সব্যসাচী বাগচী 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ব্রিজভূষণ শরণ সিং (Brij Bhushan Sharan Singh)। হলফ করে লিখতে পারি, গত ২৮ এপ্রিলের আগে এই বিতর্কিত বিজেপি (Bharatiya Janata Party) নেতাকে তাঁর এলাকা ছাড়া আর কেউ চিনতেন বলে মনে হয় না। ভারতীয় কুস্তি সংস্থার (Wrestling Federation Of India) প্রধান হলেও, তাঁকে ক্রীড়া জগতের কতজন মানুষ চিনতেন? সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছেই। দেশের প্রথমসারির কুস্তিগীররা এই বিতর্কিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের (Sexual Harassment) অভিযোগ এনেছিলেন। দিল্লি পুলিসের (Delhi Police) কাছে দুটি এফআইআর দায়ের করেছিলেন সাক্ষী মালিক (Sakshi Malik), ভিনেশ ফোগাট (Vinesh Phogat), বজরং পুনিয়ারা (Bajrang Punia)। স্বভাবতই তাঁর নাম আসমুদ্র হিমাচলে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। 


তবে শুধু রাজনীতি নয়। গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ব্রিজভূষণ 'বাহুবলী' (Bahubali Neta) নামে পরিচিত ছিলেন। খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ, অপহরণের মতো একাধিক মামলায় তিনি অভিযুক্ত। অবশ্য এখানেই শেষ নয়। এমনকি বাবরি মসজিদ ভাঙার (Demolition of the Babri Masjid) নেপথ্যেও ছিলেন এই ব্রিজভূষণ। ৬৬ বছরের এই নেতা ১৯৯১ সালে বিজেপি-তে যোগ দেন। তবে একাধিক দুর্নীতি ও অপরাধে যুক্ত থাকার দায়ে ২০০৮ সালে গেরুয়া শিবির থেকে ঘাড়ধাক্কা খেতে হয় তাঁকে। তবে তিনি রাজনীতি ছেড়ে থাকতে পারেননি। সেই বছরই যোগ দেন উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) আর একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল সমাজবাদী পার্টিতে (Samajwadi Party)। তবে ছয় বছর সেখান থেকে সব সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার পর, ২০১৪ সালে ফের বিজেপি-তে ফিরে আসেন ব্রিজভূষণ। এবং এরপর থেকে কাইসারগঞ্জ থেকে ছয়বারের সাংসদ হিসেবে রয়েছেন। যার মধ্যে পাঁচবার বিজেপি ও একবার সমাজবাদী পার্টির হয়ে লোকসভায় গিয়েছেন এই বিতর্কিত নেতা। 


গত ৩০ মে হরিদ্বারের গঙ্গায় পদক বিসর্জন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কুস্তিগীররা। গঙ্গায় তাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদক বিসর্জন দেবার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। ব্রিজভূষণের গ্রেফতারির দাবিতে সরব হয়ে উঠেছিলেন সাক্ষী মালিক-ভিনেশ ফোগাটরা। এহেন বাহুবলী নেতার অপরাধের বায়োডেটা দেখে নিন।      



আরও পড়ুন: Brij Bhushan Sharan Singh VS Wrestlers Protest: বহাল তবিয়তে থাকা ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দুটি এফআইআরে, ১০টি নিগ্রহের ঘটনা উল্লেখ করলেন ভিনেশ-সাক্ষীরা


আরও পড়ুন: Brij Bhushan Sharan Singh VS Wrestlers Protest: 'অভিযোগ প্রমাণিত হলে ফাঁসিতে ঝুলে যাব!', বড় মন্তব্য করে দিলেন বিতর্কিত ব্রিজভূষণ


এক: পুলিশ রেকর্ড ধরে এগোলে দেখা যায় এই মানুষটা জীবন শুরু করেছিলেন একজন মোটরবাইক চোর হিসেবে! 


দুই: এরপর আশির দশকে বেআইনিভাবে মদের ভাঁটি চালাতে গিয়ে এলাকায় তাঁর প্রতিপত্তি বাড়ে। তখন মন্দিরের প্রণামী বাক্সে দেওয়া ভক্তদের কয়েন চুরির কাজ শুরু করেছিলেন। সেই কাজে লাগিয়েছিলেন এলাকার গরীব বাচ্চাদের। বাচ্চাদের দিয়ে চুরি করানোর একটা র‌্যাকেট চালানো অভিযোগে পুলিস তাঁকে গ্রেফতার করলেও লাভ হয়নি। কারণ সেই সময়ই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। 


তিন: ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার জন্য মুলায়ম সিং যাদবের সরকার প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ব্রিজভূষণকে গ্রেফতার করেছিল। এবং পরবর্তীকালে সিবিআই যে ৩৯ জনকে সরাসরি বাবরি ভাঙার কাজের যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল, এরমধ্যেও প্রথম নামটিই হচ্ছে ব্রিজভূষণ শরণ সিং। 


চার: ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি দাউদ ইব্রাহিমের সহযোগীকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে টাডা আইনে তিহাড় জেলে ছিলেন কয়েক মাস। তখন অবশ্য ঠিকেদারি-কনট্রাক্টারি ব্যবসায় বেশ ভালো অর্থ রোজগার করে ফেলেছিলেন। 


পাঁচ: ১৯৯১ সালে এমন বিতর্কিত মানুষকে বিজেপি উত্তরপ্রদেশের গণ্ডা লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী করে এবং প্রথমবার সে সাংসদ নির্বাচিত হয়। 
    
ষষ্ঠ: কুস্তিগীরদের তরফ থেকে আফআইআর দায়ের করার আগে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশের একাধিক থানায় ৫০টির বেশি আফআইআর রুজু করা হয়েছে। চুরি, দাঙ্গা, অপহরণ, খুন, খুনের চেষ্টা -কিছু বাকি নেই। 



সপ্তম: ২০০৪ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপি ব্রিজভূষণকে গণ্ডা লোকসভা আসন থেকে সরিয়ে বলরামপুর লোকসভা আসনে প্রার্থী করা হয়। গণ্ডায় বিজেপির প্রার্থী ছিলেন ঘনশ্যাম শুক্লা। সেই নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন পথ দুর্ঘটনায় মারা যান ঘনশ্যাম শুক্লা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী বিশ্বাস করতেন ঘনশ্যাম শুক্লাকে খুন করা হয়েছিল। প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ী সরাসরি ব্রিজভূষণের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন। খুন যে ব্রিজভূষণ করেছিলেন, সেটা কয়েক বছর আগে একটি সাক্ষাৎকারে স্বীকার করে নেন এই বিতর্কিত নেতা। 


আট: গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ব্রিজভূষণের এতটাই দাপট যে, তাঁকে 'মাফিয়া ডন' না 'ডন অফ মাফিয়া ডনস' বলা হয়। 


নয়: তবে অপরাধের বাইরে এখন গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে এখন ব্রিজভূষণ ৫০টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। 


দশ: প্রাইভেট জেট,হেলিকপ্টার-সবকিছু আছে বিতর্কিত নেতার কাছে। নিজে সাংসদ, তাঁর স্ত্রী কেতকি দেবী সিং জেলা পরিষদের সভাধিপতি, ছেলে প্রতীক ভূষণ সিং গোন্ডা অঞ্চলের বিধায়ক। 


শুধু প্রাপ্তবয়স্ক নন, এমনকি বেশ কয়েকজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মহিলা কুস্তিগীরও ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ করেছিলেন। সেই অপ্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের দাবি ছিল, তাঁদের সঙ্গে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করার জন্য বারবার বিরক্ত করেছিলেন ব্রিজভূষণ। গত ২৮ এপ্রিল দিল্লি পুলিসের কাছে মোট দুটি এফআইআর দায়ের করেছিলেন দেশের প্রথমসারির কুস্তিগীররা। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ৩৫৪, ৩৫৪এ এবং ৩৪ ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। এরমধ্যে একটি এফআইআর-এ বলা হয়েছে ছ’জন প্রাপ্তবয়স্ক কুস্তিগীরের কথা। দ্বিতীয়টিতে এক অপ্রাপ্তবয়স্ক কুস্তিগীরের বাবা অভিযোগ করেছেন ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে। তবে এখনও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অভিযুক্ত কর্তা। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে নতুন সাংসদ ভবনের উদ্বোধনেও উপস্থিত ছিলেন এই বাহুবলী নেতা। 



(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)