সব্যসাচী বাগচী 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আইপিএল-এর (IPL) ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত ১৪৬টি ম্যাচে ২৪৬৬ রান। সঙ্গে রয়েছে ১টি শতরান ও ১১টি অর্ধ শতরান। এগুলো একেবারেই শুকনো তথ্য। আরও চমকে দেওয়া পরিসংখ্যান হল, ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha) হলেন বীরেন্দ্র শেহওয়াগ (Virender Sehwag), পৃথ্বী শাহের (Prithvi Shaw) পর তৃতীয় ভারতীয় ব্যাটার যিনি ক্রোড়পতি লিগে পাওয়ার প্লে-তে ১০০০ রান পূর্ণ করে ফেলেছেন। তবুও বরাবরের মতো তিনি নির্লিপ্ত। গুজরাত টাইটান্সের (Gujarat Titans) ডাকাবুকো ওপেনার ও অভিজ্ঞ উইকেটকিপার সম্পর্কে আরও একটা চোখ কপালে তুলে দেওয়া পরিসংখ্যান আছে। বাংলা (Bengal) থেকে 'ব্রাত্য' হয়ে যাওয়া 'সুপারম্যান' ৩৯ বছরের দোরগোড়ায় এসেও বিরাট কোহলি (Virat Kohli), রোহিত শর্মা (Rohit Sharma), মহেন্দ্র সিং ধোনি (Mahendra Singh Dhoni), শিখর ধাওয়ান (Shikhar Dhawan), ও দীনেশ কার্তিকের (Dinesh Karthik) সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আসছেন। তিনি হলেন ষষ্ঠ ভারতীয় যিনি সেই ২০০৮ থেকে এখনও আইপিএল জগতে বিচরণ করছেন। এমন নজির গড়ার পরেও বিশেষ প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি নন। কারণ তিনি যে খারাপ সময় খুব কাছ থেকে দেখেছেন। 


এহেন পাপালির গুজরাত এবার জোড়া জয় পেয়ে টগবগ করে ফুটছে। আগামী ৯ এপ্রিল নিজেদের ঘরের মাঠ আহমেদাবাদে গতবারের চ্যাম্পিয়নদের প্রতিপক্ষ কলকাতা নাইট রাইডার্স (Kolkata Knight Riders)। এর আগে জি ২৪ ঘন্টার সঙ্গে অকপট আলোচনায় ভারতের (Team India) হয়ে ৪০টি টেস্ট খেলেও, বয়সের অজুহাতে থামিয়ে দেওয়া ঋদ্ধি। 


প্রশ্ন: বীরেন্দ্র শেহওয়াগ, পৃথ্বী শাহের পর আপনি তৃতীয় ভারতীয়, যিনি পাওয়ার প্লে-তে ১০০০ রান পূর্ণ করে ফেলেছেন। আপনার অনুভূতি? 


ঋদ্ধি: সত্যি বলতে আমি তথ্য জানতাম না। শুনে ভালো লাগল। আসলে ছোটবেলা থেকেই সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ওপেন করে আসছি। চালিয়ে খেলে দ্রুত রান তোলাই আমার সহজাত। গুজরাত ছাড়া আইপিএল-এ বাকি যে দলে খেলেছি, সেখানে এবভাবেই দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেছি। কারণ পাওয়ার প্লে-কে কাজে লাগানোই একজন ওপেনারের কাজ। আর সেটাই এখনও করে যাচ্ছি।  


প্রশ্ন) বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, মহেন্দ্র সিং ধোনি, শিখর ধাওয়ান ও দীনেশ কার্তিকের পর আপনি ষষ্ঠ ভারতীয় যিনি টানা ১৬টা আইপিএল খেললেন। ফিটনেসের রহস্য? 


ঋদ্ধি) এই চার ভারতীয় ছাড়া এই তালিকায় আরও কয়েকজন বিদেশিও আছে। তবে যাই হোক, এত বছর লাগাতার খেলার জন্য সঠিক সময় ট্রেনিংয়ের সঙ্গে মানসিক দৃঢ়তা থাকা খুব জরুরি। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে ওয়ার্ক এথিক্স ও নুন্যতম পারফরম্যান্স। সেগুলো বজায় রাখতে পেরেছি বলেই এতগুলো ফ্রাঞ্চাইজিতে খেলতে পারছি। আর কত বছর খেলতে পারি, সেটা সময় বলবে। 



প্রশ্ন: এবারের আইপিএল-এ 'ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার'-এর নিয়ম আপনার মন্তব্য? 


ঋদ্ধি: এর আগে ক্রিকেটে 'সুপার সাব' নিয়ম চালু ছিল। এই 'ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার'-এর নিয়মও আমার কাছে অনেকটা একই রকম। এই নিয়মে ব্যাটাররাই বড়তি সুবিধা পাচ্ছে। যদিও কেকেআর বনাম আরসিবি ম্যাচে দেখলাম সুয়শ শর্মা 'ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার' হিসেবে ৩০ রানে ৩ উইকেট নিল। তাই এই নিয়মের জন্য প্রতিটা দলই সুবিধা পাচ্ছে। 


প্রশ্ন: শুভমন গিলের সঙ্গে গত বছর থেকে ওপেন করছেন। কেমন উপভোগ করছেন এই জুটি?  


ঋদ্ধি: এই মুহূর্তে সব ফরম্যাটে ভারতের অন্যতম সেরা ওপেনার। তিন ফরম্যাটেই কতটা ভালো ছন্দে আছে, সেটা তো পরিসংখ্যান খুললেই দেখতে পারবেন। সেইজন্য ওর সঙ্গে ব্যাটিং করা খুব সহজ। শুভমন ক্রিজে জমে গেলে, আমি আরও নিশ্চিন্ত হয়ে যাই। আরও হাত খুলে ব্যাট করতে পারি। কারণ আমি জানি ও বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকলে বড় রান আসবেই। এভাবেই আমরা খেলছি। 


প্রশ্ন: পাওয়ার প্লে-তে চালিয়ে খেলার মন্ত্র কী? 


ঋদ্ধি: কিছুই না। বল দেখে মারলেই হল। মোদ্দা ব্যাপার হল পাওয়ার প্লে-তে কোনও দল যদি ৬০-৭০ রান তুলে দিতে পারে, তাহলে সেই দলের জয়ের সম্ভবনা বেড়ে যায়। একইসঙ্গে সেই দলের বাকি ব্যাটাররা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে ও পরের দিকে হাত খুলে খেলতে পারেন। সেই ভেবেই আমি ক্রিজে যাই। 


প্রশ্ন: অন্যতম সিনিয়র হিসেবে এবার গুজরাত টাইটান্সে আপনার ভূমিকা কী? 


ঋদ্ধি: আমি আগের মতোই আছি। সময় ও পরিস্থতি বদলে গেলেও আমার খেলায় কিংবা মানসিকতায় কোনও বদল আসেনি। ভারতীয় দলের সঙ্গে আগে যেখানে খেলেছি, সেখানে দলের প্রয়োজনে নিজের মতামত দিয়েছিলাম। এবারও দল চাইলে নিজের মতামত দিতে পিছপা হই না। এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি। আর একটা বিষয় হল আমি আগের মতোই সবসময় দলের জয়ের কথাই ভাবি। 


প্রশ্ন: গুজরাত টিম ম্যানেজমেন্ট আপনাকে এবার আলাদা কিছু দায়িত্ব দিয়েছে?


ঋদ্ধি: আমাদের দলে সিনিয়র-জুনিয়র ভেদাভেদ নেই। ম্যাচ থেকে অনুশীলন, ড্রেসিংরুম সেলিব্রেশন থেকে অবসর সময় মজা করা, আমার সবাই একজোট হয়েই নিজেদের সাফল্য ও ব্যর্থতা ভাগ করে থাকি। আর এটাই আমাদের সাফল্যের মূল মন্ত্র। 


আরও পড়ুন: Suyash Sharma, KKR vs RCB: নাইট সংসারে ফের 'মিস্ট্রি স্পিনার'! অধিনায়কের অচেনা নতুন তারকা সুয়শ শর্মা কে?


আরও পড়ুন: Shah Rukh Khan And Virat Kohli, KKR vs RCB: ইডেনে লজ্জার হারের পরেও শাহরুখের সঙ্গে বিরাটের 'ঝুমে জো পাঠান' ডান্স! ভিডিয়ো হল ভাইরাল



প্রশ্ন: গত মরসুমে আপনি ত্রিপুরার হয়ে খেলেছেন। এর আগে আপনি বাংলার হয়ে খেলতেন। দুই দলের বোলিংয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। ত্রিপুরার মতো দলের হয়ে খেলে, আইপিএল-এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পদ্ধতি কীভাবে নিয়েছেন? 


ঋদ্ধি: দেখুন ঘরোয়া ক্রিকেট ও আইপিএল একেবারে আলাদা। তাই দুই জায়গায় খেলার পদ্ধতি একেবারেই আলাদা। তবে এত বছর ধরে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যে কোনও পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয় না। তাছাড়া এবারের আইপিএল শুরু হওয়ার আগে আমাদের প্রস্তুতি খুব ভালোভবাবেই হয়েছে। সেটাও এবার কাজে লাগাতে পারছি। সঙ্গে বাকি নয় দলে কেমন বোলার আছে, তাদের বিরুদ্ধে সফল হওয়ার জন্য কীভাবে প্ল্যান করতে হয়, সেগুলোও মাথায় আছে। 


প্রশ্ন: হার্দিক পান্ডিয়া, ডেভিড মিলার, রাহুল তেওয়াটিয়া, রশিদ খানের মতো চার পাওয়ার হিটার মিডল ও লোয়ার মিডল অর্ডারে থাকার জন্য আপনি ওপেনার হিসেবে কতটা সুবিধা পাচ্ছেন? 


ঋদ্ধি: আমরা গত বছর দুই ওভারে ২৩, দুই ওভারে ৪০ রানও চেজ করেছি। এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে আমাদের ব্যাটিং কতটা শক্তিশালী। তাই আমরা যারা শুরুর দিকে ব্যাট করতে যাই, তারা অনেক খোলা মনে ব্যাট করতে পারি। 



প্রশ্ন: আপনি একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলেছেন। গুজরাতের সঙ্গে বাকিদের ফ্র্যাঞ্চাইজির কেমন তফাৎ দেখলেন? 


ঋদ্ধি: আমি এখনও পর্যন্ত পাঁচটি ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলে ফেলেছি। তবে আমার আইপিএল কেরিয়ারে সবচেয়ে সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি গুজরাত। কারণ এখানে সাপোর্ট স্টাফ থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্রিকেটার একে অন্যের সাহায্য করার জন্য মুখিয়ে থাকে। ড্রেসিংরুমে সবাই নিজের মতামত দেয়। একটা দলকে মাঠে সফল হতে গেলে, মাঠের বাইরে এই ব্যাপারগুলো থাকা খুব দরকার। এই নীতি বজায় রয়েছে বলেই আমরা গত বছর চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এবারও ট্রফি হাতে তোলার জন্য মুখিয়ে আছি। 


প্রশ্ন: আপনাদের বিরুদ্ধেই অভিষেক পোড়ল আইপিএল অভিযান শুরু করল। ওঁর ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন? 


ঋদ্ধি: অভিষেক ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দলে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে ছিল। সেখান থেকেই বোঝা যায় যে ওর মধ্যে প্রতিভা আছে। ঋষভ পন্থের বিকল্প হিসেবে দিল্লি ক্যাপিটালস ওকে দলে নিয়েছে। ওর যে যোগ্যতা আছে, সেটা কিন্তু প্রথম ম্যাচে কিছুটা হলেও প্রমাণ করেছে। এভাবে ধারাবাহিকভাবে খেলতে পারলে দিল্লিতে যোগ দেওয়া ওর জীবন বদলে দিতে পারে। ছেলেটার ব্যাটের হাত বেশ ভালো। দ্রুত রান তোলার ক্ষমতা আছে। এরসঙ্গে কিপিংটাও মন্দ করছে না। তাই আশাকরি অভিষেক আরও ভালো পারফর্ম করবে।  



(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)