DADAvsVIRAT: BCCI-এর `বিরাট` বাউন্সারে বিদ্ধ Kohli, নতুন বছরে শুরু বিতর্কের দ্বিতীয় রাউন্ড
নতুন বছরের শুরুতেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠল দাদা বনাম কোহলি বিতর্ক।
নিজস্ব প্রতিবেদন: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) ঠিক। বিসিসিআই (BCCI) ঠিক। বিরাট কোহলি (Virart Kohli) ভুলেভরা মন্তব্য করেছেন। নতুন বছর শুরু হওয়ার আগে টেস্ট দলের অধিনায়কে জোরালো বাউন্সার দিয়ে সেটা বুঝিয়ে দিলেন জাতীয় নির্বাচক মণ্ডলীর প্রধান চেতন শর্মা (Chetan Sharma)। তাঁর সাফ কথা পাঁচ জন নির্বাচক থেকে বোর্ড সভাপতি সৌরভ, সবাই একজোট হয়ে কোহলিকে অধিনায়কত্ব ছাড়তে বারণ করেছিলেন। কারণ, নির্বাচকদের মনে হয়েছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অধিনায়কত্ব ছাড়লে বিশ্বকাপে দলের পারফরম্যান্সে এর প্রভাব পড়তে পারে। অবশ্য সেটাই হয়েছিল। পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে লজ্জাজনক ভাবে জোড়া হার হজম করে বিদায় নিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া (Team India)।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একদিনের দল ঘোষণার সময় ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন চেতন। অবধারিত ভাবে জানা ছিল যে টেস্ট সিরিজ শুরু হওয়ার আগে কোহলির বিস্ফোরক মন্তব্য নিয়ে তাঁর দিকে চোখা চোখা প্রশ্ন উড়ে আসবে। আর সেটাই হল। ভারতীয় ক্রিকেটে আলোড়ন ফেলে দেওয়া কোহলির সেই মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নির্বাচক প্রধান বোর্ড সভাপতির পাশে দাঁড়িয়ে সটান বলে দেন, "বিরাটের অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্তে আমরা সবাই চমকে গিয়েছিলাম! সব নির্বাচকের মনে হয়েছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ও অধিনায়কত্ব ছাড়লে এর প্রভাব পড়বে দলের পারফরম্যান্সে। আমরা সবাই মিলে কোহলিকে বলেছিলাম, সিদ্ধান্তটা আরেক বার সিদ্ধান্ত ভেবে দেখার জন্য। বিশ্বকাপের পরে এ সব নিয়ে আলোচনা করা যাবে।"
এখানে না থেমে চেতন আরও জুড়ে দিলেন, "আমাদের পাঁচ জন জাতীয় নির্বাচকের মনে হয়েছিল বিরাটের এমন সিদ্ধান্তের প্রভাব বিশ্বকাপের উপর পড়বে। ভারতীয় ক্রিকেটের স্বার্থে বিরাটকে অনুরোধ করা হয়েছিল। সেখানে কিন্তু বোর্ডের সব শীর্ষ কর্তারাও উপস্থিত ছিল। সত্যি বলতে বিশ্বকাপের আগে বিরাটের মুখ থেকে এমন কথা শুনে আমরা সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমরা মনেপ্রাণে চাইছিলাম বিরাটের এই সিদ্ধান্তে যেন কোনওভাবে ভারতের পারফরম্যান্সে কোনও প্রভাব না পড়ে। কিন্তু ওর পরিকল্পনাকে আমাদের সম্মান করতেই হত। ও ভারতীয় দলের স্তম্ভ। তবে হ্যাঁ, সবাই মিলে ওকে বারণ করা হয়েছিল।" সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে নির্বাচক প্রধানের এই মন্তব্য এখন ভাইরাল। এবং চেতনের পালটা বাউন্সারে কোহলির যে অস্বস্তি বাড়বে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা উড়ে যাওয়ার আগে ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে বোমা ফাটিয়েছিলেন কোহলি। স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছিলেন যে, "টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব ছাড়ার আগে বিসিসিআই কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তাঁদের আমার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলাম। আমার কথা শোনার পর বিসিসিআই কর্তারা ব্যাপারটা খুব ভাল ভাবে নিয়েছিলেন। সবার সঙ্গে খুব ভাল ভাবে কথা হয়েছিল। সেটা নিয়ে কারও মনে কোনও সংশয় ছিল না। কারণ ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতির জন্যই সেই সিদ্ধান্তে সবাই সহমত পোষণ করেছিল। তবে সেই আলোচনায় এটাও বলেছিলাম যে আমি টেস্ট ও একদিনের দলকে নেতৃত্ব দিতে চাই।"
আরও পড়ুন: Virat Kohli: বিদেশে অফ স্টাম্পের বাইরে খোঁচা দিয়ে আউট হওয়ার ১০-এ ১০ করলেন, দেখে নিন মুহূর্তগুলো
আরও পড়ুন: SAvsIND: নতুন বছরে নতুন Team India, ছবি পোস্ট করলেন Virat Kohli, Ashwin
কোহলি আরও যোগ করেছিলেন, "টেস্ট ও একদিনের দলের নেতৃত্ব দেওয়ার ইচ্ছার কথাও সেই আলোচনায় আমি স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছিলাম। তবে দুই ফরম্যাটে নেতৃত্ব দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও, বিসিসিআই চাইলে আমাকে বাকি দুই ফরম্যাটের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিতে পারে। আমি দেশকে কোনও আইসিসি (ICC) ট্রফি দিতে পারিনি, তাই হয়তো আমাকে সরানো হয়েছে। আমি বোর্ডের যুক্তিটা বুঝতে পারছি। তবে আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি, আমার কোনও কাজে বা কোনও পদক্ষেপে কখনও ভারতীয় ক্রিকেটের ক্ষতি হবে না। প্রথম দিন থেকে যে মানসিকতার সঙ্গে খেলেছি, সেই একই আক্রমণাত্মক মানসিকতা নিয়েই খেলব।"
কোহলির আরও দাবি ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য টেস্ট দল ঘোষণা করার মাত্র মাত্র দেড় ঘণ্টা আগে জানানো হয়েছিল যে তিনি আর একদিনের দলের অধিনায়ক থাকছেন না। যদিও সৌরভ আগেই দাবি করেছিলেন, বিরাটকে টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব না ছাড়তে অনুরোধ করা হয়েছিল। সৌরভের সেই দাবিকে মিথ্যা বলে দাবি করেছিলেন কোহলি।
কোহলির সেই সাংবাদিক সম্মেলনের কয়েক দিন আগে মহারাজ বলেছিলেন, "রোহিতের নাম অধিনায়ক হিসাবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত বিসিসিআই ও নির্বাচকরা যৌথ ভাবে নিয়েছে। ঘটনাচক্রে বিসিসিআই বিরাটকে অনুরোধ করেছিল টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্বের পদ থেকে সরে না আসার জন্য। কিন্তু ও রাজি হয়নি। নির্বাচকরা তারপরই ঠিক হয় যে, সাদা বলের ফরম্য়াটে দু'জন ভিন্ন অধিনায়ক করা ঠিক নয়। এর সঙ্গেই ঠিক করা হয় যে, বিরাট টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসাবে থাকবে। রোহিত হবে সাদা বলের ক্যাপ্টেন। আমি বিসিসিআই সভাপতি হিসাবে ব্যক্তিগত ভাবে বিরাটের সঙ্গে কথা বলেছি। নির্বাচকদের চেয়ারম্যানও এই বিষয়ে বিরাটের সঙ্গে কথা বলেছে।" তবে কোহলির আলোড়ন ফেলে দেওয়া সাংবাদিক সম্মেলনের পর অনেকেই বোর্ড সভাপতির দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে হয়েছিল বিভক্ত। এক দল প্রিয় 'দাদা'-র হয়ে স্লোগান তুলছিল। অন্য দল ছিল 'কিং কোহলি'-র পক্ষে। কিন্তু চেতনের পালটা বক্তব্যের পর এই বিতর্ক যে অন্য মাত্র পেল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সেঞ্চুরিয়ানে প্রথম টেস্টের আগে কোহলি সাংবাদিক সম্মেলন এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি সিরিজের প্রথম টেস্টে প্রোটিয়াসদের উড়িয়ে ১১৩ রানে জিতলেও, সহ অধিনায়ক কেএল রাহুলকে সাংবাদিকদের কাছে পাঠিয়ে ছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। গত কয়েক বছর কোহলির অধিনায়কত্বে এমন ছবি দেখা যায়নি। দেশে-বিদেশে টেস্ট জিতলেই কোহলি সাংবাদিকদের কাছে চলে আসতেন। এমনকি বিদেশে টেস্ট কিংবা সীমিত ওভারের সিরিজ হারের পরেও কোহলি সবার সামনে দাঁড়িয়ে কঠিন প্রশ্নের গোলাগুলি হজম করতেন। তাঁর অধিনায়কত্বে আইসিসি প্রতিযোগিতার অন্যতম তিনটি ম্যাচ হেরে যাওয়ার পরেও সাংবাদিক সম্মেলন এড়িয়ে যাননি। তবে এ বার সচতুর ভাবে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যাচ্ছেন টেস্ট দলের অধিনায়ক। এমন কাজে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে প্রবল চাপে আছেন টেস্ট দলের অধিনায়ক।
অবশ্য চেতনের বক্তব্যের পর আরও একটা ব্যাপার স্পষ্ট হল, সৌরভ নয়, ভুল বলে বিতর্কে ঘি ঢেলেছেন খোদ কোহলি। ডিসেম্বরের শেষ দিকে মনে হচ্ছিল এই বিতর্ক তাহলে ধামাচাপা দেওয়া গেল। কিন্তু নতুন বছর শুরু হওয়ার আগে কোহলিকে টার্গেট করে সৌরভের বোর্ডের এমন 'বিরাট' বাউন্সার ধেয়ে আসবে সেটা কে জানত!