জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ধ্বনি ভোটে সংসদ থেকে বহিষ্কৃত মহুয়া মৈত্র।  'ক্যাশ ফর কোয়্যারি' বিতর্কে এথিক্স কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বহিষ্কৃত তৃণমূল সাংসদ। ঘুষের বদলে প্রশ্নকাণ্ডে লোকসভায় এদিন মহুয়ার সদস্যপদ খারিজের দাবিতে প্রস্তাব পেশ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তারপর সেই প্রস্তাবের উপর আধঘণ্টা আলোচনার অনুমতি দেন স্পিকার। স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, "সংসদের মর্যাদারক্ষায় কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। গণতন্ত্রে কখনও এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা দুর্ভাগ্যজনক। সংসদের মর্যাদার সঙ্গে কোনওভাবেই আপোস নয়।" তবে আলোচনার জন্য বাড়তি সময় দাবি করেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তৃণমূলের আর্জি মেনে বাড়তি সময়ও দেন স্পিকার। কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থনে এদিন মহুয়া মৈত্রকে সংসদে বলার সুযোগ দেননি স্পিকার।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সংসদে মহুয়া মৈত্রকে বলতে দেওয়ার দাবিতে এদিন জোর সওয়াল করে তৃণমূল। 'যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁকেই বলতে দেওয়া হোক।' সংসদে তৃণমূলের তরফে দাবি করেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের। কিন্তু সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ টেনে সংসদে মহুয়াকে বলার অনুমতি দেননি স্পিকার। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, 'সংসদ এখন আধা-বিচারকের ভূমিকায়। আমরা এখানে একজনের ভাগ্য নির্ধারণ করতে বসেছি। তাই যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল, তাঁকে বলতে দেওয়া হোক।' একইসঙ্গে হীরানন্দানিকে এথিক্স কমিটির সামনেও হাজিরা দেওয়ার দাবি জানান তৃণমূল সাংসদ। কল্যাণ বলেন, হীরানন্দানির সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি। হীরানন্দানির হলফনামা নিয়েও প্রশ্ন করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায়।


এথিক্স কমিটির সুপারিশ নিয়ে প্রশ্ন তোলে কংগ্রেসও। বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী প্রশ্ন করেন, 'এত তাড়াহুড়ো কেন? এত তাড়াহুড়ো করে রিপোর্ট পড়া কি সম্ভব? আত্মপক্ষ সমর্থনে সুযোগ দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তকেও। মহুয়াকে কেন বলার সময় দেওয়া হবে না?' কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি বলেন, 'এথিক্স কমিটি সুপারিশ করতে পারে, কিন্তু কী সাজা হবে তা বলতে পারে না। এমনভাবে সভা পরিচালনা করা হচ্ছে, যাতে সিদ্ধান্ত একমুখী হয়। যা স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। আজ আমাদের সহকর্মীর ভাগ্য নির্ধারণ। বিচার চাইছি আমরা।' যার জবাবে স্পিকার বলেন, 'এটা আদালত নয়। এটা সংসদ।' 


পালটা বিজেপি সাংসদ হিনা গাভিত প্রস্তাবের সমর্থনে বলেন, '২০০৫ সালে কংগ্রেসের সরকার ছিল। একই দিনে রিপোর্ট পেশের দিনই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। মহুয়া নিজেই হীরানন্দানিকে আইডি-পাসওয়ার্ড দেন। দুবাই, আমেরিকায় বসে মহুয়ার অ্যাকাউন্ট থেকে লগ-ইন। দেশের সুরক্ষার প্রশ্নে নারী-পুরুষ কিছু হয় না।' বলাই বাহুল্য যে হিনা কটাক্ষ করেন মহুয়ার 'বস্ত্রহরণ' মন্তব্যকে। বিজেপি সাংসদ অপরাজিতা সারেঙ্গী বলেন, এথিক্স কমিটি তাঁকে ডেকে পাঠালে, তিনি বৈঠকের মাঝেই ওয়াক আউট করেন। আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করেন। সব মিলিয়ে মহুয়া ইস্যুতে তুমুল বিতণ্ডা চলে সংসদে। এরপরই স্পিকার ওম বিড়লা মহুয়া মৈত্রকে সংসদ থেকে 'এক্সপেল' বা বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।


উল্লেখ্য, এদিন লোকসভার অধিবেশন বসার পর হট্টগোলের জেরে বার বার মুলতুবি হয়ে যায় অধিবেশন। প্রথমে বেলা ১২টা পর্যন্ত মুলতুবি হয় অধিবেশন। তারপর অধিবেশন বসতেই লোকসভায় পেশ করা হয় এথিক্স কমিটির রিপোর্ট। রিপোর্ট পেশ করেন এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান বিনোদ সোনকর। তারপরই ফের ২টো পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন। বলাই বাহুল্য যে মহুয়া ইস্যুতে সংসদে একজোট 'ইন্ডিয়া'! বিতর্কের মাঝেও এদিন লোকসভায় ঢোকার সময় বেশ 'আত্মবিশ্বাসী'-ই ধরা পড়েন মহুয়া মৈত্র। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাঁকে বলতে শোনা যায়, "লাভলি, দেখব, কী হয়। মা দুর্গা এসে গিয়েছে। এবার দেখবেন। বস্ত্রহরণের খেলা ওরা শুরু করেছে। এবার মহাভারতের যুদ্ধ দেখবে।" পাশাপাশি, কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার লাইন ধার করেও তাঁকে বলতে শোনা যায়, "অসত্যের কাছে কভু নত নাহি কর শির। ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ, লড়ে যায় বীর।" 


প্রসঙ্গত, ৩১ অক্টোবর মহুয়াকে প্রথমবার ডেকে পাঠিয়েছিল এথিক্স কমিটি। তখন যাননি।  চিঠি লিখে তিনি জানান, সংসদীয় এলাকায় বিজয়া সম্মিলনী রয়েছে। ৪ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ব্যস্ত থাকবেন। ৫ নভেম্বরের পর যে কোনও দিন, যে কোনও সময়ে তিনি হাজিরা দিতে পারবেন। তার পর ফের তাঁকে চিঠি পাঠিয়ে ২ নভেম্বর ডেকে পাঠানো হয়। যদিও ২ নভেম্বর মাঝ-পথেই বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করেন ক্ষুব্ধ কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ। সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে মেজাজ হারিয়ে মহুয়াকে বলতে শোনা যায়, 'এটা কী ধরনের বৈঠক? ওঁরা নোংরা প্রশ্ন করছেন। বাজে প্রশ্ন করছেন।' 


এমনকি, এথিক্স কমিটিতে মৌখিক ভাবে ‘বস্ত্রহরণ’-এর তোপও দাগেন মহুয়া! লোকসভা স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠিতে লেখেন, যেভাবে প্রশ্ন করেছেন এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান, মর্যাদাহানিকর। চিঠিতে মহুয়া আরও দাবি করেন, কমিটি আরও ৫ সদস্য আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু তাতেও  কর্ণপাত করেননি এথিক্স কমিটি চেয়ারম্যান বিনোদ সোনকর। সূত্রের খবর, এথিক্স কমিটির বৈঠকে রাতে কোন হোটেলে ছিলেন? কার সঙ্গে কথা বলেছেন? এ ধরনের ‘ব্যক্তিগত’ বিষয়েও প্রশ্নও করা হয় মহুয়াকে।


আরও পড়ুন, Mahua Moitra: 'বস্ত্রহরণ ওরা শুরু করেছে, এবার মহাভারতের যুদ্ধ দেখবে,' জবাব কনফিডেন্ট মহুয়ার!



(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)