RR vs LSG, IPL 2023: আবেশ খান-মার্কাস স্টোইনিসের দুরন্ত কামব্যাক, রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে রাজস্থানকে ১০ রানে হারাল লখনউ
প্রথম ১০ ওভারে উইকেট না পড়লেও রানের গতি খুব বেশি ছিল না। মাঝে মাঝে দু’একটা বড় শট এলেও বেশির ভাগ সময় দৌড়ে রান নেওয়ার উপরেই ভরসা করতে হচ্ছিল লখনউয়ের দুই ওপেনারকে। ৩২ বলে ৩৯ রানের মাথায় রাহুলকে ফেরান জেসন হোল্ডার।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: দুটি দলের কাছে লড়াইটা দু'রকম ছিল। ঘরের মাঠে রাজস্থান রয়্যালসের লক্ষ্য ছিল চলতি আইপিএল-এর বাইশ গজের এই যুদ্ধ জিতে শীর্ষস্থান ধরে রাখা। অন্যদিকে সঞ্জু স্যামসনের দলকে হারালে দ্বিতীয়স্থান ধরে রাখার পাশাপাশি লখনউ সুপার জায়ান্ট জয়ের সরণীতে ফিরতে পারত। তবে শুরুটা ভালো করেও পারল না রাজস্থান। বরং কম রানের পুঁজি হাতে নিয়েও দুরন্ত লড়াই করল লখনউ সুপার জায়ান্ট। ফলে দাপুটে কামব্যাক করে প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচ ১০ রানে জিতে নিল কে এল রাহুলের দল। ব্যাট হাতে ১৬ বলে ২১ রানের পর বলেও নজর কাড়লেন মার্কাস স্টোইনিস। তিনি নিলেন ২৮ রানে ২ উইকেট। তবে আবেশ খানের অবদানও কম নয়। ২৫ রানে ৩ উইকেট নিলেন এই জোরে বোলার।
যদিও ১৫৫ রান চেজ করতে নেমে শুরু থেকেই কে এল রাহুলের দলের বোলারদের বুঝে নিয়েছিলেন জস বাটলার ও যশস্বী জয়সওয়াল। দুই ওপেনারের জুটি দেখে মনে হচ্ছিল যে, রাজস্থানের জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে নিজের দমে খেলা ঘুরিয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার। আর তাই ঘরের মাঠে রাজস্থানের 'হল্লাবোল' বলা হল না। ৬ উইকেটে ১৪৪ রানেই আটকে গেল রাজস্থান। এই হারের পরেও শীর্ষস্থান ধরে রাখলেও, সঞ্জু স্যামসনের দলকে বড় শিক্ষা দিয়ে গেল কে এল রাহুলের দল।
লক্ষ্য কম ছিল। তাই মারমুখী মেজাজের সঙ্গে উইকেটের চরিত্র বুঝে ব্যাট করছিলেন বাটলার ও যশস্বী। পাওয়ার প্লে-তে ৪৭ রান উঠলেও, দু'জন বাড়তি ঝুঁকি নিতে রাজি ছিলেন না। ইংল্যান্ডের সীমিত ওভারের অধিনায়ক একটা দিক আগলে রাখলেও, তরুণ যশস্বী ছিলেন মারমুখী মেজাজে। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত ৩৫ বলে ৪৪ রানে আউট হলেন। তাঁকে ফেরান মার্কাস স্টোইনিস। ৮৭ রানে রাজস্থান প্রথম উইকেট হারাতেই ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছিল লখনউ। দলগত ৯৩ রানের মাথায় বাটলারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির জেরে রান আউট হয়ে ফিরলেন সঞ্জু। ৯৩ রানে ২ উইকেট চলে যেতেই কিছুটা চাপে পরে যায় রাজস্থান।
সেখান থেকে দলকে তুলে আনার চেষ্টা করছিলেন বাটলার। তবে দ্রুত রান তোলার লক্ষ্যে বড় শট মারতে গিয়েই করলেন ভুল। সেই মার্কাস স্টোইনিসের বলেই তাঁর ক্যাচ ধরলেন রবি বিষ্ণোই। বাটলার বিদায় নিতেই জোড়া সাফল্য পেল লখনউ। বাটলার বিদায়ের কিছুক্ষণের মধ্যে রাজস্থানকে আরও ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিলেন আবেশ খান। রাহুল তাঁর হাতে বল তুলে দিতেই শিমরন হেটমেয়ারকে ফিরিয়ে দেন আবেশ। ফলে একটা সময় ফেভারিট মনে করা রাজস্থান ১০৪ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে নিজেদের সমস্যা আরও বাড়িয়ে নেয়।
তবে পিছিয়ে গেলেও হাল ছাড়তে নারাজ ছিলেন দেবদত্ত পাড্ডিকাল। রিয়ান পরাগকে সঙ্গে নিয়ে পালটা মার দিতে শুরু করেন। ১৮তম ওভারে স্টোইনিসের বিরুদ্ধে ১৩ রান নেন এই বাঁহাতি। ফলে দরকার ছিল ১২ বলে ২৯ রান। কিন্তু ১৯তম ওভারে ৯ রান দেন নবীন উল হক। ফলে শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৯ রান। তবে আবেশের কাছে পারলেন না দেবদত্ত। তৃতীয় বলে ভয়ংকর হয়ে ওঠা দেবদত্তকে (২১ বলে ২৬) ফেরাতেই ১০ রানে ম্যাচ জিতে যায় লখনউ।
খেলা শুরু হওয়ার আগে মনে হচ্ছিল যে জয়পুরের উইকেটে প্রচুর রান উঠবে। কিন্তু সব হিসেব বদলে লখনউয়ের ব্যাটারদের আটকে রাখলেন রাজস্থান রয়্যালসের বোলাররা। হাত খুলে খেলতে দিলেন না। ফলে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রান তুললেন কে এল রাহুলরা। প্রথম ওভার মেডেন করলেন বাঁ হাতি পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। পাওয়ার প্লে-র সুবিধা খুব একটা নিতে পারলেন না রাহুল ও কাইল মেয়ার্স।
প্রথম ১০ ওভারে উইকেট না পড়লেও রানের গতি খুব বেশি ছিল না। মাঝে মাঝে দু’একটা বড় শট এলেও বেশির ভাগ সময় দৌড়ে রান নেওয়ার উপরেই ভরসা করতে হচ্ছিল লখনউয়ের দুই ওপেনারকে। ৩২ বলে ৩৯ রানের মাথায় রাহুলকে ফেরান জেসন হোল্ডার। এরপর গত কয়েক ম্যাচের মতো এবারও ব্যর্থ লখনউয়ের মিডল অর্ডার আয়ুষ বাদোনি, দীপক হুডা রান পাননি। যদিও অর্ধশতরান করেন মেয়ার্স। কিন্তু আগ্রাসী ইনিংসের বদলে ৪২ বলে ৫১ রানে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান তিনি।
শেষ পর্যন্ত দলকে বড় রানে নিয়ে যাওয়ার সব দায়িত্ব গিয়ে পড়ে মার্কাস স্টোইনিস ও নিকোলাস পুরানের উপর। কিন্তু তাঁরাও বড় শট মারতে পারলেন না। ১৯তম ওভারে নিকোলাস পুরান নিজের দেশের হোল্ডারের বিরুদ্ধে ১৭ রান নেন। ফলে ১৫৪ রানে শেষ হয় তাদের ইনিংস। দাপট দেখিয়ে ২৩ রানে ২ উইকেট নেন অশ্বিন। বোল্ট, সন্দীপ শর্মা,যজুবেন্দ্র চাহাল ও হোল্ডার ১টি করে উইকেট নেন। তবে হাত সামান্য রানের পুঁজি থাকলেও, ম্যাচ জিতেই মাঠ ছাড়ল লখনউ। সৌজন্যে মার্কাস স্টোইনিস দুরন্ত বোলিং ও কে এল রাহুলের অধিনায়কত্ব।