Exclusive: Kiyan Nassiri: ‘ভাইপো’ কিয়ানের সাফল্যে উল্লসিত ‘কাকা’ মজিদ, ইরান থেকে এল বার্তা
কিয়ানের সাফল্যে টগবগ করে ফুটছেন মজিদ।
সব্যসাচী বাগচী: আচ্ছা ভারতীয় ফুটবলে কি আবার ইরানি যুগ ফিরে এল! সদ্য শেষ হওয়া ডার্বি যুদ্ধে হ্যাটট্রিক করা কিয়ান নাসিরি কি তাঁর বাবা-কাকাদের গৌরভ ফিরিয়ে আনছেন! ইরানে বসে থাকা আটের দশকের ‘বেতাজ বাদশা’ মজিদ বিসকার তো তেমনটাই জানিয়ে দিলেন। ‘ভাইপো’ অভিষেক ডার্বিতেই হ্যাটট্রিক করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তাই কিয়ানের এমন সাফল্যে 'কাকা' মজিদ শুধু উল্লসিত নয়, একেবারে যেন টগবগ করে ফুটতে শুরু করেছেন। কিয়ানের ‘কাকু’-র পায়ে শুধু পায়ে বলটা দিয়ে দিলেই হল! কারণ এই কাকুই যে তাঁর ভাইপো একজোড়া বুট উপহার দিয়েছিলেন।
জি ২৪ ঘণ্টার মাধ্যমে আগেই জেনে গিয়েছিলেন যে প্রিয় বন্ধু জামসিদ নাসিরি তাঁকে কিয়ানের হ্যাটট্রিক অভিযানের ভিডিও পাঠাবেন। সেটা জেনে মজিদের যেন তর আর সইছে না। দুই বছর আগে কলকাতায় এসেছিলেন মজিদ। বন্ধু জামসিদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন ময়দানের আনাচ-কানাচ। নিজের অতীতের সোনালী দিনগুলো ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এই ইরানি। কিছুটা সময় কিনায়ের সঙ্গেও কাটিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি উপুড় করে দিলেন বহু বিতর্কিত মজিদ।
হোয়াটসঅ্যাপ কলে এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, “কিয়ান ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করেছে! বাবার রক্ত বলে কথা। আমার কিন্তু খুব আনন্দ হচ্ছে। জামসিদকে সকালে ফোন করব। আপনিও বলে দেবেন ও যেন গোলের ভিডিওগুলো পাঠিয়ে দেয়। কিয়ানকে আশীর্বাদ করলাম।“
দুই বছর আগে কিয়ানের স্কিল কিছুক্ষণের জন্য দেখেছিলেন মজিদ। সেটাও জানিয়ে দিলেন তিনি। ‘বেতাজ বাদশা’ জুড়ে দিলেন যে, “দুই বছর আগে কলকাতায় এসে কিছুক্ষণের জন্য সিসিএফসি-তে গিয়েছিলাম। কলকাতায় থাকার সময় ওখানে কত আড্ডা দিয়েছি। তাই আমার সম্মানে একটা প্রদশনী ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই কিয়ানের স্কিল দেখেছিলাম। একেবারে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম ওর খেলা দেখে।“
আরও পড়ুন: ISL 2021-22: প্রথম আবির্ভাবেই হ্যাটট্রিক, ডার্বির রঙ সবুজ-মেরুন করে দিলেন কিয়ান নাসিরি
আসলে ফুটবল এমনই একটা খেলা। যে খেলা নিয়ে আলোচনা করতে বসলে সময় কোথা থেকে চলে যায় বোঝাই যায় না। তাই ইরানে থাকা প্রায় ৬৫ বছরের ‘যুবক’ও উচ্ছসিত। যোগ করলেন, “সেই ম্যাচে কিয়ানকে দেখার পর একজোড়া বুট দিয়েছিলাম। তবে বুট পায়ে দিলেই তো সবাই বড় মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরতে পারে না। কিন্তু কিয়ান পারল। এটা জেনে ভাল লাগছে।“
নিজেও একটা সময় দুরন্ত মেজাজে শুরুটা করেছিলেন। তারপর হারিয়ে গিয়েছেন নিজের কিছু ভুলে। সেই সব কালো অতীত নিয়ে কথা বলতে রাজি নন মজিদ। তবে আলোচনার শেষে কিয়ান যেন বুঝিয়ে দিতে চাইলেন যে, ‘বাছা আর যাই করিস, কাকুর মতো বোহেমিয়ান হয়ে যাস না!’
তাই শেষে যোগ করলেন, “বর্তমান যুগে ফুটবল কিন্তু আরও কঠিন। শুধু একটা ম্যাচে খেললেই চলবে না। নিয়মানুবর্তিতা বজায় রেখে ধারাবাহিক হতে হবে। তবে মিলবে সম্মান। তাই কিয়ান যেন ফিটনেস বজায় রাখে। ওর চেহারা তো ছোটখাটো। তাই সঠিক ডায়েট করতে হবে। তবেই ভবিষ্যতে মিলবে সাফল্য।“
সেটা ১৯৭৯ সালের কথা। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ভারতে চলে এসেছিলেন জামসিদ নাসিরি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দুই বন্ধু মজিদ বিসকার ও মাহমুদ খাবাজি। তিন জনই ফুটবল খেলতেন। কিন্তু মজিদ এবং জামসিদ অচিরেই কলকাতা ময়দানের নায়ক হয়ে ওঠেন। এরপর জামসিদ এগিয়ে গেলেও, কালের নিয়মে অন্ধকারে তলিয়ে যান ‘বোহেমিয়ান বাদশা।‘
সময়ের সঙ্গে বদলে গিয়েছেন কিয়ানের ‘বুড়ো কাকু’। পাক ধরেছে চুলে। তাই পরোক্ষ ভাবে নিজের অতীতকে টেনে ‘ভাইপো’কে নিষ্ঠাবান হতে বলছেন মজিদ।