পঞ্জাবের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে `Flying Sikh`, ছবির কোলাজে কিংবদন্তি Milkha
নিজস্ব প্রতিবেদন: জীবনের ট্র্যাকে শেষ রেসেটা দৌড়ে ফেললেন তিনি। ৯১ বছর বয়সে থামলেন ‘উড়ন্ত শিখ’। কোভিড আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার রাতে প্রয়াত হলেন মিলখা সিং। কিংবদন্তির প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ক্রীড়ামহল থেকে আপামোর দেশবাসী। 'পদ্মশ্রী' মিলখা সিংয়ের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবিভক্ত ভারতের পঞ্জাব প্রদেশের গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে 'ফ্লাইং শিখ' হয়ে ওঠা। বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে তাঁর জীবন। ছবির কোলাজে কিংবদন্তি জীবনের নানা মুহূর্ত।
১৯২৯ সালে অবিভক্ত ভারতের পঞ্জাব প্রদেশের গোবিন্দপুর গ্রামে একটি শিখ রাজপুত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মিলখা সিং। ১৫ জন ভাইবোনের মধ্যে ৮ জন দেশভাগের আগেই মারা যান। দেশভাগের সময়ও চোখের সামনে বাবা-মাকে খুন হতে দেখেন ছোট্ট মিলখা। দেশভাগের পর দিল্লিনিবাসী তাঁর এক দিদির কাছে আশ্রয় পায় মিলখা। সেই থেকে শুরু হয় জীবনযুদ্ধে নয়া লড়াই।
এরপর ১৯৫১ সালে চতুর্থবারের চেষ্টায় ভারতীয় সেনায় সুযোগ পান মিলখা। সেকেন্দ্রাবাদে থাকাকালীন অ্যাথলেটিক্সের সঙ্গে পরিচত হন তিনি।
১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন অলিম্পিকের ২০০ মিটার ও ৪০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি।
এরপর ১৯৫৮ সালে এশিয়ান গেমসে ৪০০ মিটার দৌড়ে সোনা জেতেন মিলখা।
একই সালে কমনওয়েলথ গেমসেও ৪০০ মিটার দৌড় বিভাগে সোনা জয় করেন। কেবল প্রথম হওয়াই নয়, ৪৬.৬ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে রেকর্ড গড়েন। কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জয়ী স্বাধীন ভারতের তিনিই প্রথম অ্যাথলিট।
তৎকালীন আরও এক খ্যাতনামা দৌড়বিদ পাকিস্তানের আব্দুল খালিকের বিরুদ্ধে অনবদ্য পারফরম্যান্সের জন্য পাক জেনারেল আয়ুব খান তাঁকে 'ফ্লাইং শিখ' তকমা দেন।
১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকে চতুর্থ হন তিনি। মাত্র ০.১ সেকেন্ডের জন্য হাতছাড়া হয় ব্রোঞ্জ পদক।
এছাড়া ১৯৬২-র এশিয়ান গেমসে ৪০০ মিটার দৌড় এবং ৪০০ মিটার রিলে রেসে সোনা পান তিনি। ১৯৬৪ সালের কলকাতা ন্যাশনাল গেমসেও ৪০০ মিটার দৌড় বিভাগে রূপো জয় করেন মিলখা।
১৯৫৯ সালে 'পদ্মশ্রী' সম্মানে ভূষিত হন তিনি।
১৯৬২ সালে ভারতীয় মহিলা ভলিবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক নির্মল কৌরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মিলখা। তাঁদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
কিংবদন্তি মিলখা সিংয়ের আত্মজীবনীর নাম 'rundi hai mandi'। এই আত্মজীবন অবলম্বনেই ২০১৩ সালে 'Bhaag Milkha Bhaag' ছবিটি তৈরি করেন পরিচালক রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহেরা। যে ছবিতে মিলখা সিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন ফারহান আখতার। এছাড়া ছবিটিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন দিব্যা দত্ত এবং সোনাম কাপুর।
২০১৭ সালে মাদাম তুঁসো মিউজিয়ামে তাঁর মোমের মূর্তি বসে।
২০১৮ সালে 'খেলরত্ন' সম্মান পান মিলখা সিং।
২৪ মে করোনায় আক্রান্ত হন মিলখা সিং। করোনায় আক্রান্ত হন তাঁর স্ত্রী নির্মল সিংও। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তাঁরা। গত ১৩ জুন প্রয়াত হন নির্মল সিং। ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইতি টানলেন মিলখাও। স্ত্রী নির্মলের পিছু পিছু পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে। শোকস্তব্ধ গোটা দেশ।