নিজস্ব প্রতিবেদন : ঈশ্বরের পরেই তাঁর স্থান বলে মনে করে মানুষ। কিন্তু তিনিই যদি হয়ে ওঠেন সাক্ষাত্ যমদূত? ঠান্ডা মাথায় খুন করেন ৫০-এরও বেশি মানুষের? না, কোনও থ্রিলার সিনেমার প্লট নয়, বাস্তব। ৫০-এরও বেশি ব্যক্তিকে অপহরণ ও হত্যা করেছে এক চিকিত্সক। স্থান, দিল্লির বাপরোলা। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ধৃতের নাম দেবেন্দর শর্মা। বছর ষাটেক বয়েস। মাঝারি উচ্চতার দোহারা চেহারা। আয়ুর্বেদ মেডিসিন ও সার্জারিতে ব্যাচেলর দেবেন্দর বাড়ি উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে। পুলিসের আন্দাজ অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ১০০-র কাছাকাছি খুন করেছে দেবেন্দর। তার জন্য যাবজ্জীবন কারাদন্ডও দেওয়া হয় দেবেন্দরকে। প্রায় ১৬ বছর বন্দী থাকার পর সম্প্রতি জানুয়ারিতে ২০ দিনের জন্য প্যারোলে পাঠানো হয় তাকে। কিন্তু সেই প্যারোলের সীমা পার হয়ে গেলেও হদিশ মেলেনি তার। অবশেষে দিল্লিতে খোঁজ মেলে তার।


কাহিনীর শুরুটা ১৯৮৪ সাল। আয়ুর্বেদিক ডাক্তারি পাশ করে রাজস্থানের জয়পুরে নিজের ক্লিনিক খোলে দেবেন্দর। ক্লিনিক মোটামুটি ভালই চলত। কিন্তু বাড়তি আয়ের আশায় ১৯৯২ সালে একটি গ্যাসের ডিলারশিপ নেয় সে। তার জন্য খরচ করে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা। তখনকার সময়ের হিসাবে যা মোটেও কম নয়। কিন্তু সেই স্কিম প্রদানকারী সংস্থার প্রতারণায় পুরো টাকাটাই খোয়াতে হয় তাকে। 


জীবনের সমস্ত সম্বল হারিয়ে অথৈ জলে পড়ে দেবেন্দর। এর পরেই আসে কিডনি পাচারকারীদের দলে যোগদানের অন্ধকার হাতছানি। খাটনি কম। টাকাও প্রচুর। সেই দেখে পাচার চক্রে যোগ দেয় সে। পাশাপাশি পাড়া-প্রতিবেশির যাতে সন্দেহ না হয় সেই জন্য, একটি ভুয়ো গ্যাসের ডিলারশিপ খুলে ফেলে নিজের গ্রামে। 


কীভাবে চলত সেই কিডনি পাচার চক্র? মঙ্গলবার সকালে পুলিসের জেরায় দেবেন্দর জানায়, যোগ দেওয়ার অল্প কিছু দিনেই রাজস্থান, হরিয়ানা ও দিল্লির কিডনি পাচার চক্রের অন্যতম মাথা হয়ে ওঠে সে। চক্রের বিভিন্ন সদস্যদের আলাদা আলাদা দায়িত্ব থাকত। কেউ কিডনি দাতা জোগাড় করার দালাল হিসাবে কাজ করত। কেউ আবার দেবেন্দরের মতো শল্যচিকিত্সকের কাজ করত। ধনী রোগীদের কিডনি সাপ্লাই করার জন্যও দালালের কাজ করত অনেকে।

 


দেবেন্দর জানিয়েছে এক একটি কিডনি সংগ্রহ করে অন্যের দেহে বসানোর জন্য প্রায় ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা পেত সে। ১৯৯৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ১২৫-এরও বেশি কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেছে সে। এরপরেই বহু অভিযোগের ভিত্তিতে ২০০৪ সালে গ্রেফতার হয় দেবেন্দর ও একাধিক শল্য চিকিত্সক। তবে গল্পের এখানেই শেষ নয়। বরং আসল শুরু বলা যেতে পারে।


পুলিসি জেরায় জানা যায়, কিডনি পাচার চক্র চালানোর সময়েই জয়পুরে নতুন 'ব্যবসা' ফাঁদে দেবেন্দর। সেখানে টিম বানিয়ে ট্যাক্সি, এলপিজি বহনকারী ট্রাক চুরি করাতো সে। তার দলের লোকেরা গভীর রাতে ট্যাক্সি ডেকে কোনও ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যেতে বলত। তারপর সেখানে পৌঁছতেই খুন করতে ট্যাক্সিচালককে। এরপর সেই গাড়িই চালিয়ে এনে কাশগঞ্জের হাজারা খালে ফেলা হত চালকের দেহ। কারণ? হাজারা খালে ভর্তি কুমির। ফেলার ২-৩ দিনের মধ্যে হাড়টুকুও অবশিষ্ট থাকবে না। আর সেই ট্যাক্সি নিয়ে এসে চক্রের ক্রেতাদের বিক্রি করা হত। প্রতিটি এমন ট্যাক্সির জন্য ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা কমিশন পেত দেবেন্দর। 

 


শুধু ট্যাক্সিই নয়, এলপিজি বহনকারী ট্রাক আটকে তাতে নানা বাহানা করে উঠে সেই চালক ও খালাসিদেরও একই ভাবে খুন করত দেবেন্দরের টিম। তারপর এলপিজি নামিয়ে নেওয়া হত তার গ্রামের ছোট্ট ভুয়ো গ্যাস এজেন্সিতে। আর ট্রাকগুলি মিরাটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হত।


"৫০-এর পর আর কটা এমন করেছি গুনিনি," দেবেন্দরের কথা শুনে যেন চমকে ওঠেন দুঁদে পুলিস অফিসারও। বিভিন্ন রাজ্যের একই ধরনের এমন অভিযোগ থেকে পুলিসের ধারণা, খুনের সংখ্যাটা ১০০-রও বেশি হওয়া অসম্ভব নয়। তবে, আদালতে এখনও পর্যন্ত ৭টিই প্রমাণ করা গিয়েছে। 


প্যারোলে বেরিয়ে চলতি বছর জানুয়ারি মাসে নিখোঁজ হয়ে যান দেবেন্দর। বাড়ি পাল্টে পাল্টে শেষমেশ দিল্লির বাপরোলায় একটি বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। জমি, সম্পত্তির দালালির ব্যবসাও ফেঁদে ফেলেন মাত্র কয়েক মাসেই। বিয়েও করে একজন বিধবা মহিলাকে। পুলিসি জেরায় ওই মহিলা জানান, দেবেন্দর অতীত তিনি সবই জানেন। তা সত্ত্বেও কীভাবে তিনি এমন ব্যক্তিকে বিয়ে করলেন, তাই নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিস।


আরও পড়ুন : Unlock 3.0: উঠল রাতে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, খুলছে না স্কুল-কলেজ, মেট্রো রেল