পাত্রপাত্রী বট আর পাকুড়, জলপাইগুড়িতে অভিনব বিয়ে

Sat, 11 Jun 2022-11:45 am,

প্রদ্যুৎ দাসঃ  মানুষ নয়, বট আর পাকুড় গাছের বিয়েতে খেলেন প্রায় ৫০০০ মানুষ। যৌতুকে দেওয়া হোলো সোনার গহনা। অভিনব বিয়েকে কেন্দ্র করে হুলুস্থুল কান্ড জলপাইগুড়িতে।

জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া ৭৩ মোড় সংলগ্ন অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন সেবাগ্রাম এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা সন্তোষ শীল। এলাকায় সুন্দর ছায়া পাবেন বলে বছর ২৫ আগে শখ করে রাস্তার ধারে একটি বট গাছ লাগিয়েছিলেন। 

নিয়ম করে সেই গাছে জল সার দিয়ে লালন পালন করতেন। এরপর সেই গাছের মধ্যে জন্ম নেয় একটি পাকুড় গাছ। গাছের পরিচর্যা দেখে এলাকাবাসীরা বলতেন এটাই তোর মেয়ে।

দীর্ঘ ২৫ বছর পর সেই গাছ যথেষ্ট বড় হয়েছে। এলাকাবাসীরা সন্তোষ বাবুকে মেয়ের বিয়ের কথা বলেন।

এরপর একদিন এলাকাবাসীদের কথায় রাজি হয়ে যান সন্তোষ বাবু। কিন্তু একটা বিয়ে দিতে গেলে জিনিস কেনা, লোক খাওয়ানো সহ বিভিন্ন কাজে প্রচুর খরচ। এছাড়াও লাগবে পাত্র পক্ষ। বিপুল পরিমান খরচের সামর্থ্য ছিল না তাঁর। তাই স্থানীয় ক্লাব "ভক্ত সংঘ"-এর মাধ্যমে গ্রামের মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন রাখেন তিনি। 

খবর চাউর হতেই পাত্র পক্ষ হিসেবে রাজি হয়ে যান ঝন্টু ঘোষ। এরপর স্থানীয় পুরোহিত মানিক ব্যানার্জীকে ডেকে ৯ জুন বিয়ের দিন ঠিক করা হয়। 

এরপর শুরু হয় অর্থ সাহায্য তোলা। লোকের মুখে মুখে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এগিয়ে আসেন প্রচুর গ্রামবাসী। বিভিন্ন যায়গা থেকে আসতে থাকে সাহায্য। 

এরপর বিয়ে উপলক্ষে শুরু হয় বাজার করা। কেনা হয় টোপর,সিঁদুর সহ বিয়ের অন্যান্য সামগ্রী। যৌতুক হিসেবে কেনা হয় সোনার দুল ও আংটি। কয়েকদিন ধরে নাওয়া খাওয়া ভুলে বাজার করে এলাকার মানুষ। 

এরপর সকাল থেকে শুরু হয় সমস্ত আচার অনুষ্ঠান। হয় হলুদ কোটা। এরপর কোটা হলুদে তেল সিঁদুর গাছে মাখিয়ে গাছকে স্নান করাবার পর সকালে বৃদ্ধির মাধ্যমে পুরোহিত বিয়ের কাজ শুরু করেন। 

সন্ধ্যা নামতেই আসে বরযাত্রী। লাইট প্যান্ডেলে ব্যান্ড বাজিয়ে তাদের বরন করে শুরু হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। পরে কন্যাদানের মাধ্যমে শেষ হয় বিয়ে।

বিয়ে উপলক্ষে বিশাল ভোজের আয়োজন করা হয়। এদিন মেনু ছিলো ভাত, ডাল, ভাজা, পটলের ডালনা, পনির কারি, চাটনি, মিষ্টি ইত্যাদি। এই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত ছিলেন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ।

কনে (বট) এর বাবা সন্তোষ শীল বলেন বিয়ে উপলক্ষে তাদের গ্রামবাসীরা আগের রাতে গঙ্গা নিমন্ত্রণ করে। আজ সকাল থেকে হলুদ কোটা সহ বিয়ের সব নিয়ম পালন করা হয়। রাতে বরযাত্রী আসে এবং তিনি কন্যাদান করেন। তিনি সবার কাছে সাহায্যের আবেদন করেন বলেও জানান। তাঁর বক্তব্য সবাই তাঁর পাশে দাড়িয়েছে এবং তার মেয়ের বিয়ে হয়েছে।

পাত্রের বাবা ঝন্টু ঘোষ জানান, "ছেলের বিয়ে দিলাম। খুব আনন্দ লাগছে।"

বটের মা কৃষ্ণা শীল বলেন, "মেয়ের বিয়ে দিলাম। বিয়েতে সোনা সহ যাবতীয় জিনিসপত্র দেওয়া হয়েছে। সবার সাহায্য নিয়ে মেয়েকে পার করলাম।"

পুরোহিত মানিক ব্যানার্জী বলেন, "আমি বহু বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু গাছের বিয়ে কোনও দিন দেইনি। খুব ভালো লাগছে।"

সাইন্স এন্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক রাজা রাউতের ধারনা বট এবং পাকুড়ের বিয়ে আসলে পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তা। বট একটা এমন গাছ যে প্রকৃতিকে সবথেকে বেশি রিটার্ন দিয়ে থাকে। দূষণ কমানোর ক্ষমতা সব ধরনের গাছের চেয়ে এই গাছের বেশি। একটা পূর্ণ বয়স্ক বট গাছ সবথেকে বেশি অক্সিজেন দেয়। বটের ফল প্রচুর পাখি এবং পশুরা খেয়ে বেঁচে থাকে। বটের গাছ প্রচুর পশু পাখির থাকার জায়গা করে দেয়। এক কথায় এই গাছ আমাদের প্রকৃতিকে যা রিটার্ন দেয় তা সব কিছুর উর্ধ্বে। 

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link