FIFA World Cup 2022, Qatar vs Ecuador: আমজাদ তাহা-র টুইট বাজার গরম করা মিথ্যা, উদ্বোধনী ম্যাচে কাতারকে জোড়া গোলে উড়িয়ে দিলেন ইকুয়েডরের অধিনায়ক এনার ভ্যালেন্সিয়া
FIFA World Cup 2022, Qatar vs Ecuador: এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন হলেও বিশ্বকাপ যে একেবারে আলাদা মঞ্চ সেটা কাতারকে শুরু থেকেই বুঝিয়ে দিয়েছে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অনেকটা এগিয়ে থাকা বিপক্ষ। কাতারের স্প্যানিশ কোচ ফেলিক্স সানচেজ মাঠে বল পড়ার আগে ইকুয়েডরকে বুঝে নেওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু ৯০ মিনিটের যুদ্ধে এর প্রতিফলন কোথায়!
ইকুয়েডর: ২ (এনার ভ্যালেন্সিয়া '১৬ পেনাল্টি, '৩১)
কাতার: ০
সব্যসাচী বাগচী
গত ১৭ নভেম্বর মাত্র কয়েক শব্দের একটা টুইট কাতার বিশ্বকাপ (FIFA World Cup 2022) নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। মধ্য প্রাচ্য সম্পর্কিত ব্রিটিশ গবেষণা কেন্দ্রের আঞ্চলিক প্রধান আমজাদ তাহা-র (Amjad Taha) একটি টুইট ঘিরে রীতিমতো চাঞ্চল্য তৈরি হয়। তবে তাঁর সেই টুইটকে একেবারে মিথ্যা প্রমাণ করে দিল ইকুয়েডর (Ecuador)। কাতারকে (Qatar) ২-০ গোলে হেলায় হারিয়ে কাপ যুদ্ধের অভিযান শুরু করল দক্ষিণ আমেরিকার এই দল। জোড়া গোল করে 'ম্যাচের নায়ক' ইকুয়েডরের অধিনায়ক এনার ভ্যালেন্সিয়া (Enner Valencia)। এই হারের সঙ্গে একটি রেকর্ড গড়ে ফেললো কাতার। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ থেকে আয়োজক দেশ উদ্বোধনী ম্যাচ জিতে আসছিল। তবে কাতার ম্যাচটা সেই রেকর্ড ভেঙে দিল!
আমজাদ তাহা টুইটারে লিখেছিলেন, 'কাতার উদ্বোধনী ম্যাচ জেতার জন্য ইকুয়েডরের আট জন ফুটবলারকে ৭.৪ মিলিয়ন ডলারকে ঘুষ দিয়েছে। ইকুয়েডর ম্যাচ ছেড়ে দেবে কাতারকে। দ্বিতীয়ার্ধে করা গোলে ইকুয়েডরকে হারাবে কাতার। কাতারের পাঁচজন এবং ইকুয়েডর শিবিরের ভিতর থেকেই এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে আশাকরি এটা ভুল খবর। আর এই খবর প্রকাশিত হওয়ায় ম্যাচের ফলাফলকেও প্রভাবিত করবে। ফিফার এমন দুর্নীতির বিরোধিতা করুক।'
ফিফা (FIFA), কাতার (Qatar) ও ইকুয়েডর (Ecuador) ফুটবল সংস্থা। সেই বাজার গরম করা টুইটকে নিয়ে একটিও মন্তব্য করেনি। কারণ বয়স ভাঁড়ানোর মতো বিতর্ক দূরে সরিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে আসা দক্ষিণ আমেরিকার এই দলটার অনেক কিছু প্রমাণ করার ছিল। সেটা রবিবাসরীয় ৬০ হাজার দর্শক সংখ্যা বিশিষ্ট আল বায়াত স্টেডিয়ামে (Al Bayt Stadium) চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন 'হলুদ আর্মি'-র অধিনায়ক এনার ভ্যালেন্সিয়া। তাঁর জোড়া গোলের দাপটে ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচেই মুখ থুবড়ে পড়ল এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন কাতার। একইসঙ্গে জোড়া গোলের সৌজন্যে এই নিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে পাঁচটি গোল করে ফেললেন এই স্ট্রাইকার।
প্রথমার্ধেই খেলার ফয়সালা করে দেন একটা সময় ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডে (West Ham United F.C) খেলা এনার ভ্যালেন্সিয়া। ম্যাচের ১৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে এবারের বিশ্বকাপের প্রথম গোলটি করেছিলেন ইকুয়েডরের অধিনায়ক। তবে ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই অবশ্য এগিয়ে যেতে পারতো 'হলুদ আর্মি'। মাঝ মাঠ থেকে ফ্রি কিক করেন ফেলিক্স টোরেস। সেই চলতি বলকে রুখে দেওয়ার জন্য বক্সের বাইরে চলে কাতারের গোলকিপার সাদ আল সিব (Saad Al Sheeb)। এনার ভ্যালেন্সিয়ার গোলে এগিয়ে গেলেও পরে ইকুয়েডরের এই গোলটি বাতিল করা হয়। রেফারি পরে ভিএআর-এর (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) সাহায্যে অফ সাইড পরীক্ষা করে দেখেন ফেলিক্স টোরেস অফ সাইডে রয়েছেন। এবং গোল বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেন।
তবে এতে কাতারের বিশেষ সুবিধা হয়নি। কারণ কিছুক্ষণ পরেই জালে বল জড়িয়ে দেন সেই ভ্যালেন্সিয়া। ১৫ মিনিটে পেনাল্টি আদায় করে নেয় পেল ইকুয়েডর। ভ্যালেন্সিয়া কাতারের বক্সে ঢুকে পড়লে তাঁকে অবৈধ ভাবে আটকান গোলকিপার সাদ আল সিব। সেই সুবর্ণ সুযোগকে হাতছাড়া করেননি ভ্যালেন্সিয়া।
এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন হলেও বিশ্বকাপ যে একেবারে আলাদা মঞ্চ সেটা কাতারকে শুরু থেকেই বুঝিয়ে দিয়েছে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অনেকটা এগিয়ে থাকা বিপক্ষ। কাতারের স্প্যানিশ কোচ ফেলিক্স সানচেজ মাঠে বল পড়ার আগে ইকুয়েডরকে বুঝে নেওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু ৯০ মিনিটের যুদ্ধে এর প্রতিফলন কোথায়! ঘরের মাঠে খেলা ও চেনা সমর্থকদের চিৎকারের চাপেই হয়তো হারিয়ে গেল আয়োজক দেশ। মাঝমাঠ থেকে ডিফেন্স কোনও বিভাগেই এঁটে উঠতে পারল না।
আর তাই তো ৩১ মিনিটে ফের একবার বুঝিয়ে দিলেন সেই ভ্যালেন্সিয়া। এবারও কাতারের রাতের ঘুম কেড়ে নিলেন তিনি। পেরেসিয়াদোর রানিং শটের বল হেড করে পোস্টে ঢুকিয়ে দেন। ৩১তম মিনিটে তাঁর দুর্দান্ত হেডার ইকুয়েডরকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেয়। তখন কে জানত সেটাই হবে জয়সূচক গোল!
পুরো ম্যাচে কাতারের ডিফেন্ডারদের কাছে মার খেলেন ভ্যালেন্সিয়া।। দল যাতে আর গোল না হজম করে সেইজন্য ফেলিক্স সানচেজ একটা সময় পাঁচজনকে ডিফেন্সে নামিয়ে দিয়েছিলেন। সেই পাঁচ ডিফেন্ডার অনবরত ইকুয়েডরের অধিনায়ককে 'চার্জ' করেই গেল। অবশেষে হ্যাটট্রিক করার সুযোগকে মাঠে ফেলে ৭৬ মিনিটে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হলেন ভ্যালেন্সিয়া। শুরুতেই চোট পেয়েছিলেন তিনি। তাই বাড়তি ঝুঁকি না নিয়ে অধিনায়ককে মাঠ থেকে তুলে নিলেন আর্জেন্টাইন কোচ গুস্তাফো আলফারো। তবে এতে ইকুয়েডরের ক্ষতি হয়নি। কারণ অত্যন্ত ম্যাড়ম্যাড়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো কাতার ফুটবল দল যে একেবারে নির্বিষ ফুটবল খেলে গেল।