ISL 2021-22: প্রথম আবির্ভাবেই হ্যাটট্রিক, ডার্বির রঙ সবুজ-মেরুন করে দিলেন কিয়ান নাসিরি
আইএসএল-এর মঞ্চে ডার্বি যুদ্ধে চারে চার করল এটিকে মোহনবাগান।
এটিকে মোহনবাগান-৩ (নাসিরি-হ্যাটট্রিক)
এসসি ইস্টবেঙ্গল-১ (সিডোয়েল)
নিজস্ব প্রতিবেদন: প্রথম লেগে এটিকে মোহনবাগান ৩-০ গোলে মাটি ধরিয়েছিল এসসি ইস্টবঙ্গলকে। শনিবার মাণ্ডবী তীরে ছিল আইএসএল-এর মঞ্চে ফিরতি ডার্বি। সেই ম্যাচে উদয় হল নতুন তারকার। জামশেদ নাসিরির ছেলে কিয়ান নাসিরি হ্যাটট্রিক করে ম্যাচ নিয়ে চলে গেলেন এটিকে মোহনবাগান শিবিরে। তাঁর হ্যাটট্রিকের সৌজন্যে ফিরতি ডার্বি ৩-১ ব্যবধানে জিতে নিল সবুজ-মেরুন।
দীপক টাঙ্গরির পরিবর্তে ফেরান্দো মাঠে পাঠান তরুণ কিয়ান নাসিরিকে। তাঁর বাবা জামশেদ নাসিরি অতীতে ডার্বি মাতিয়েছেন। তাঁর ছেলে এদিন গোল করে ঢুকে পড়লেন ডার্বির কক্ষপথে। অবশ্য যে ডিফেন্স এতক্ষণ পর্যন্ত এসসি ইস্টবেঙ্গলকে বাঁচাচ্ছিল, আসল সময়ে ভুলের পর ভুল করে বসে। বল বিপন্মুক্ত করতে পারল না লাল-হলুদ রক্ষণ। সেই সুযোগে সদ্য নামা কিয়ান নাসিরি গোল করে যান।
ফিরতি ডার্বির প্রথম ৪৫ মিনিট গোলশূন্যই শেষ হয়েছিল। ম্যাচে বল দখলে এটিকে মোহনবাগান এগিয়ে থাকলেও, প্রতিআক্রমণে ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছিল এসসি ইস্টবেঙ্গলকে। প্রথমার্ধের সবচেয়ে বড় সুযোগও পায় লাল-হলুদই। তবে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্সেলো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। মোহনবাগানই বেশিরভাগ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখলেও, রক্ষণে বারবার ভুল করেছে।
১৫ মিনিটে কার্ল ম্যাকহিউ মাঝমাঠ থেকে আসা লং বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন। বল চলে আসে মহেশের পায়ে। কোনও সবুজ মেরুন ফুটবলার তাঁকে ক্লোজ না করতে পারেননি। কিন্তু প্রায় ২৫-৩০ মিটার দূর থেকে মহেশের শট অল্পের জন্য এটিকে মোহনবাগান গোলের বাইরে দিয়ে চলে যায়।
এরপর ২৫ মিনিটে আরও একটা সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল লাল-হলুদ। মাঝমাঠের নীচ থেকে আদিল খানের ফ্রি-কিক, তিরির জঘন্য ক্লিয়ারেন্সে চলে আসে মার্সেলো রিবেইরা পায়ে। গোলকিপারকে ১-১ পজিশনে পেয়েও সেই সুযোগ হাতছাড়া করেন ইস্টবেঙ্গলের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। তাঁর শট গোলের বাইরে বেরিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভেন্টিলেশনে লড়ছেন Surajit Sengupta
আরও পড়ুন: বড় ম্যাচে SC East Bengal-এর দ্বাদশ ব্যাক্তি প্রয়াত সুভাষ ভৌমিক
শুরু থেকে আক্রমণ করলেও গোল করার সুযোগ চলে এসেছিল ৩৯ মিনিটে। ম্যাচের প্রথম কর্ণার থেকে বল পৌঁছে যায় লিস্টন কোলাসোর পায়ে। তাঁর দুর্ধর্ষ ক্রসে দ্বিতীয় পোস্টে বিশাল বড় গোল করার সুযোগ পেয়ে যান প্রীতম। তবে শেষ মুহূর্তে অমরজিৎ-র হালকা মাথার স্পর্শই প্রীতমকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। শেষ পর্যন্ত সেটাই হল। সুযোগ হারাল সবুজ-মেরুন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সবুজ-মেরুনকে এগিয়ে দিতে পারতেন লিস্টন। প্রায় ৩০ মিটার দূর থেকে মারা তাঁর শট লাল-হলুদের বার পোস্টে লেগে ফিরে আসে। গোলরক্ষক অরিন্দম, নিজের জায়গা থেকেও নড়তে পারেননি।
এরই মধ্যে ৫৭ মিনিটে লাল-হলুদকে এগিয়ে দেন সিডোয়েল। কর্ণার থেকে একগুচ্ছ ফুটবলারদের মাঝে সিডোয়েল বলকে আক্রমণ করেন এবং তাঁর ডান পায়ের শট মনবীরের গায়ে লেগে মোহনবাগান জালে জড়িয়ে যায়। আইএসএল-এর ডার্বিতে এই প্রথম গোল পেল লাল-হলুদ।
তবে ৬৪ মিনিটে সমতা ফেরায় এটিকে মোহনবাগান। বাঁ-দিক থেকে প্রবীর দাসের ক্রস ক্লিয়ার করতে একেবারে ব্যর্থ হয় ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ। বল চলে যায় জুনিয়র নাসিরির পায়ে। প্রথম টাচেই দুর্দান্ত বাঁক খাওয়ানো শটে গোল করে মোহনবাগানকে সমতায় ফেরালেন জামসেদ নাসিরির ছেলে।
লিড বাড়তেই পারত। তবে ৬৬ মিনিটে পেনাল্টি হাতছাড়া করে ডেভিড উইলিয়ামস। শেষ দিকে হীরা মন্ডল ও হুগো বুমৌসের লড়াই চলছিল। বোঝাই যাচ্ছিল না ফিরতি ডার্বির কোন দিকে ঢলে পড়বে। ঠিক এমন মোক্ষম সময় লাল-হলুদকে ফের জোড়া আঘাত দিলেন তরুণ কিয়ান।
৯৩ মিনিটে কোলাসোর ক্রস থেকে ডেভিড উইলিয়ামসের হেডার পোস্টে লেগে ফিরে আসলেও, ফিরতি বল জালে জড়িয়ে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করলেন নাসিরি।
এরপর ৯৫ মিনিটে আবার কিয়ান ঝড়। ফাতোরদা ময়দানে অভূতপূর্ব দৃশ্য। সবুজ-মেরুনের হয়ে হ্যাটট্রিক করলেন ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলা জামশেদ নাসিরির পুত্র কিয়ান।
ফলে চলতি আইএসএল-এর ডার্বি যুদ্ধে লাল-হলুদের বিরুদ্ধে চারে চার করল সবুজ-মেরুন।