AIFF Election : কল্যাণের সাফল্যের মুহূর্তে বাবা অঞ্জন মিত্রকে নিয়ে আবেগি সোহিনী
AIFF Election : শেষ বেলায় এসে নির্বাচন জমিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ভারতীয় ফুটবলের আইকন। যদিও লাভ হয়নি। ৩৩-১ ব্যবধানে স্ট্রাইকারকে উড়িয়ে দিলেন গোলকিপার কল্যাণ।
সব্যসাচী বাগচী
স্বামীর সাফল্য, তাঁকে নিয়ে ফুটবল হাউসে (Football House) প্রবল উচ্ছ্বাস, চোখের সামনে থেকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা হল কোথায়! দিল্লির বদলে কলকাতায় বসেই কল্যাণ চৌবের (Kalyan Chaubey) সাফল্যের খবর দেখলেন। বাইচুং ভুটিয়াকে (Bhaichung Bhutia) হেলায় হারিয়ে সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ((All India Football Fedaration) নতুন সভাপতি (AIFF President) প্রাক্তন গোলকিপার। ৮৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম প্রাক্তন কোনও ফুটবলার সভাপতি পদে বসলেন। শেষ বার বাঙালি সভাপতি হয়েছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি (Priya Ranjan Dasmunsi)। এ বার সেই তালিকায় নাম লেখালেন কল্যাণ। তাই স্বভাবতই খুশি তাঁর স্ত্রী সোহিনী মিত্র চৌবে (Sohini Mitra Chaubey)। তবে এমন বিশেষ দিনে মোহনবাগানের (Mohun Bagan) এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য আবেগতাড়িতও বটে। কারণ, তাঁর বাবা ও সবুজ-মেরুনের প্রয়াত সচিব অঞ্জন মিত্র (Anjan Mitra) যে তাঁর জামাইয়ের নতুন ইনিংস দেখে যেতে পারলেন না।
শেষ বেলায় এসে নির্বাচন জমিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ভারতীয় ফুটবলের আইকন। যদিও লাভ হয়নি। ৩৩-১ ব্যবধানে স্ট্রাইকারকে উড়িয়ে দিলেন গোলকিপার কল্যাণ। কল্যাণ যে লড়াইতে জিতবেন সেই ইঙ্গিত আগেই পাওয়া গিয়েছিল। যদিও সোহিনীর দাবি তিনি ও তাঁর স্বামী ফলাফল নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। সোহিনী জি ২৪ ঘণ্টাকে বলেন, 'গোটা দেশের ফুটবলপ্রেমীরা হয়তো কল্যাণের জয় নিয়ে নিশ্চিত ছিল। তবে আমি ও কল্যাণ রেজাল্ট বেরোনোর আগে পর্যন্ত চিন্তায় ছিলাম। কারণ বিপক্ষে বাইচুং ছিলেন।'
ফুটবল প্রশাসক হিসেবে অঞ্জন মিত্র কতটা জনপ্রিয় ছিলেন সেটা নতুন ভাবে বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০১৯ সালে চিরবিদায় নিয়েছেন মোহনবাগানের প্রাক্তন সচিব। এমন বিশেষ দিনে বাবাকে নিয়ে আবেগতাড়িত তাঁর একমাত্র কন্যা। অতীতে ফিরে গিয়ে সোহিনী যোগ করলেন, 'বাবা ভাল মেজাজে থাকলে আমাদের সঙ্গে মোহনবাগানের ইতিহাস নিয়ে গল্প করতেন। কীভাবে তিনি ক্লাবের একাধিক সমস্যা মিটিয়েছেন, সেগুলো নিয়েও কল্যাণ ও আমার সঙ্গে আলোচনা হত। তাই আমার মনে হয় বাবা আজ বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। আমার থেকেও বেশি খুশি হতেন।'
আরও পড়ুন: AIFF Election: ৩৩-১ ব্যবধানে বাইচুং ভুটিয়াকে হারিয়ে ফেডারেশনের নতুন সভাপতি কল্যাণ চৌবে
আরও পড়ুন: IND vs PAK, Asia Cup 2022 : আরও দুবার বাইশ গজে 'মাদার অফ অল ব্যাটেল', কিন্তু কীভাবে? জেনে নিন
কল্যাণের নতুন ইনিংসের শুরুতেই যোগ হয়েছে বিতর্ক। বাইচুং ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের পরোক্ষ সহযোগিতাতেই নির্বাচনে জয়ী কল্যাণ। যদিও এই অভিযোগকে পাত্তা দিতে নারাজ কল্যাণ ঘরণী। তিনি যোগ করেন, 'কল্যাণ যোগ্য ব্যক্তি হিসেবেই ফেডারেশনের সভাপতি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সাফল্যের সঙ্গে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলেছে। ভারতীয় ফুটবলে কোথায় কি সমস্যা সেটা কল্যাণ খুব ভাল জানে। তাই এখানে রাজনীতি যোগ করা উচিত নয়।'
প্রায় দুই দশক ধরে এআইএফএফ-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব সামলানোর পর অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা। ভারতীয় ফুটবলে শুরু হয় প্রফুল প্যাটেলের জমানা। রাজনৈতিক পরিবেশে বড় হওয়া প্রফুল ১৯৯১ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের টিকিটে জেতেন। চলতি বছরের ১৮ মে সুপ্রিম কোর্ট প্রফুল ও তাঁর দলবলকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে সিওএ-কে ফেডারেশনের কাজকর্ম দেখার দায়িত্ব দেয়। তৃতীয়পক্ষের হস্তক্ষেপে গত মাসে ফিফার নির্বাসনের মুখে পড়তে হয় এআইএফএফ-কে। অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন তখন অগাধ জলে। তৃতীয়পক্ষের হস্তক্ষেপ এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ফেডারেশনের নির্বাচন না হলে নির্বাসন উঠবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা। কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে প্রশাসক কমিটি সরানোর এআইএফএফ-এর উপর থেকে নির্বাসন তোলে ফিফা। অতঃপর ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন পেয়ে গেল নয়া সভাপতিকেও।
কল্যাণের সঙ্গে মেয়ে সোহিনীর বিয়ে প্রথমে মানেননি। পরে কল্যাণে ভরসা করতেন দারুণ। বিশ্বকাপেও প্রয়াত অঞ্জনের সঙ্গী ছিলেন তাঁর জামাই। অঞ্জনের ফুটবল প্যাশন কি কল্যাণের মাধ্যমে পূর্ণতা পাবে? শ্বশুর অঞ্জনের মতোই কি কল্যাণ ভারতীয় ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন কোনও পরিকল্পনা নেবেন? সেটা সময় বলবে। তবে সোহিনীর কথা ধার করে লিখতে অসুবিধা নেই যে, অঞ্জন বেঁচে থাকলে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। এটা যেন এক পোয়েটিক জাস্টিস কলকাতা ফুটবলে।