সব্যসাচী বাগচী 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

টিভি-মোবাইলে ম্যাচ জেতানো ব্যাটিং কিংবা বোলিং, দেখা চোখের শান্তি। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সেই মুহূর্তগুলো ভাইরাল যায় মুহূর্তের মধ্যেই। তবে সেই আগুনে পারফরম্যান্সের নেপথ্যে থাকে অনেক লড়াই। কঠোর পরিশ্রম,দায়বদ্ধতা ও আত্মত্যাগ। সেগুলো একসঙ্গে মিশিয়েই জাতীয় দলে রাজার মতো কামব্যাক করলেন বাংলার মহম্মদ শামি (Mohammed Shami)। তাও আবার অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিরুদ্ধে শেষ ওভারে! হোক না টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (ICC T20 World Cup 2022) আগে 'ওয়ার্ম আপ ম্যাচ'। মোরাদাবাদের জমিদার পরিবারের ছেলে সাদা বল হাতে নিয়েই তাঁর ঠাটবাঁট  বুঝিয়ে দিলেন। 


শামির বয়স যখন মাত্র আট বছর, তখন থেকে ওঁকে চেনেন বদরুদ্দিন সিদ্দিকি (Badruddin Siddiqui)। উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ জেলার সহেসপুর গ্রামেই থাকেন তিনি। ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্যে কোচ হিসেবে তাঁর বেশ নামডাক। ছাত্রের সৌজন্যে অজিদের ছয় রানে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরেই জি ২৪ ঘণ্টা তাঁকে টেলিফোনে ধরল। 'সহেসপুর এক্সপ্রেস'-এর প্রশংসা করে প্রথমেই জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলী ও ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টকে একহাত নিলেন বদরুদ্দিন। 



পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা


চেতন শর্মার জাতীয় নির্বাচক মন্ডলীর প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে বদরুদ্দিন বলেন, 'জসপ্রীত বুমরা ফিট থাকলে ওকে টি-টোয়েন্টি দলে নেওয়া হত না! সেটা মেনে নেওয়া আমাদের পক্ষে কঠিন। এরমধ্যে বুমরা চোট পেলেও শামিকে দলে নেওয়া হচ্ছিল না! এটা তো অদ্ভুত সিদ্ধান্ত! কত কাঠখড় পোড়ানোর পর ওকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে নেওয়া হল। আমার মতে শামির তো এশিয়া কাপের দলেই সুযোগ পাওয়া উচিত ছিল। আমাদের দেশের টি-টোয়েন্টি দল আইপিএল-এর পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। হর্ষল প্যাটেল, অর্শদীপ সিং, সূর্য কুমার যাদবরা তো আইপিএল-এ নজর কেড়েই জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছে। তাহলে শামি কী দোষ করল! ও গত আইপিএল-এ ভালো বোলিং করেছিল বলেই কিন্তু গুজরাত টাইটান্স ট্রফি জেতে। জাতীয় নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের সেটা মনে রেখে অনেক আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।'



এরপরেই তিনি জুড়ে দিলেন, 'জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ না খেললেও শামি কিন্তু চোটে আক্রান্ত ছিল না। এটা ঠিক যে কোভিডের জন্য মাঝে কিছুটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। ফলে কয়েকটা দিন বন্ধ রেখেছিল অনুশীলন। তবে গ্রামের বাড়িতে থাকলে ও সকাল-বিকেল অনুশীলন করবেই। আমি, ওর ভাই মহম্মদ কাইফ এবং উঠতি ছেলেদের সঙ্গে একনাগাড়ে বোলিং করে যায় শামি। বছরের পর বছর এই রুটিন মেনে যাচ্ছে। এরমধ্যে বছর খানেক আগে নিজের ফার্ম হাউসের মধ্যেই একটা জিম বানিয়েছে। এভাবেই ও নিজেকে ফিট রাখে।' 




আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শামির পারফরম্যান্স নিয়ে কারও প্রশ্ন তোলার কথা নয়। তবে এটাও ঠিক চলতি বছরের জুলাইয়ের পর টেস্ট ও ৫০ ওভারের ফরম্যাটে তাঁকে দেখা যায়নি। দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি তো আরও আগে খেলেছিলেন। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নামিবিয়ার বিরুদ্ধে শেষবার খেলেছিলেন। এরপর প্রায় ১১ মাস পরে আবার টিম ইন্ডিয়ার হয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বল হাতে নামলেন। অবশ্য আইপিএল-এ ১৬ ম্যাচে ২০ উইকেটও কিন্তু ভুলে যাওয়া উচিত নয়।  


আরও পড়ুন: Watch, Mohammed Shami, India vs Australia: দেখুন শামির সেই বিধ্বংসী শেষ ওভার! ঘোরের মধ্যে নেটিজেনরা


আরও পড়ুন: Virat Kohli, IND vs AUS: ব্যাটার নয়, ফিল্ডার কোহলির 'বিরাট' ক্যাচে বধ অস্ট্রেলিয়া! ভিডিয়ো ভাইরাল


বুমরা নেই। ভুবনেশ্বর কুমার ও অর্শদীপ গত এশিয়া কাপে ডেথ ওভারে ব্যাপক রান বিলিয়েছেন। তাই কি গা ঘামানোর ম্যাচে শামিকে দেখে নিলেন রোহিত শর্মা? পুরো ম্যাচে ডাগআউটে বসে থাকা শামিকে শেষ ওভারে রান আপ নিতে দেখে মাইক হাতে ধারাভাষ্য দেওয়া সুনীল গাভাসকর অবাক হয়ে যান। কিন্তু গোটা ক্রিকেট দুনিয়াকে চমকে দিয়ে শামি শেষ ছয় বলে যে খেল দেখালেন, সেটা ভারতীয় পেস বোলিংয়ের ক্যাবিনেটে আজীবনের আর্কাইভ হয়ে থেকে যাবে। 



অতীতে ডেথ ওভারে প্রভাব ফেলতে পারেননি। কিন্তু এবার কীভাবে নিজেকে বদলে ফেললেন শামি? বদরুদ্দিনের প্রতিক্রিয়া, 'বুমরাকে নিয়ে অনিশ্চয়তার সময়ই শামির কাছে টিম ম্যানেজমেন্ট বার্তা দিয়েছিল। সেই ভাবে ডেথ বোলিংয়ের উপর কাজ শুরু করে দিয়েছিল। পুরনো বল ভিজিয়ে শামি অনুশীলন করত। গ্রাম থেকে সুস্থ হয়ে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে গিয়েও শামি পুরনো বলকে ভিজিয়ে অনুশীলন করে যেত। যাতে শিশির ফ্যাক্টর হলেও সমস্যা না হয়। এছাড়া স্লো বাউন্সার, স্লো ইয়র্কার, নাকল ডেলিভারি তো আছেই। সঙ্গে যোগ হয়েছে অধ্যাবসায়। শামির মধ্যে পরিশ্রম করার মানসিকতা আছে বলেই এই ম্যাচে পরপর চারটি ইয়র্কার দিল। লাগাতার চারটি ইয়র্কার দেওয়ার জন্য কতটা ফিটনেস ও কাঁধের জোর লাগে সেটা সবাই জানেন।' 


আত্মবিশ্বাস বোঝাই করেই যে শামি মাঠে নেমেছিলেন সেটা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। শেষ ওভারে শামির দৌড় দেখেই বোঝা গিয়েছে। 'সহেসপুর এক্সপ্রেস'-এর দৌড় দেখে অনেকেই বলতে শুরু করে দিয়েছেন, শামি নাকি মটন বিরিয়ানি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন! যদিও এমন জল্পনাকে গল্প বলেই উড়িয়ে দিলেন তাঁর কোচ। শেষে বলে দিলেন, 'শামি জমিদার বাড়ির ছেলে। টিম ইন্ডিয়ার তারকা হলেও ওর মধ্যে সেই জমিদারী ব্যাপার যায়নি। এখনও আগের মতোই মটন বিরিয়ানি খায়। সঙ্গে থাকে মশলাদার খাবার। আসলে ও প্রচন্ড ফিট। তাই বিরিয়ানি ছেড়ে দেওয়ার বান্দা ও নয়।' 


শামির বিরিয়ানি প্রেম নিয়ে রবি শাস্ত্রীর একটা টুইট মনে পড়ে যাচ্ছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আগুনে বোলিং করার পর টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন কোচ লিখেছিলেন, 'আজ তোর জন্য ডাবল বিরিয়ানি লালা। যত পারিস খেয়ে নে!' অজিদের গুঁড়িয়ে দিয়ে তাঁকে ব্রাত্য করে রাখা ক্রিকেট বোদ্ধাদের মুখে সজোরে চড় মারলেন শামি! বুঝিয়ে দিলেন এই বিরিয়ানিই তাঁর সাফল্যের উৎস! 



(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)