Dilip Ghosh: `কুণাল-মদনকে তৃণমূলই গ্রেফতার করায়, রাজনৈতিক চক্রান্ত...` বিস্ফোরক দিলীপ!
অরূপ লাহা: বৃহস্পতিবার সকালে বর্ধমান ১ নম্বর ব্লকের রায়ান গ্রামের রায়ান হাইস্কুলের মাঠে প্রাতঃভ্রমণে যান বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। এদিন প্রাতঃভ্রমণের পাশাপাশি গ্রামে জনসংযোগ করেন তিনি। এরপর রায়ান গ্রাম চৌমাথা মোড়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে চায়েপে চর্চায় অংশ নেন দিলীপ ঘোষ। সেখানেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ ঘোষ নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।
তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তমোঘ্ন ঘোষ বলেছেন কুনাল ঘোষ জেল থেকে ছাড়া পেয়ে দিল্লিতে বিজেপিতে জয়েন করতে গেছিল সেই বিষয়ে তাঁর কী বক্তব্য? এই বিষয়ে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে কুনাল ঘোষের বিজেপি জয়েনিং নিয়ে কোন কথা হয়নি কিংবা আমি কোনদিন বলিনি তিনি বিজেপিতে আসুন।
আন্দামান যাওয়ার প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ জানান, আন্দামান আমার পুরোনো জায়গা, সাড়ে আট বছর আমি ওখানে ছিলাম। সংগঠনের কাজ করেছি। ইলেকশন হলে ওখানকার কর্মীরা বলেন দিলীপ দা আসুন। আমাদের দলও ঠিক করেছে তাই আমি দু-এক দিনের জন্য আন্দামান যাচ্ছি।
নিজের কেন্দ্র ছেড়ে আন্দামান যাচ্ছেন। প্রচারে কোন ঘাটতি হবে?
'আমাকে পশ্চিমবাংলায় নতুন করে প্রচার করতে হবে না। আমি বর্ধমানের মানুষের সঙ্গে দেখা করছি বলে গ্রামেগঞ্জে ঘুরছি। কোন প্রার্থী ভারতবর্ষে সকাল ৬ টায় রাস্তায় নেমে প্রচারে বেড়িয়েছে। ১১টার আগেতো ঘুমই ভাঙে না । দিলীপ ঘোষ আজ নয় এটা সারা বছরই করে। এখানেও প্রচুর লোক এসেছে। এক পয়সাও খরচ করছি না আমি। প্রচার করছি লোকের সঙ্গে দেখা করছি। আমি সর্বভারতীয় দ্বায়িত্বে ছিলাম তাই পার্টি আমাকে আন্দামানে প্রচারে পাঠাচ্ছে।'
প্রচারে বেরিয়ে মালবাজারের মিনা মোড়ে আক্রান্ত বিজেপি প্রার্থী ডাক্তার জয়ন্ত কুমার রায়, সেই বিষয়ে দিলীপ ঘোষ জানান, 'এর আগেও ডাক্তারবাবুকে বাঁশ দিয়ে মারধর করা হয়েছিল, একটা সভাতে উনি গিয়েছিলেন। উনি ভদ্রলোক, স্বজ্জন লোক, রাজবংশী সমাজের একটা মুখ। এই ধরনের লোককে যদি অ্যাটাক করে তাহলে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি কোথায় পৌঁছেছে বুঝতে হবে। গুণ্ডা সমাজবিরোধীদের হাতে চলে গেছে। গতকাল বাঘার এলাকায় বিজেপি কর্মীরা দলীয় বৈঠক সেরে ফেরার পথে ওখানকার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধানের নেতৃত্বে কিছু দুস্কৃতিকারি আমাদের তিনজন কর্মীকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। আমরা পুলিশ প্রসাশনকে জানিয়েছি। যদি ওরা হিংসার মাধ্যমে রাজনীতি করতে চায় বিজেপি প্রস্তুত আছে। দিলীপ ঘোষের অভিজ্ঞতা আছে, জানা আছে কাকে কিভাবে শায়েস্তা করতে হয়।'
সন্দেশখালির দুলিয়াখালিতে গ্রামবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল জলের কলের। সেই দাবীর প্রেক্ষিতে গীতায় হাত রেখে শপথ নেওয়ানো হচ্ছে তৃণমূলকে ভোট দিতে হবে সেই বিষয়ে তিনি তাঁর কী মন্তব্য সেই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'তৃণমূলকে ভোট সারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দেবে না। এই ধরনের চালাকি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মেনে নেবে না। যারা গীতা মানে না তারা গীতায় কেন হাত দেওয়াচ্ছে লোককে। মহিলাদের তুলে নিয়ে এসে পার্টি অফিসে ফুর্তি করা হত তখন তৃণমূল কোথায় ছিল। মানুষকি এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবে সবকিছু? গীতা, রামায়ণ, কোরান যাই করুন মানুষ তৃণমূলকে ভোট দেবে না।'
অনন্ত বিশ্বকর্মার অভিযোগ অনুযায়ী রাজবংশীদের জন্য বিজেপি কিছু করেনি, সেই বিষয়ে দিলীপ বলেন, 'কে করছে আমি জানিনা। বিজেপি কি করেছে রাজবাড়ীরাই জানেন। জয়ন্ত রায়, নিশীথ প্রামানিক এরা ওখানকার স্থানীয় রাজবংশীদের নেতা, তারা ওই সমাজের জন্য লেগে আছেন। উত্তরবঙ্গের রাস্তাঘাট, রেলওয়ে যা হয়েছে বিজেপি করেছে। এর আগে কেও করেনি। অনন্ত মহারাজ বিজেপির সঙ্গে আছেন। তাকে আমরা রাজ্যসভায় পাঠিয়েছি। টি এম সি এবং মমতা ব্যানার্জি তাকে বাংলা ছাড়া করে আসামে পাঠিয়েদিয়েছে। বিজেপি তাকে দিল্লি পাঠিয়ে সর্বভারতীয় নেতা বানিয়েছে।'
আজ উত্তরবঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর সভা প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পারছেন না কোথায় কোথায় যাবেন। ছেঁড়া কাথায় রিপু দেওয়ার কাজ করছেন। এদিকে গেলে ওদিকে ফেটে যাচ্ছে ওদিকে গেলে এদিকে ফেটে যাচ্ছে। উনি যখন জঙ্গলমহলে আসেন উত্তরবঙ্গে গণ্ডগোল লেগে যায়, উত্তরবঙ্গে গেলে রাঢ়বঙ্গে গণ্ডগোল লেগে যায়। এখন মহামুশকিলে পড়েছেন উনি।'
নদীয়ায় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী খুন প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, 'কোন দুস্কৃতি আর কোন পার্টিতে নেই কেবল তৃণমূলে আছে। যতবার তৃণমূলের কেউ খুন হয় ওই পরিবারের লোকেরা বলে তৃণমূলের অর্ন্তদ্বন্দে খুন হয়েছে। তারা সিবিআই তদন্ত চান, এখানকার রাজ্য সরকার সিআইডি দিয়ে চেপে দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা কোর্টে গিয়ে বারবার সিবিআই তদন্ত চান, কারন ওই পার্টিকে তারা বিশ্বাস করেনা।'
বর্ধমানে যখন প্রচারে যাচ্ছেন,তখন শুধু মন্দিরে যাচ্ছেন। বিরোধীরা কটাক্ষ করছে আপনার লোক নেই, সেই বিষয়ে কী বলবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মানুষের কাছে যেতে ভয় পাই, কাটমানি খোর, চোর, মন্দিরে যাবার মুখ নেই তাদের মন্দিরে কেউ ঢুকতেই দেবে না। আমরা মন্দিরের সংসস্কৃতি করি, আমরা মন্দিরে যাব না তো কি ওরা যাবে। যখন সভা করবো ওরা দম নিতে পারবে না। আমাকে কেউ তারা করেনি এখনো। ওদের ক্যাণ্ডিডেটকে তারা করেছে। মার খেলে তখন মন্দিরে যাবেন। তখন ঠাকুরের পায়ে পড়বেন। আগে থেকে পায়ে পড়েনা। তাহলে মার খেতে হবেনা।পিঠে দাগ নিয়ে মন্দিরে গিয়ে তপস্যা করছেন।
দাদাগিরি একমাত্র দিলীপ ঘোষই করে, এই বিষয়ে কী বলতে চান?
দাদাগিরি আমি এখনো শুরুই করিনি। ওরা ঠুকঠাক করছে। যেদিন একটা ঘা মারবো না, ওরা কামারের ঘা দেখেনি। সিধে হয়ে যাবে সব।
তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত ঢুলিগাঁও গ্রাম, সেই বিষয়ে কী বলতে চান?
গোষ্ঠী কোন্দল সব জায়গাতেই হচ্ছে। যদি তাদের প্রার্থীকে দলের লোকেরা তারা করে, আর কি বলবেন। আমাদের কর্মীরা দেওয়াল লিখন করতে গেলে আক্রমণ করা হচ্ছে। রাতে গ্রামে মিটিং করতে গেলে আক্রমণ করা হচ্ছে। ওরা ভয় দেখিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে। অভ্যাস পাল্টান নাহলে দিলীপ ঘোষ এসে গেছে কিভাবে পাল্টাতে হয় আমি জানি।
দুর্নীতিবাজদের উদ্দেশ্যে কোন দাওয়াই থাকবে বলে আপনার মনে হয়?
দাওয়াই তো সিবিআই, ইডি দিচ্ছে। ভোটের আগে ভোটের পরে অনেকে ওখানে গিয়ে থাকবেন। বাড়ির ভাত খেতে পারবেন না। এখানে একটা অনুপ্রবেশকারী নেতা আছে বাংলাদেশী। সে আমাদের লোকেদের মারে, লুটপাট করে।ঝাড়ু বিক্রি করতো ঘুরে ঘুরে। যেদিন মায়েদের ঝাড়ু পড়বে সিধে হয়ে যাবে। ভোট অবধি আমরা দেখছি। যদি কোন গণ্ডগোল করার চেষ্টা করো ভোটের পরে হয় জেলে যাবে না হয় বাংলাদেশে যাবে। দ্বিতীয় কোন রাস্তা থাকবে না।
বিজেপি নেতা কৌশিক কুণ্ডু তৃণমুলে যোগদান করেছে, এই বিষয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, ওর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। তাকে যুবমোর্চা বহিষ্কার করতো কীর্তি কলাপের জন্য। নিজে বাঁচার জন্য তাদের পায়ে পড়েছে। এই ধরনের লোকেরা এক জায়গায় থাকে। বিজেপিতে থাকতে পারে না।
শাহজাহান বলেছে তাঁকে রাজনৈতিক ভাবে ফাঁসানো হয়েছে? আপনার কী মনে হয়?
কুনাল ঘোষ, মদন মিত্রকে ওর পার্টি অ্যারেষ্ট করেছে, সেটাও রাজনৈতিক চক্রান্ত ছিল। শুরু হয়েছে, রাজনীতি করেছো, রাজনৈতিক ভাবেই তো ফাঁসবে তুমি। লোককে লুঠ করলে কি বাঁচবে নাকি?