অর্থ মন্ত্রক নিয়ে কংগ্রেস ও জেডিএস-এর দড়ি টানাটানি এখনও অব্যাহত, তবে মঙ্গলবারের মধ্যে এর মীমাংসা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিএস নেতা এইচ ডি কুমারস্বামী। কিন্তু, দেবগৌড়াপুত্র যতই 'সুষ্ঠু সমাধানে'র ইঙ্গিত দিন, এই জল অনেক দূর গড়াবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সোমবার নয়া দিল্লিতে কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গুলাম নবি আজাদের বাসভবনে অর্থমন্ত্রক নিয়ে প্রায় ঘণ্টা তিনেকের বৈঠক হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সূত্রের খবর, কর্ণাটকে জোট সরকারের রীতি অনুযায়ী অর্থ মন্ত্রক যে 'ছোট শরিকে'রই প্রাপ্য, এই বৈঠকে সে কথা বলেছেন কুমারস্বামী। তবে, দেবগৌড়াপুত্রের দাবির সামনে না দমে অর্থমন্ত্রক কেন তাদের হাতে রাখা উচিত তা 'সঙ্গত যুক্তি' দেওয়ার চেষ্টা করে কংগ্রেস নেতৃত্ব। এরপরই না কি পিতা দেবগৌড়ার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য সময় চেয়ে নেন কুমারস্বামী।
কিন্তু, কর্ণাটকে জোট সরকারের যে রীতির কথা কুমারস্বামী বলছেন, তা আসলে কী?
২০০৪ সালেও কর্ণাটকে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস-জেডিএসের জোট সরকার। সেই সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কংগ্রেসের ধর্ম সিং এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদে ছিলেন তত্কালীন জেডিএস নেতা সিদ্দারামাইয়া। সে সময় সিদ্দারামাইয়ার হাতেই ছিল অর্থমন্ত্রক। এরপর, ২০০৬ সালে সে রাজ্যে কুমারস্বামীর নেতৃত্বে জেডিএস-বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠা হলে, অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব পান উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা বিএস ইয়েদুরাপ্পা। এইসব ক্ষেত্রেই অর্থমন্ত্রক থেকেছে 'ছোট শরিকে'র হাতে। আর এবার ৩৭ বিধায়ক বিশিষ্ট জেডিএস (কুমারস্বামী প্রথমে দুটি আসন থেকে জিতেছিলেন, কিন্তু পরে একটি আসন থেকে পদত্যাগ করায়, এখন জেডিএস-এর বিধায়ক সংখ্যা-৩৭) এবং ৭৮ বিধায়কের কংগ্রেসের জোটে জেডিএস 'ছোট শরিক' হওয়ায়, অর্থমন্ত্রক জেডিএস-এরই প্রাপ্য বলে দাবি কুমারস্বামীর। আরও পড়ুন- কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী পাকা, কিন্তু মন্ত্রিসভায় কার কতটা দখল?
তবে শুধু অর্থ নিয়েই 'অনর্থ' হতে চলেছে, এমনটা নয়। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো হয়েছে যে জেডিএস সূত্রে দাবি, প্রাণী কল্যাণ, শ্রম, মত্স্য এবং নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক বাদ দিয়ে প্রায় সবকটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরই চাইছে কংগ্রেস। কিন্তু কংগ্রেসের এমন 'আবদার' কিছুতেই মানতে নারাজ দেবেগৌড়ার দল। আরও জানা যাচ্ছে, পূর্ত ও শক্তি মন্ত্রক নিয়েও বিবাদ চরমে উঠেছে। খোদ কুমারস্বামীর ভাই এইচডি রেভান্না এবং কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ডিকে শিবকুমার দু'জনেই এই মন্ত্রক দুটি চাইছেন। ফলে, দফতর বণ্টন ঘিরে কর্ণাটকের ভাগ্যাকাশে রীতিমত দুর্যোগের ঘনঘটা। তবে এই মুহূর্তে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী দেশের বাইরে। তাই কংগ্রেসের তরফে তাঁর সঙ্গে কথা না বলে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না বলে জানা যাচ্ছে। আরও পড়ুন- ৫ বছরের জন্য কি মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন কুমারস্বামী? জল্পনা শুরু কংগ্রেস নেতার মন্তব্যে
প্রসঙ্গত, গতকালই দেবগৌড়া জানিয়েছেন, তাঁরা চেয়েছিলেন কর্ণাটকে সরকার গড়ুক কংগ্রেস। কিন্তু, কংগ্রেসই না কি কুমারস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রী করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। পাশাপাশি, দিল্লি যাওয়ার আগে কুমারস্বামীও বলেছিলেন, জনগণ তাঁকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয়নি, তিনি কংগ্রেসের 'কৃপায়' সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তাই, কৃষি ঋণ মুকুবের প্রতিশ্রুতি তিনি যদি না রাখতে পারেন, তাহলে পদত্যাগ করবেন। অর্থমন্ত্রক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই দফতর জেডিএস-র পকেটে থাকলে জনমোহনী পদক্ষেপ করতে সুবিধা হবে কুমারস্বামীর এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের। আরও পড়ুন- কংগ্রেসকে সমর্থন করতে চেয়েছিলাম, উল্টে তাঁরাই কুমারস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রী করল: দেবেগৌড়া
তবে, ২০১৯-এ লোকসভা ভোটের আগে কর্ণাটকের জোট সরকারের অস্তিত্ব যাতে কোনওভাবে বিপন্ন না হয় তা নিশ্চিত করার রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা কংগ্রেসেরও রয়েছে। বা বলা ভাল এই বাধ্যবাধকতা যতটা কংগ্রেসের রয়েছে, তার সিকিভাগও নেই জেডিএস-এর। কুমারস্বামীর শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে বেঙ্গালুরুতে যেভাবে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে একমঞ্চে এবং এক ফ্রেমে দেখা গিয়েছে, তাতে রীতিমত শঙ্কিত বিজেপি শিবির। এমতাবস্থায় এই জোট কোনওভাবে ব্যর্থ হলে শুধু কর্ণাটকের শাসনভারই হাত ছাড়া হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হবে না, একই সঙ্গে আসন্ন লোকসভা ভোটে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার জায়গা থেকেও পিছু হঠতে হবে কংগ্রেস। উল্লেখ্য, ফুলপুর ও গোরক্ষপুরে লোকসভা উপনির্বাচনে সপা-বসপা জোটের কাছে বিজেপির ধরাশায়ী হওয়ার পর কর্ণাটক বিধানসভার ফলাফলও অক্সিজেন জুগিয়েছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলিকে। এমতাবস্থায় কর্ণাটকের জোট সঙ্কটে পড়ে গেলে তা কংগ্রেস-সহ দেশের সবকটি অবিজেপি রাজনৈতিক শক্তি আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাবে। অন্যদিকে, স্বস্তির শ্বাস ফেলবে গৈরিকবাহিনী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থই অনর্থ ঘটাবে, না কি 'বৃহত্তর স্বার্থ' জয়ী হবে, তা বলবে সময়। আরও পড়ুন- 'মানুষ সমর্থন করেনি, ক্ষমতায় এসেছি কংগ্রেসের কৃপায়', কুমারস্বামীর মন্তব্যে তোলপাড়