`যেন শতকোটি রাক্ষসী উন্মত্ত কোলাহলে এদিকেই ছুটিয়া আসিতেছে`!
এই গ্যালারির শিরোনামে যে বাক্যটি রয়েছে, সেটি অপরাজেয় কথাশিল্পী শরত্চন্দ্রের। 'শ্রীকান্ত' উপন্যাসে তিনি সমুদ্রযাত্রার এক অপূর্ব বর্ণনা দিয়েছিলেন। সেখানেই এরকম একটি বাক্য লিখেছিলেন। লিখেছিলেন ঝড়ের বাতাস যেন সাতশো নয়, শতকোটি উন্মত্ত রাক্ষসীর মতো কোলাহলে ছুটে আসছে! বাংলা সাহিত্যে ঝড়-বাদল-বৃষ্টির অনেক স্মরণীয় বর্ণনাই পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গানে-কবিতায় ঝড়ের রোম্যান্টিক আবেশ পাওয়া যায়।
এ হেন যে ঝড়, তার কিন্তু নানা বিবর্তন ঘটেছে। সমুদ্রে-নদীতে-অরণ্যে-পাহাড়ে আছড়ে-পড়া ঝড়কে আগে মানুষ নিছক 'অমুক সালের' ঝড় বলেই চিনত। কিন্তু এখন ঝড় বললেই মনে আসে-- নিভার, ফণী, তিতলি, বুলবুল, আমফান তাউটে, ইয়াস। এগুলো সব এক-একটা সাইক্লোনের নাম। শুনতে অদ্ভুত। দিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দেশ। যেমন 'নিভার' নামটি দিয়েছিল ইরাণ।
যে ভয়ানক ঝড়টির জন্য ওড়়িশা-ঝাড়খণ্ড-বঙ্গদেশ প্রমাদ গুনছে, সেটি হল 'ইয়াস'। যা, আগামীকাল, বুধবার দুপুর নাগাদ আছড়ে পড়বে স্থলভাগে। এই নামটি দিয়েছে ওমান। এটি একটি পার্সি শব্দ। এর অর্থ সুগন্ধি সাদা ফুল।
ক'দিন আগেই ভারতের পশ্চিম উপকূলে আছড়ে পড়ল 'তাউটে' বা 'তাউকতায়ে'। অতি শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়ের নামটি মায়ানমায়ের প্রস্তাবিত। এর অর্থ-- টিকটিকি জাতীয় এক রকম সরীসৃপ।
আর গত বছরের আমফান তো এখনও টাটকা স্মৃতিতে। যেন ক'দিন আগে হয়েছে। এখনও যেন ওই হাওয়ার শব্দ, ওই বৃষ্টি, ওই তাণ্ডব চোখে ভাসে।
আগেও ঝড়ের নামকরণ করা হত। তবে সেটা খুব সরল একটা প্রক্রিয়া ছিল। যেখানে ঝড় ঘটছে সেই স্থানটা ধরে নাম। যেমন ১৮৬৪ সালে কলকাতায় যে ঝড় হয়েছিল তাকে 'ক্যালকাটা সাইক্লোন' নামে ডাকা হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে আবহাওয়ায় বিপুল পরিবর্তন আাসায় ঝড়ের সংখ্যাও বেড়েছে। তখন ঝড়ের একটা নির্দিষ্ট নামকরণ পদ্ধতির প্রয়োজন হয়ে পড়ল।
মোটামুটি ২০০০ সালেই বিশ্ব আবহাওয়া দফতর নামকরণের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে আসে। উত্তর ভারত মহাসাগরে ঘনিয়ে ওঠা ঝড়ের নামকরণ করার কথা ওঠে। বিশ্ব আবহাওয়া দফতর ভারত, মলদ্বীপ, বাংলাদেশ, মায়ানমার, ওমান, শ্রীলঙ্কা, তাইল্যান্ড, পাকিস্তানকে ওই নামকরণ-ক্লাবের সদস্য করে নেয়। ২০০৪ সালে ভারত প্রথম একটি ঝড়ের নামকরণ করে-- 'অনিল'!পরবর্তী কালে ইরাক, ইরাণ সৌদি আরবও এই তালিকায় ঢুকে পড়ে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সব দেশের দেওয়া নামই ব্যবহার করা হবে। মোট ১৩টি দেশ ১৩টি করে নামের প্রস্তাব দেয়। সেখান থেকে বেছে নেওয়া হয়।
ঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে। ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিতর্ক এবং লিঙ্গবৈষম্য এড়িয়ে চলতে হবে। কারও মনে কোনও ভাবে আঘাত লাগতে পারে, এমন নামও গ্রাহ্য হবে না। প্রয়োগ করা যাবে না অপশব্দও। নাম হবে সর্বাধিক আট অক্ষরের।