সব্যসাচী বাগচী: প্রায় পৌনে চার ঘণ্টার ঠাসা বিনোদন। ওয়েব সিরিজের যুগে আমরা সবাই একাধিক থ্রিলার দেখে অভ্যস্ত। গত দুই বছরে করোনাকালে সেটা আরও বেড়েছে। তবে শুক্রবার ইডেন গার্ডেন্সের বুকে ঘটে যাওয়া ম্যাচটাও থ্রিলারের চেয়ে মোটেও কম নয়। শেষ পর্যন্ত সেই থ্রিলার ৮ রানে জিতে একদিনের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজও পকেটে পুরে নিল ভারতীয় দল। তাও আবার এক ম্যাচ বাকি থাকতে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ভারতের রান তাড়া করতে গিয়ে ১৮ ওভার পর্যন্ত ম্যাচটা ক্যারবিয়ানদের হাতে ছিল। তৃতীয় উইকেটে নিকোলাস পুরান ও রভমেন পাওয়েল মাত্র ৬০ বলে ১০০ রান যোগ করে ম্যাচটা জিতিয়েই দিচ্ছিলেন। ভারত হেরে গেলে অবধারিতভাবে গত ম্যাচের সেরা রবি বিশ্নোই ও বহু যুদ্ধের নায়ক ভুবনেশ্বর কুমারকে ‘ভিলেন’ বানিয়ে দেওয়া হত। ক্যারিবিয়ান ইনিংসের ৯.১ ওভারের মাথায় চাহালের বলে পুরানের সহজ ক্যাচ ছাড়েন বিশ্নোই। সেই সময় ১ রানে থাকা পুরান ৪১ বলে ৬২ রান করে ১৯তম ওভারে ভুবির বলে ফিরে যান। ১৬.৫ ওভারে আবার ক্যাচ মিস। এ বার নিজের বলে পাওয়েলের ক্যাচ ফেলে দেন ভুবি। রাগে বলে লাথি মারেন রোহিত। তবে পাওয়েল ৩৬ বলে ৬৮ রানে অপরাজিত থাকলেও দলকে জেতাতে পারেননি।



 কিন্তু শেষ দুই ওভারে বদলে গেল সব হিসেব। ১২ বলে বাকি ছিল ২৯। ১৯তম ওভারে বল হাতে নিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। মাত্র চার রান দিয়ে তুলে নিলেন পুরানকে। ফলে শেষ ওভারে দরকার ছিল ২৫। হর্ষল প্যাটেল শেষ ওভারে দুটি ছয় খেলেন। একটা বল তো মাঠের বাইরেও চলে যেতে পারত। তবে এতে বেগ পেতে হয়নি।


গত কয়েক মাস ধরে সংবাদমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া সব জায়গায় চর্চা হয়েছে শুধু তাঁকে নিয়েই। কেন তিন অঙ্কের রান পাচ্ছেন না বিরাট কোহলি? ‘তাজ’ হারানো লোকটা কি মানসিকভাবে ১০০ শতাংশ দিতে পারছেন না? এমন হাজারো প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে ক্রিকেট মহলে। তবে শুক্রবারের ইডেন গার্ডেন্সে এমন বহু প্রশ্নেরই জবাব দিয়ে দিলেন ‘কিং কোহলি’।


ঘড়ির কাঁটায় তখন সন্ধে ৭.১১ মিনিট। ইশান কিষান দ্রুত ফিরতেই ক্রিজের দিকে তাঁর আগমন। গত ম্যাচের মতো এ বারও তিন নম্বরে এলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। বর্তমান অধিনায়কের সঙ্গে জুড়লেন ৪৯ রান। ভাবা গিয়েছিল দুই সিনিয়র মিলেই ক্যারিবিয়ান বোলিংকে বুঝে নেবেন। কিন্তু সেটা হল না। রোহিত ফের একবার আশা দেখিয়ে ফিরে গেলেন ১৯ রানে। তবে তাই বলে কোহলির দায়িত্বশীল ইনিংসে ব্রেক লাগেনি। ৪১ বলে ৫২ রানের ইনিংসে বুঝিয়ে দিলেন, বিরাট কোহলি আছেন, বিরাট কোহলিতেই। 



আরও পড়ুন: INDvsWI: ৩০তম অর্ধ শতরানের পর কী বললেন Virat Kohli?


আরও পড়ুন: INDvsWI: ইডেন গার্ডেন্সে কোন বিশেষ নজির গড়লেন Kieron Pollard? জানতে পড়ুন


২০১৯ সালের ১৯ মার্চ এই মাঠের বাইশ গজে জ্বলে উঠেছিলেন বিরাট। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই ম্যাচে আগুন ঝড়াচ্ছিলেন মহম্মদ আমির, ওয়াহাব রিয়াজ। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দী পাকিস্তানকে উড়িয়ে সে দিন ৩৭ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত ছিলেন বিরাট। এর তিন বছর পর ফের নন্দন কানন ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে তাঁর অর্ধ শতরানের সাক্ষী থাকল।


নিজের স্বাভাবিক ছন্দে ধরা ৭টি চার এবং একটি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৩৯ বলে নিজের টি-টোয়েন্টি  কেরিয়ারের ৩০তম অর্ধ শতরান পূর্ণ করে ফেললেন তিনি। ছুঁলেন রোহিতকে। তবে ভাগ্যও সহায় ছিল। যে বলটিতে ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি অর্ধশতরান করলেন, সেটি অবশ্য ক্যাচও হতে পারত। লং অনে থাকা জেসন হোল্ডার লাইনে দাঁড়ালে অবধারিতভাবে বল হাতে পেতেন। যাই হোক অর্ধ শতরানের পরই রস্টন চেজের শিকার হন বিরাট।


ফিরে যাওয়ার সময় একটা মঞ্চ গড়ে দিয়েছিলেন বিরাট। সেই মঞ্চের উপর মেজাজে ব্যাট চালিয়ে দলের ভিত আরও মজবুত করলেন ঋষভ পন্থ ও ভেঙ্কটেশ আইয়ার। কারণ অফ স্পিনার রস্টন চেজ ছাড়া বাকিরা একেবারে নিম্নমানের। কলকাতা ময়দানের দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাবের বোলারদের লাইন লেন্থও এত খারাপ নয়। নাগাড়ে লেগ স্টাম্পের বাইরে ও পায়ের গোড়ায় বল ফেলে গেলে এই ফরম্যাটে কোনও ব্যাটার চুপ থাকবে না। আর পন্থ-ভেঙ্কটেশ অনেকটা ‘ডিনামাইট’-এর মতো। বিস্ফোরণ ঘটলে তো বিপক্ষ ঘায়েল হবেই।



পঞ্চম উইকেটে পন্থ-ভেঙ্কটেশের জুটিতে উঠল ৭৬ রান। এরমধ্যে শেষ পাঁচ ওভারে এল ঝড়ের গতিতে ৬২ রান। ১৮ বলে ৩৩ রান করে ফিরলেন গত প্রথম ম্যাচে ছক্কা মেরে জেতানো ভেঙ্কটেশ। বুধবার এই মাঠেই খারাপ শট খেলে আউট হয়েছিলেন পন্থ। হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের ধাতানি হজম করতে হয়েছিল। সেই পন্থ এ দিন চিরাচরিত আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট ঘোরালেও অনেক সংযমী।


বিসিসিআই-এর সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে পছন্দ করেন। এহেন মহারাজের সামনে, তাঁর ‘হোম গ্রাউন্ড’-এ মারলেন ‘বাপী বাড়ি যা’ মেজাজে ছয়। ভারতীয় ইনিংসের ১৯তম ওভারে জেসন হোল্ডারের ফুলটস বল আছড়ে পড়ল তাঁর শরীরে। ব্যাট চালালেন তিনি। বটম হ্যান্ড বেরিয়ে গেল। একহাতেই ব্যাট ঘোরালেন। মনে করিয়ে দিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির হেলিকপ্টার শট। পন্থের একহাতের শটই উড়ে গেল মিড উইকেট গ্যালারিতে।


পন্থের ছক্কা দেখে তাজ্জব সকলে। ব্যাট স্যুইংয়ে কতটা জোর থাকলে এক হাতেও এত বড় ছক্কা মারা যায়, তা নিয়েই সর্বত্র আলোচনা। সেই শটের ভিডিও ভাইরাল হল সোশ্যাল মিডিয়ায়। অপরাজিত রইলেন ২৮ বলে ৫২ রান করেন তিনি। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটের ১৮৬ রান তোলে ভারত।  


৫০ ওভারের ফরম্যাটে হোয়াইটওয়াশ করা হয়ে গিয়েছে। এ বার রবিবার টি-টোয়েন্টি সিরিজেও চুনকাম করার পালা।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)