নিজস্ব প্রতিবেদন-  একদিন, দুদিন নয়। টানা ৭২ দিন তিনি বিমানবন্দরে বন্দি। এই ফুটবলারের করুণ কাহিনির কথা শোনার পর হলিউডে 'দ্য টার্মিনাল' সিনেমার গল্প মনে পড়ে যেতে পারে অনেকের। এমনিতে করোনাভাইরাসে প্রকোপ কমাতে লকডাউনের জেরে রোজই বহু মানুষের দুর্ভোগের কথা জানা যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকদের অবস্থা সব থেকে করুণ। লকডাউনের পর থেকে খাবার নেই, টাকা নেই তাঁদের কাছে। মালিক হাত তুলে নিয়েছে। বাড়ি থেকে কয়েক হাজার কিমি দূরে শহরে কাজ করতে এসে তাঁদের যেন চরম শাস্তি ভোগ করতে হল! তবে ঘানার ফুটবলার র‌্যান্ডি জুয়ান মুলারের ভোগান্তিও কম হয়নি। ভারত সফর তিনি হয়তো সারাজীবন মনে রাখবেন। ২৩ বছর বয়সী এইউ ফুটবলার মুম্বই বিমানবন্দরে বন্দি থাকলেন টানা ৭২ দিন। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কেরালার ওআরপিসি স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে খেলার জন্য ভারতে এসেছিলেন মুলার। গত বছর নভেম্বর মাসে ছমাসের ভিসা নিয়ে এদেশে এসেছিলেন। এর পর ২১ মার্চ তিনি বাড়ি যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে যান। তার পর থেকে সেখানেই বন্দি। গত বুধবার বান্দ্রার একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁকে। মহারাস্ট্রের পর্যটন ও পরিবেশ মন্ত্রী আদিত্য ঠাকরে তাঁর দুর্দশার কথা জানতে পেরে তাঁকে উদ্ধার করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় মুলারের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর হইচই পড়ে যায়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মী ও স্টাফদের সহায়তায় দিন কাটছিল তাঁর। বিমানবন্দরের শৌচালয়ে স্নান, জামা কাপড় ধুয়েছেন তিনি। কোনওদিন সিঙ্গারা, কোনোদিন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া ফ্রায়েড রাইস খেয়ে দিন কাটছিল মুলারের। কখনও বাগানে ঘুরতেন। কখনও আবার বই পড়েছেন। এভাবেই ৭২ দিন কাটিয়েছেন তিনি।


আরও পড়ুন- ভারতে বর্ণবিদ্বেষের শিকার ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার, 'কালু' বলে ডাকা হত তাঁকে


ঘানার কুমাসিতে বাড়ি মুলারের। তিনি বলছিলেন, ''ছমাসের ভিসা ছিল আমার। একা ম্যাচ খেললে দুই থেকে তিন হাজার টাকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনও ম্যাচ খেলতে পারিনি। এদিকে, এখানে এসে থাকা খাওয়া বাবদ দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। হাতে টাকা ছিল না। তাই দেশে ফেরার সিদ্ধা্ন্ত নিই। কিন্তু এর পর লকডাউন শুরু হয়ে যায়। আমাকে বিমানবন্দরে যেতে বলে মুম্বই পুলিস। সেখানে অবশ্য আমার জন্য কোনও ব্যবস্থা ছিল না। প্রথমে সিআইএসএফ আমাকে বিমানবন্দরে থাকতে দিতে রাজি ছিল না। কিন্তু আমারও কিছু করার ছিল না। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আমাকে খেতে দিত। কিছু টাকাও দিত। এর পর যাত্রীদের থেকে বই পাই। সেগুলো পড়ে আর বিমানবন্দরে ঘুরে দিন কাটে। নিজেকে বোঝাতে থাকি, এই দুঃসময় একদিন কেটে যাবে। একজন যাত্রী আমাকে 'বি ইয়োর ওউন থেরাপিস্ট'  বই দেন। ওটা পড়ে কিছুটা অনুপ্রেরণা পাই। হতাশা দূর করার চেষ্টা করি। আমার অবস্থা স্টিভেন স্পিলবার্গের দ্য টার্মিনাল সিনেমার মূল চরিত্র টম হ্যাংকসের মতো হয়ে গিয়েছিল। এর পর একদিন নিজের অবস্থার কথা লিখে টুইট করি। আদিত্য ঠাকরে আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন।''