Uttam Kumar: ফুটবল খেলেও উত্তম কুমার কীভাবে বাঙালির `গুরু` হয়ে গেল জানেন?
১৯৫১-৬২ সাল, এই সময় ভারতীয় ফুটবল সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছিল। `৬১ ও `৬২ সালে এশিয়ান গেমসে সোনা। এর আগে `৫৬ সালে অলিম্পিক্সে চতুর্থ। তাই, ভারতীয় ফুটবলের সেই অনুপম সাফল্যের সময়ে (যে সাফল্যে বাঙালিদের অবদান নিয়ে আর নতুন করে কিছু বলার নেই), কৃষ্ণেন্দুর পায়ে ফুটবলই যে সবচেয়ে ভালো, কাদামাখা সেই খেলাই যে সবচেয়ে বেশি উল্লাস বয়ে আনবে সেটাই তো স্বাভাবিক।
সব্যসাচী বাগচী
স্মৃতির ভেতরে কুয়াশা জমে থাকে। ধোঁয়া ধোঁয়া সেই অস্বচ্ছতার আড়াল থেকে উঁকি মারে অতীত। কোনও দৃশ্য নয়। কেবল শব্দ। কোলাহল। উত্তেজনা, গতি এবং আনন্দের একরাশ আস্ফালন। ক্রমে ছবি ফোটে। দেখা যায় পেলব অথচ অহংকারী, জাত্যাভিমানী অথচ সুন্দর একখানি মুখ। আর তাঁর মুখনিঃসৃত চিৎকার, 'মুভ অন ক্লেটন। মুভ অন…!' উত্তেজনার লালচে আভায় তাঁর মুখখানি গনগনে আঁচের মতো। তিনি....রিনা, রিনা ব্রাউন। কালের নিয়মে এহেন সুচিত্রা সেন মৃত। এর অনেক আগেই চলে গিয়েছেন পর্দার কৃষ্ণেন্দু। বাঙ্গালীর ম্যাটিনি আইডল উত্তম কুমার। তবে এখনও সেই জুটি বারবার ফিরে আসে। বাংলা ও বাঙালির মনকে গর্বিত করে তোলেন। একই ভাবে সবার মনে বেঁচে রয়েছেন কৃষ্ণেন্দু ও কালীগতিবাবুর মতো চরিত্র।
বেশ কিছুক্ষণ ক্যামেরাও দেখে। যেন সেও সম্মোহিত। আসলে তো তা নয়। চিত্রনাট্য এভাবেই ভেবেছে তাঁকে। তাই ক্যামের লেন্সও দেখছে। এবার ক্যামেরা সটান ঘুরে যায় মাঠের দিকে। লং শটে ফুটে ওঠে ফুটবল। তখন ব্রিটিশদের পরাস্ত করে আইএফএ শিল্ড জেতার পর পাঁচ দশক কেটে গিয়েছে। বাঙালির ফুটবল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও পরিণত। শুধু মোহনবাগান নয়। আসর জমিয়ে দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল-মহামেডানও। একেবারে ষোলোকলা পরিপূর্ণ। সেই উন্মাদনার আভাস জলছবি হয়ে ফুটে উঠতে শুরু করেছে।
এবার ক্যামেরার সঙ্গে এগোনো যাক। ক্লেটন নামের সেই তরুণ ছুটে চলেছেন। গোলমুখী তাঁর দৌড় থামাতে আপ্রাণ লড়াই প্রতিপক্ষের। সবাইকে অগ্রাহ্য করে ছুটছে সে। প্রবল মারে মাটিতে গড়াগড়ি বিপক্ষের একজন। ঠিক সেই মুহূর্তেই পর্দায় ফুটে ওঠে তাঁর মুখ। কৃষ্ণেন্দু। কুঞ্চিত, সামান্য এলোমেলো চুল। ক্লেটনের মারকুটে ভঙ্গি দেখে ঈষৎ অসন্তুষ্ট। পরক্ষণে ক্যামেরায় আবার অপ্রতিরোধ্য ক্লেটন। তাঁর বলিষ্ঠ লাথিতে বল ছিটকে গেল জালে। গো-ও-ওল!'মুভ অন ক্লেটন। মুভ অন…!' 'সপ্তপদী' সিনেমার সেই ঐতিহাসিক দৃশ্য।
তীব্র চিৎকারে ফেটে পড়ে মাঠের চারপাশ। আবার রিনা ব্রাউন। উল্লাসে মত্ত তাঁর মুখ। প্রিয় মানুষের সাফল্যের ছটায় উদ্ভাসিত। পরবর্তী অনেকখানি সময় যে ত্রিকোণ সম্পর্কের লড়াই আমরা দেখব পর্দাজুড়ে, এর সূচনা হয়ে যায় সেই মুহূর্তেই। যদিও আদপে ক্লেটন কিন্তু রিনার প্রেমিকই নয়। নিছকই ভালো বন্ধু। কিন্তু সে রহস্য উদ্ঘাটিত হতে এখনও দেরি। ততক্ষণ দর্শকের চোখের সামনে চলতে থাকে এক আশ্চর্য ডুয়েল। ক্লেটনের আভিজাত্য বনাম এক বাঙালির এলোমেলো চুল। আপাদমস্তক ছেলেটির মধ্যে রয়েছে নিখাদ মধ্যবিত্ত বাঙালিয়ানা। যে ডাক্তারটির সাইকেল চালনারত মূর্তি দিয়ে ছবির সূচনা, সে স্মৃতির কুয়াশা ছিঁড়ে সহসা বর্ষার কাদামাখা মাঠে আবির্ভূত।
এক সহ-ফুটবলার এসে তাঁকে বলে, 'ক্লেটন খুব মেরে খেলছে রে।' শুনে সে কেবল অস্ফুটে 'হুঁ' বলে। দৃষ্টি কিন্তু নিবদ্ধ ক্লেটনেরই দিকে। যেন অদৃশ্য আস্তিন গুটিয়ে তুমুল লড়াইয়ে নেমে পড়ার প্রস্তুতি। ঠিক সেই মুহূর্তে বাঙালি দর্শক রোমাঞ্চিত না হয়ে পারে না। এ বার প্রতিশোধ নেবে তাঁদের নায়ক। বাঙ্গালীর চিরকালীন 'গুরু'। এখনকার জিমচর্চিত, দক্ষিণী নায়কের কায়দায় জগঝম্প অ্যাকশন করা কোনও 'হিরো' কি কখনও পারবেন বাপ-জ্যাঠাদের থেকে শুরু করে আমাদের প্রজন্মকে এমন ভাবে বশ করে রাখতে!
কৃষ্ণেন্দু গোল শোধ করেন। ক্লেটনকে কনুইয়ের গুঁতো মেরে মাঠের বাইরে পাঠান। তারপর আবার গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। অবশেষে শেষের বাঁশি বেজে ওঠে। সবাই আনন্দে আত্মহারা। পর্দায় ফুটে ওঠে দর্শকের উল্লাস। সেই হর্ষধ্বনির ভিতর দিয়ে ফুটে ওঠে বাঙালির তৎকালীন যুবসমাজ। কালো, দীর্ঘ ছাতার খোলা-পড়ার মধ্যে দিয়ে যে আনন্দ প্রকাশের ভঙ্গি তা যেন কীভাবে সেই সময়ের মধ্যবিত্ত করানি সম্প্রদায়ের যৌথ পরিবার-তেল-মশলা-কলঘরের স্যাঁতসেঁতে গন্ধ বয়ে আনে মুহূর্তে। কালো চশমা পরিহিত পরিপাটি চুল আঁচড়ানো মুখগুলি খুশিতে উদ্বেল। তাঁদের নায়ক পেরেছে। পশ্চিমের সীমাহীন ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে। আসলে বাঙালি নয়, সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া ভারতবর্ষ।
ছবির ঘটনাটি ঘটছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ববর্তী বাংলাদেশে। তবুও তা যেহেতু নির্মিত হচ্ছে ১৯৬১ সালে, তাই কেবল তিনের দশক নয়, ইতিহাসের ভেতর থেকে উঁকি মেরে যাচ্ছিল যন্ত্রণাদীর্ণ সময়টিও। দেশভাগের রক্তাক্ত সময়কে পেরিয়ে একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে যে দেশ, যার সামনে শীঘ্রই চিন-পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের করাল থাবা— তারা পর্দার আলোছায়ায় আলোকিত করে তুলতে চাইছে তাদের বেঁচে থাকার এক অন্যতর উদ্যাপনকে। পর্দা জুড়ে এক আশ্চর্য দেবদুর্লভ মুখশ্রী এবং তাঁর পায়ের ফুটবল বাঙালিকে ভরিয়ে দিচ্ছে আনন্দের তিরতির স্রোতে। বাংলা সিনেমা ও বাঙালির ফুটবল কেমন মিশে যাচ্ছে এক আশ্চর্য সংমিশ্রণে।
'সপ্তপদী'। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসে অনুপ্রাণিত হয়ে সেলুলয়েডের ক্লাসিক। দশকের পর দশক পেরিয়ে এসেও কী তীব্র উত্তাপ ছড়িয়ে দেয় অনর্গল। রিনা-কৃষ্ণেন্দুর বাইকে সওয়ার বাঙালি আজও 'এই পথ যদি না শেষ হয়' প্রার্থনায় মশগুল। সময় বদলেছে। মধ্যবিত্ত বাঙালির প্রেমের দৃশ্যও বদলেছে। কিন্তু আজও সবার মনে কবেকার কৃষ্ণেন্দু ও রিনা ব্রাউন ক্যাফের উষ্ণ সন্ধ্যায় ঝিলিক দিয়ে যায়। তেমনই বঙ্গ সমাজের মনে থেকে গিয়েছে সেই সিনেমার ফুটবল ম্যাচ।
আরও পড়ুন: এই ছবিগুলি না-দেখলে আপনার উত্তম-জার্নি অসম্পূর্ণই থেকে যাবে...
আরও পড়ুন: Uttam Kumar: মৃত্যুর ৪৩ বছর পর বড়পর্দায় ফের জীবন্ত উত্তম কুমার, সৌজন্যে সৃজিত...
আদ্যন্ত তিনি চির মোহনবাগানী ছিলেন উত্তম কুমার। বহুবার এমনও হয়েছে, শুটিংয়ের মধ্যেই একফাঁকে মোহনবাগান মাঠে এসে খেলা দেখে গিয়েছেন। যদিও পেশাদার জীবনের মধ্যগগনে আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার কারণে মাঠে যেতে পারতেন না। এহেন উত্তমের প্রবল শখ ছিল একজন ফুটবলারের বায়োপিকে অভিনয় করা। সেটি আর হয়ে ওঠেনি। কারণ তেমন চরিত্র পাননি মহানায়ক। যদিও চুনী গোস্বামীর খেলার প্রবল অনুরাগী ছিলেন উত্তম।
'সপ্তপদী'-র মতো জনপ্রিয় সিনেমায় কৃষ্ণেন্দু চরিত্রটিতে চুনীর পায়ের কাজই দেখানো হয়েছে। তবে সেই সিনেমার ফুটবল ম্যাচের দৃশ্য শ্যুটিং করার আগে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। আসলে গোঁড়া সবুজ-মেরুন সমর্থক উত্তম সেই সিনেমায় ইস্টবেঙ্গলের লাল হলুদ জার্সি পরে অভিনয় করতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন সবুজ মেরুন জার্সি পরে অভিনয় করতে। কিন্তু বসুশ্রী সিনেমার মালিক মন্টু বসু ওই শ্যুটিং করেছিলেন ইস্টবেঙ্গল মাঠে গিয়ে। এমনকি উত্তম যেন লাল হলুদ জার্সি পরেই অভিনয় করেন, সেটি নিয়ে জেদ ধরেন নায়িকা সুচিত্রা সেন।
এদিকে সুচিত্রা আবার ইস্টবেঙ্গল সমর্থক ছিলেন। তিনি উত্তমকে বলেন, 'তুমি যদি লাল-হলুদ জার্সি না পরে শ্যুটিং করো, তা হলে আমিও এই সিনেমা করব না।' 'মহানায়িকার' জেদের কাছে হার মেনেই লাল হলুদ জার্সি পরেন চিরকালীন 'মহানায়ক'।
তবে কয়েক বছর পরেই উত্তম তাঁর স্বপ্ন পূরণ করেন। ১৯৭১ সালে 'ধন্যি মেয়ে' সিনেমায় অভিনয় করার সময় প্রিয় ক্লাব মোহনবাগানের জার্সি গায়ে চাপিয়েছিলেন তিনি। হাড়ভাঙার সেই বিখ্যাত শিল্ডের স্মৃতি এখনও মনে রেখেছে বঙ্গ সমাজ।
শুধু আর্জেন্টিনা নয়, বাঙালির নয়নের মণি লিওনেল মেসি পেনাল্টি মিস্ করা মাত্র বাঙালির স্মৃতিতে সজীব কবেকার 'ধন্যি মেয়ে'-এর, উত্তমকুমার...! ফেসবুকে-হোয়াট্সঅ্যাপে ঘুরপাক খাওয়া 'মিম' তথা মজার ছবিতে, পাশাপাশি মেসি ও উত্তমকুমার। উত্তমকুমার বলতে অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের ছবি 'ধন্যি মেয়ে'-এর সর্বমঙ্গলা ক্লাবের জাঁদরেল কর্তা কালীগতিবাবু। মেসি এখানে তাঁর টিমের স্ট্রাইকার বগলা ওরফে বগা। পাশাপাশি ছবিতে মেসিরূপী বগার উদ্দেশে উত্তম ওরফে কালীগতিবাবুর বাণী: 'বগা বাইরে মার, পেনাল্টিতে আমরা গোল দিই না!'
রসিক বাঙালির মগজের পোকা এখনও নড়ে ওঠে। 'ধন্যি মেয়ে'-এর বিখ্যাত সিনে বগা ওরফে পার্থ মুখোপাধ্যায়কে পেনাল্টি বাইরে মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন সর্বমঙ্গলার কালীগতি ওরফে উত্তমকুমার। মেসির পেনাল্টি মিস উপলক্ষে সেই দৃশ্যই উঠে আসে। বিশ্বকাপের সৌজন্যে বাঙালি আচমকাই মোহন-ইস্ট, ঘটি-বাঙাল, তৃণমূল-সিপিএম, উত্তম-সৌমিত্র— সব ভুলে এখন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। তখনও রসিকতার দাবি মেনেই আছড়ে পড়ছে সাবেক বাংলা সিনেমার অনুষঙ্গ। উত্তম ওরফে কালীগতিবাবুর বাণী: 'বগা বাইরে মার, পেনাল্টিতে আমরা গোল দিই না!'
কিন্তু উত্তমের মধ্যে ফুটবলপ্রেম কীভাবে জন্ম নিল? ১৯৫১-৬২ সাল, এই সময় ভারতীয় ফুটবল সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছিল। '৬১ ও '৬২ সালে এশিয়ান গেমসে সোনা। এর আগে '৫৬ সালে অলিম্পিক্সে চতুর্থ। তাই, ভারতীয় ফুটবলের সেই অনুপম সাফল্যের সময়ে (যে সাফল্যে বাঙালিদের অবদান নিয়ে আর নতুন করে কিছু বলার নেই), কৃষ্ণেন্দুর পায়ে ফুটবলই যে সবচেয়ে ভালো, কাদামাখা সেই খেলাই যে সবচেয়ে বেশি উল্লাস বয়ে আনবে সেটাই তো স্বাভাবিক। বাঙালির রোমান্টিক নায়ক কাদা মাঠেই দাপিয়ে বেড়ান। আর বাঙালি উল্লাসে ফেটে পড়ে।
সময় গড়ায়। এর ঠিক দশ বছর পর। বাঙালির ফুটবল পাগলামির শ্রেষ্ঠ দশক। ‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল’ মান্না দে-র জন্য গাইতে চলেছে যুবসমাজ। হাড়ভাঙা গ্রামে ল্যাংচেশ্বর স্মৃতি চ্যালেঞ্জ শিল্ড খেলতে। ফুটবল এখানে কেবল নায়ক-নায়িকার প্রথম দর্শনের মুহূর্তকে প্রতিনিধিত্ব করে না। বরং সে নিজেই 'হিরো'! এবং উত্তম কুমার। আবার তিনি। মাঝের দশ বছরে শরীরে মেদ জমে চেহারা পৃথুল। নায়কের দাদা হওয়ার কারণে নাকের ডগায় গজিয়ে উঠেছে 'অ্যান্টি গ্ল্যামারাস' গোঁফ। তবুও তিনি। এ ছবির দ্বিতীয় ইউএসপি। নাকি প্রথম? ফুটবলকে টপকে?
শিব-ঠাকুরের সঙ্গে ফুটবল খেলতে খেলতে যিনি আবিষ্কার করেন স্বপ্নের ঘোরে গিন্নিকেই পদাঘাত করে ফেলেছেন ফুটবল ভেবে। এই একটি দৃশ্যই যেন সত্তরের বাঙালির ফুটবল ম্যানিয়াক চরিত্রকে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়। শোনা যায়, উত্তম কুমার এ মাঠে ফুটবল খেলবেন শুনে আশপাশের গ্রাম থেকে কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন শ্যুটিং স্পটে। কোনও মতে পালিয়ে বেঁচেছিলেন মহানায়ক!
একদিকে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান-মহামেডান। অন্যদিকে 'মহানায়ক'। বাঙালির শ্রেষ্ঠ অবসর যাপন। রক থেকে বাড়ির অন্দরমহল। ফুটবল আর উত্তম কুমার। উত্তাল রাজনীতির ভয়ংকর এই সময়ে বাঙালির অন্যতম অক্সিজেন। অবশেষে ১৯৮০। জুলাই মাস। ২৪ তারিখ। কেঁপে উঠল বাঙালি। উত্তম নেই! গোটা টালিগঞ্জ পাড়া যেন ভূমিকম্পে ধ্বংসপ্রায়। এমন মানুষ চলে গেলেন! কীভাবে চলবে ইন্ড্রাস্ট্রি? কার মুখের দিকে তাকিয়ে বানানো হবে ছবি?
কী আশ্চর্য সমাপতন! পরের মাসের ১৬ তারিখ। ফুটবল দেখতে এসে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল মানুষ। বাঙালি আত্মসমালোচনায় গর্জে উঠল, এ কেমন খেলা? এ কেমন পাগলামি? প্রাণের চেয়েও মূল্যবান প্রিয় দলের প্রতি উন্মাদনা! আশ্চর্য অন্ধকার যেন ঘনিয়ে এসেছিল চারপাশে। তবে কালের নিয়মে ফের দুনিয়া চলছে নিজের গতিতে। যদিও বাংলা ও বাঙ্গালীর মনে এখনও একই ভাবে রাজত্ব করছেন কৃষ্ণেন্দু ও কালীগতিবাবুর মতো কালজয়ী চরিত্র।