‘রাহুলের মুখোমুখি হতে চাই, অনেক জবাব চাওয়ার আছে’, গান্ধীকে তোপ গান্ধীর
উত্তরের আমেঠির পর দক্ষিণের কার্যত শেষপ্রান্তে এসে ভোটে লড়ছেন কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী। এখানকার ভূমিপুত্র নন। উপজাতি, মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের বাস ওয়াইনাড জেলার এই পার্বত্য এলাকায়। আদৌ কি তিনি মন জয় করতে পারবেন?
সোমনাথ মিত্র
রণবীরের মতো গোঁফ। সিংঘমের মতো তাঁর হাঁটাচলা। আপাতদৃষ্টিতে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর কোনও ছাপই নেই গড়নে। আভিজাত্য, জনপ্রিয়তাতেও ধার কাছ মাড়াননা তিনি। মিল যেটা আছে তাঁর পদবীতে। আর নামে অল্প বিস্তর ফারাক।
এই ফারাকটা আছে বলেই তিনি নাকি গর্ববোধ করেন। ভুল করে (বলতে পারেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই) যখন তাঁকে 'রাহুল গান্ধী' বলে সম্বোধন করি, তিনি অত্যন্ত স্পষ্ট সুরে বললেন, 'আমার নাম রাহুল গান্ধী নয়, রাঘুল গান্ধী, R-A-G-H-U-L GANDHI। একটা জি এক্সট্রা আছে।' হাবভাবে বুঝিয়ে দিলেন, ওই জি—টা মানে ‘জিনিয়াস’, যেটা কংগ্রেসের রাহুলের নেই। কিন্তু ওয়াইনাড কেন্দ্রে এই ভুলটাই যে এখন প্রাসঙ্গিক। এই ভুলের মাত্রা বাড়লেই সনিয়া-পুত্রের আসনও নড়বড় হতে পারে। কোয়েম্বাত্তুরের রাঘুল শুধু একা নন, আরও দুই জনের নামের শেষে গান্ধী রয়েছে। একজন কে এম শিবপ্রসাদ গান্ধী। অন্য জন কট্টায়ামের রাহুল গান্ধী কে ই। যার নাম ও পদবী কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে হুবহু মেলে। ৩০ বছর বয়সী তামিল যুবক বলেন, “শুনেছি আরও দু'জন গান্ধী ভোটে লড়ছেন।”
উত্তরের আমেঠির পর দক্ষিণের কার্যত শেষপ্রান্তে এসে ভোটে লড়ছেন কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী। এখানকার ভূমিপুত্র নন। উপজাতি, মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের বাস ওয়াইনাড জেলার এই পার্বত্য এলাকায়। আদৌ কি তিনি মন জয় করতে পারবেন? রাঘুল গান্ধীর উত্তর, “এখনও পর্যন্ত প্রচার শুরু করেননি তিনি। হেভিওয়েট জনপ্রতিনিধি কিন্তু মানুষের মন বোঝার সময় নেই। সাধারণ মানুষের থেকে দলের কর্মীদের উপর ভরসা রাখছেন বেশি।” কিন্তু রাঘুল-ও তো এখানকার ভূমিপুত্র নন। কোয়েম্বাত্তুরের ছেলে। তা হলে সে কী ভাবে মানুষের মন বুঝছেন? উত্তরে হাল্কা হাসি রাঘুলের। বললেন, “নতুন ভাবনা। সমাজের নানা ইস্যুকে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে কিছু প্রোজেক্ট। সেগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরছি।” সাড়া পাচ্ছেন? অত্যন্ত প্রত্যয়ী সুরে বললেন, “দারুণ।”
কোয়েম্বাত্তুর থেকে হঠাত্ ওয়াইনাড কেন? রাহুল গান্ধীর জন্য? শুধুমাত্র প্রচারে থাকতে? এক সঙ্গে এত কটা প্রশ্ন শুনেই কিছুক্ষণ থমকালেন। তার পর রাঘুল বলেন, “কোয়েম্বাত্তুর লোকসভা কেন্দ্রে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। গান্ধী পদবী দেখেই খারিজ করে দেয় তামিলানাড়ু নির্বাচন কমিশন। এক প্রকার জেদের বশেই ওয়াইনাড থেকে দাঁড়িয়েছি। বলতে পারেন এটা চ্যালেঞ্জ।” তিনি বলতে থাকেন, “কোয়েম্বাত্তুর বিধানসভা নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছি। নাম নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি। বুঝতেই পারছেন লোকসভা নির্বাচন।” রাহুলকেই যেন খোঁচা দিয়ে বললেন, গান্ধী নামের জন্যই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল তাঁর ভোটে লড়া।
আরও পড়ুন- সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মালে চা শ্রমিকদের কষ্ট বোঝা যায় না, মোদীর নিশানায় রাহুল
কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর পরিবারের বহু দিনের সম্পর্ক। রাঘুলের দাদু ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। বাবা প্রথম থেকেই কংগ্রেসে ছিলেন। রাঘুলের কথায়, “তামিলনাড়ু কংগ্রেসে হেন কোনও পদ নেই যা পাননি বাবা। শেষে যুব কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।” হয়েছিলেন মানে? রাঘুল বলেন, “তাঁর গুরু পি গোপাল কৃষ্ণনের সঙ্গে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে তামিল মানিলা কংগ্রেসে যোগ দেন। পরে গোপাল কৃষ্ণন এআইডিএমকে-তে চলে আসনে। বাবাকেও তিনি ডেকে নেন।” কংগ্রেসের গান্ধী পরিবারের ছায়া তাঁর পরিবারে যে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে, বোঝা গেল রাহুলের এই কথাতে। তিনি বলেন, “আমার বোনের নাম জানেন, প্রিয়দর্শীনি।”
রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ভোটে লড়ছে এক সঙ্গে তিন গান্ধী। এর মধ্যে কোনও রাজনৈতিক সমীকরণ রয়েছে? রাহুলের ভোট কাটতেই কি পরিকল্পনামাফিক ‘নাম-বিভ্রাট’? এমন অভিযোগ সাফ উড়িয়ে দেন তিনি। বললেন, “আমি ভুয়ো গান্ধী নই। নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃত আমার নিজস্ব দল রয়েছে। আজিলা ইন্ডিয়া মক্কল খজ়গম। সমর্থন রয়েছে হিন্দুস্তান জনতা পার্টির। কারোর ভোট কাটতে নয়, নিজের যোগ্যতায় ভোটে লড়ছি।” তার পর রাঘুল উত্তেজিত হয়ে বললেন, আমেঠি থেকে লড়ারও চিন্তাভাবনা করছি। রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান? মৃদু হাসলেন, তার পর বলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় আসছে না। মোদীর আসার সম্ভবনা বেশি। যদি রাহুল প্রধানমন্ত্রী হন খুশিই হবো।
আরও পড়ুন- রাহুলের মন্তব্য ফৌজদারি অপরাধের সামিল, সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ বিজেপি, শুনানি হবে সোমবার
রাফাল, কৃষক আত্মহত্যা, দারিদ্র, বেকারত্ব ইস্যু নিয়ে ভোটে লড়ছেন রাহুল। আপনার ইস্যু কোনগুলি? রাঘুল বলেন, “মধ্যবিত্তের সমস্যা নিয়ে কারোর মাথাব্যথা নেই। প্রতি বার ভোটে গরিব মানুষ, কৃষকদের তুরুপের তাস বানানো হয়। তাদের জন্যই সব প্রকল্প। কিন্তু মধ্যবিত্তের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।” ভোটে জিতলে প্রথমেই আপনি কী পদক্ষেপ নেবেন? মধ্যবিত্তের ঘাড়ে করের বোঝা কমানোর উপরই জোর দিলেন রাঘুল।
আপনি কী মনে করেন চৌকিদার চোর? তত্ক্ষণাত্ তাঁর উত্তর, “কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণে যেতে চাই না। কংগ্রেসের সময় কোলগেট, টেলিকম একাধিক দুর্নীতি বেরিয়েছিল। ক’জন জেলে গিয়েছে? বিজেপির বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ। কিন্তু লিখে নিন কেউ জেলে যাবে না। ও সব ভোটের মুখে মগজাস্ত্র। ভোট ফুরলেই সব চুপচাপ।” ধরুন ওয়াইনাড কেন্দ্র থেকে রাহুলকে আপনি হারিয়ে দিলেন? কী বার্তা দেবেন তাঁকে? প্রশ্ন শুনে মন খুলে হাসলেন রাঘুল। বলেন, ওটা তো ওর সেফ সিট। ও জানে এখান থেকে জিতবে। তাই দাঁড়াচ্ছে। তবে, হ্যাঁ একটা স্বপ্ন আছে। এক বার রাহুলের সঙ্গে মুখোমুখি সাংবাদিক বৈঠক করতে চাই। অনেক জবাব নেওয়ার বাকি আছে...