সব্যসাচী বাগচী 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

তাঁর কাছে ব্যাটিংয়ের অঙ্ক জলের মতো সরল। 'বল দ্যাখো, আর মারো'। এই ছকেই বাইশ গজের যুদ্ধে বিপক্ষের ঘুম কেড়ে নেন লিটন দাস (Litton Das)। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (ICC T20 World Cup 2022) টিম ইন্ডিয়ার (Team India) বিরুদ্ধে তাঁর ২৭ বলে ৬০ রানের ইনিংস দেখে কেঁপে গিয়েছিল আসমুদ্র হিমাচল। ঘরের মাঠে বাংলাদেশের (Bangladesh) এই অধিনায়কের কাছেই একদিনের সিরিজ হেরেছে তারকাখচিত টিম ইন্ডিয়া (Team India)। 


তবে এহেন লিটন শুধু বাংলাদেশের গর্ব নন। তাঁকে নিয়ে এবার থেকে কলকাতাও গর্ব করবে। কারণ, তিনি যে আসন্ন আইপিএল-এ (IPL 2023) কলকাতা নাইট রাইডার্সের (Kolkata Knight Riders) নতুন 'নাইট'। কোচির মিনি আইপিএল নিলাম (IPL Mini Auction 2023) থেকে তাঁকে ৫০ লাখ টাকায় নিয়েছে শাহরুখ খানের (Shah Rukh Khan) দল। এহেন লিটন এখন থাইল্যান্ডে পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে ব্যস্ত। ছুটির মেজাজে থাকলেও জি ২৪ ঘন্টাকে টেলিফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন তারকা উইকেটকিপার-ব্যাটার। 


প্রশ্ন: 'বল দ্যাখো, আর মারো'। আপনি একেবারে ছোটবেলা থেকে এই ছকে ব্যাট করেন? 


লিটন: চালিয়ে খেলে দ্রুত রান তুলতে বরাবরই ভালো লাগে। তবে ছোটবেলায় এতটা আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করতাম না। যত বড় হয়েছি, আগ্রাসী মনোভাব তত বেড়েছে। তাছাড়া জাতীয় দল ও আন্তর্জাতিক ফরম্যাটে নিজেকে অনেক বছর ধরে টিকিয়ে রাখতে গেলে, এভাবে বোলারদের উপর শাসন করা খুব জরুরি। ক্রিজে গেলে সেটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে মাঠে নামার সুযোগ পেলে, সেই নীতিই বজায় রাখব। তবে মাঠের বাইরে আমি কিন্তু একেবারে অন্যরকম মানুষ। 


প্রশ্ন: মাঠের বাইরে কেমনভাবে সময় কাটান? 


লিটন: আর পাঁচজন বাঙালি ছেলের মতোই আমি জীবনযাপন করি। পরিবার, কাছের কয়েকজন বন্ধু, খাওয়া-দাওয়া, এগুলোর মধ্যে দিয়েই সময় কেটে যায়। 


প্রশ্ন: আপনার ক্রিকেটীয় উত্থানের নেপথ্যে বর্ষীয়ান কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম কতটা ভূমিকা নিয়েছেন? 


লিটন: এই বিষয়টা পরিষ্কার করে দেওয়া উচিত। নাজমুল স্যার শুধু আমার 'গুরু' নন। ছোটবেলা থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত আমি কোচের সান্নিধ্য পেয়েছি। তেমনই একজন কোচ হলেন এই নাজমুল স্যার। অনেক পরে ওনার তত্বাবধানে ট্রেনিং করেছি। তাই শুধু ওনার নাম প্রচারমাধ্যমের কাছে তুলে ধরলে বাকিদের প্রতি অন্যায় করা হবে। কোনও 'গুরু'-র অপমান করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। 


প্রশ্ন: মাঠে তো আপনি একেবারে অন্যরকম। এই যে ভারতীয় দলকে একদিনের সিরিজ হারিয়ে দিলেন! 


লিটন: অনেকে এই ফলাফল দেখে অবাক হয়েছে। কারণ বিপক্ষে ভারতের মতো দল ছিল। তবে আমরা যারা এই সিরিজ জয়ের নেপথ্যে ছিলাম, তারা কিন্তু অবাক হইনি। কারণ ভারতীয় দলে একাধিক তারকা থাকলে, আমাদের দলেও ম্যাচ উইনারের অভাব ছিল না। রোহিত শর্মা যেমন খেলেনি, তেমনই আমাদের তামিম-তাসকিন ছিল না। এরমধ্যে আবার প্রথম ম্যাচটাই কঠিন হয়ে গিয়েছিল। যদিও চাপ সামলে মিরাজ সেঞ্চুরি করে আমাদের জিতিয়ে দেয়। এই সিরিজ জয় থেকেই বোঝা যায়, আমরা একদিনের ক্রিকেটে অন্যতম শক্তিশালী দল। 


প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে ২৭ বলে ৬০ রান করার পরেও বাংলাদেশকে হারতে হয়েছিল। সেই রান আউট নিয়ে ভাবলে এখনও আক্ষেপ হয়? 


লিটন: সেই ম্যাচ হারের আক্ষেপ আজীবন মিটবে না। বৃষ্টির আগে পর্যন্ত আমরাই তো ফেভারিট ছিলাম। কিন্তু বৃষ্টির পর মাঠে নামতেই সব হিসাব বদলে গেল। আমি রান আউট না হলে ফলাফল আমাদের পক্ষেই যেত। তাই আক্ষেপ মিটবে না। 



আরও পড়ুন:  Exclusive, Rishabh Pant Car Accident: চোট সারিয়ে কবে মাঠে ফিরবেন পন্থ? কী বলছেন শল্যচিকিৎসক শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত?


আরও পড়ুন: Rishabh Pant Car Accident: দুই প্রিয় অভিনেতা অনিল কাপুর-অনুপম খেরকে দেখে কী করলেন আহত পন্থ?


প্রশ্ন: আচ্ছা আইপিএল-এ সুযোগ পাওয়াকে কীভাবে দেখছেন? 


লিটন: অবশ্যই দারুণ অনুভূতি। বিশেষ করে কলকাতা নাইট রাইডার্স আমাকে সুযোগ দিয়েছে বলে আরও ভালো লাগছে। অনেক ছোটবেলা থেকে কলকাতায় এসেছি। ইডেন গার্ডেন্সে ও ময়দানের একাধিক মাঠে একাধিক বয়স ভিত্তিক ম্যাচ খেলেছি। ময়দান মার্কেটের অনেক দোকানের মালিক আমাকে চেনে। কারণ কলকাতায় গেলেই সেখান থেকে ক্রিকেট ব্যাট, কিট কেনা চাই। আমার কাছে কলকাতা 'সেকেন্ড হোম'। ভাষা, সংস্কৃতি, খাওয়া-দাওয়া সব এক। তাই মিশে যেতে সুবিধা হয়। 


প্রশ্ন: কলকাতায় আত্মীয়-স্বজন থাকেন? 


লিটন: না নেই। তবে অনেক বন্ধু আছে। 


প্রশ্ন: পূর্ববঙ্গের মানুষদের খাওয়া-দাওয়ার প্রতি একটা আলাদা টান থাকে। আপনিও কি সেই দলে আছেন? 


লিটন: আমি যে খুব পেটুক, সেটা বলব না। আবার মাসের ৩০ দিন সিদ্ধ খাবার খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছি, এটা বললে মিথ্যা হয়ে যাবে। খেতে খুব ভালোবাসি। সুযোগ পেলেই ইলিশ, কাচ্চি বিরিয়ানি, ভুনা খেয়ে নি। সারা বছর খেলার চাপে বাড়ি যাওয়া হয় না। তবে মায়ের কাছে দিনাজপুরের বাড়িতে গেলে, প্রাণ খুলে খাওয়া-দাওয়া করি। 


প্রশ্ন: ক্রিকেটে ফেরা যাক। আপনি ওপেনার হিসেবে সফল। নাইটদের হয়ে ওপেন করার সুযোগ পেলে নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন? 


লিটন: ক্রিকেট তো এক বলের খেলা। থাইল্যান্ড থেকে তো বসে বলতে পারি না যে প্রতি ম্যাচেই রান করব। তবে আমি এতটা বলতে পারি, আমার পারফরম্যান্স দেখে টিম ম্যানেজমেন্ট নিরাশ হবে না। ওদের আমাকে নিয়ে নিশ্চয়ই বিশেষ কিছু পরিকল্পনা আছে। তাই আমাকে নিয়েছে। বাকিটা এবার সময় বলবে। 



প্রশ্ন: নাইট টিম ম্যানেজমেন্টের কারও সঙ্গে কথা হয়েছে? 


লিটন: বিশেষ কথাবার্তা এখনও হয়নি। নিলামের পর সিইও ভেন্কি মাইসোর ফোন করেছিলেন। 


প্রশ্ন: শ্রেয়স আইয়ার অধিনায়ক হিসেবে কতটা সফল হবেন বলে আপনার মনে হয়? 


লিটন: এর আগে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে অধিনায়ক হিসেবে ও ভালো পারফর্ম করেছে। গত বছর কেকেআর-এর অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চেয়েছে। ওর নেতৃত্বে কলকাতা ভালো ফল করবে। মিলিয়ে নেবেন। 


প্রশ্ন: কলকাতায় পরিবার নিয়ে এলে খেলার ফাঁকে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে? 


লিটন: হ্যাঁ, সময় পেলে মায়াপুর, ইসকন মন্দির কিংবা পুরী বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। আমাদের বাড়িতে শ্রী কৃষ্ণ ও জগন্নাথ দেবকে পুজো করার রীতি রয়েছে। আইপিএল-এর ব্যস্ততার মধ্যে কতটা সময় বের করতে পারব জানি না।



(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)