নিজস্ব প্রতিবেদন: শনিবার রাতের পর থেকে ভারতীয় ফুটবলে একজনকে নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। তিনি কিয়ান নাসিরি। এই উদীয়মান দ্যূতি ও ঔজ্জ্বল্যে এখন আলোকিত দেশের ফুটবল মহল। ফুটবলপ্রেমীদের প্রায় সবারই এক আশা, বাইচুং ভুটিয়া, আইএম বিজয়ন, সুনীল ছেত্রীদের উত্তরসূরির খোঁজ বোধহয় এ বার পাওয়া যাবে। লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিং, ইশান পন্ডিতাদের উন্নতিতে সকলেই আশাবাদী। এ বার সেই তালিকায় ২১ বছরের কিয়ান ঢুকে পড়েছেন। এতে অবশ্য আখেরে লাভ হবে ভারতীয় ফুটবলেরই। ইগর স্টিমাচের ভারতীয় দলে যে গোল করার লোকের বড্ড অভাব।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

শনিবার ৬১ মিনিটে মাঠে নেমে ৬৪ মিনিটের মাথায় যে শটে গোল করেন কলকাতার কিয়ান, সেটাই ছিল সেই ম্যাচে তাঁর প্রথম বলে পা ছোঁয়ানো। প্রথম ছোঁয়াতেই বাজিমাত! সেই গোলে দলের হয়ে সমতা আনার পর ম্যাচের একেবারে শেষে চার মিনিটের মধ্যে পরপর দু’টি গোল করে যে কীর্তি স্থাপন করেন, তা এ দেশের ফুটবলপ্রেমীরা মনে রাখবেন বহু দিন। যেমন মনে রেখেছেন বাইচুং ভুটিয়াকে। ১৯৯৭-এর ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনালে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিকের জন্য। ২৫ বছর পরে এ বার আর এক ভারতীয় সেই একই কীর্তি স্থাপন করলেন।



তবে বাইচুং যখন এই মাইলস্টোন স্থাপন করেছিলেন, তখন তিনি ছিলেন ফুটবল জীবনের মধ্যগগনে। কিয়ান জ্বলে উঠলেন তাঁর প্রথম ডার্বিতেই। একই সঙ্গে অনেকগুলো নজিরও সৃষ্টি করলেন। তিনিই আইএসএল-এর সর্বকনিষ্ঠ হ্যাটট্রিকের নায়ক। এই লিগে আর কেউ পরিবর্ত হিসেবে নেমে হ্যাটট্রিক করতে পারেননি। এমনকি এটিকে মোহনবাগানের তিনি সবচেয়ে কমবয়সি স্কোরার।


ডার্বির এমন অভিষেক তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো। রবিবার কিয়ান বলেন, “ডার্বিতে নেমে হ্যাটট্রিক করাটা এখনও আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। ডার্বিতে গোল করার স্বপ্ন সবার থাকে, আমারও ছিল। তবে উইঙ্গার ও স্ট্রাইকারদের গোল করাটাই কাজ। আমি নিজের কাজটাই করেছি। তবে ইতিহাস নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না আমি। এখন আমার লক্ষ্য আরও বেশি সময় মাঠে থাকা। কোচের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে, উনি ডার্বির মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আমার ওপর ভরসা রেখেছেন। আমাদের মতো শক্তিশালী দলে জুনিয়রদের নিয়মিত জায়গা পাওয়া কঠিন। তাই আমাকে আরও পরিশ্রম করে দলে পাকা জায়গা করে নিতে হবে। এখানেই থেমে গেলে চলবে না। এর পরে যখনই সুযোগ পাব, ভাল খেলতে হবে”।


আরও পড়ুন: কেমন আছেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত? জানতে পড়ুন


আরও পড়ুন: ISL 2021-22: Kiyan Nassiri: ছবিতে দেখুন ডার্বির রঙ সবুজ-মেরুন করে দেওয়া বিস্ময় বালকের সফর


আটের দশকের শুরুর দিকে কলকাতার ময়দান মাতিয়েছিলেন দুই ইরানিয়ান ফরোয়ার্ড জামসেদ নাসিরি ও মজিদ বিসকার। মজিদ দেশে ফিরে গেলেও জামসেদ কলকাতাতেই রয়ে যান। এ দেশের নাগরিকও হয়ে যান। এহেন জামসেদ পুত্র কিয়ান তাঁর শরীরে বাবার দেখানো পথেই হাঁটতে শুরু করে দিয়েছেন কিয়ান। তবে জামসেদ যা করে দেখাতে পারেননি, তাঁর ছেলে সেই নজিরই গড়ে দেখিয়ে দিলেন। ডার্বিতে হ্যাটট্রিক। ডার্বিতে জামসেদের গোল আছে ঠিকই, কিন্তু হ্যাটট্রিক নেই। কিয়ান শুরুই করলেন সেই কীর্তি দিয়ে। কলকাতা ডার্বির ইতিহাসে লেখা হয়ে গেল আর এক কীর্তি, প্রথম পিতা-পুত্রের গোল।



তাঁর লড়াকু মনোভাবের জন্য দল তিন পয়েন্ট পেয়েছে। তবে উৎসব করতে রাজি নন বঙ্গ ফুটবলের নতুন তারকা। এ দিন বলেন, “আজ (রবিবার) মা ও পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কথা হলেও বাবার সঙ্গে কথা হয়নি। উনি মাঠে গিয়েছিলেন ট্রেনিং করাতে। বাবার খেলা দেখিনি কখনও। তবে অনেকের মুখেই শুনেছি উনি ডার্বিতে অনেক গোল করেছেন। বাবার সঙ্গে মাঠে অনেক প্র্যাকটিস করেছি। তবে উনি কখনও আমার জন্য কোনও লক্ষ্য স্থীর করে দেননি। বরাবরই বলে এসেছেন ‘পরিশ্রমের কোনও বিকল্প হয় না’ ম্যাচের আগে বা কোনও শিবিরে থাকার সময় বাবার সঙ্গে সাধারণত ফোনে কথা হয় না আমার”।


বাবার কাছ থেকে শুরু হয়েছিল ওঁর ফুটবল পাঠ। তবে কেরিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক কিন্তু সতীর্থদের উৎসর্গ করলেন কিয়ান। যোগ করলেন,“ড্রেসিংরুমে দলের সবাই আমাকে সব সময় নানা ভাবে সাহায্য ও উৎসাহিত করে। তাই এই সাফল্য পুরো দলকে উৎসর্গ করতে চাই। তবে তিনজন কোচের কথা আমি এখনই বলতে চাই, যাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বর্তমান কোচ ফেরান্দো, প্রাক্তন কোচ হাবাস স্যার ও টিয়েন ল।“


লিওনেল মেসির অন্ধভক্ত। তবে মেসির সাক্ষাত না পেলেও, ইতিমধ্যেই বাইচুং ভুটিয়া ও এডি চিডিকে ছুঁয়ে ফেলেছেন। সেটা জেনে আপ্লুত কিয়ান।


তবে খুব দ্রুত হ্যাটট্রিক ফোবিয়া থেকে বেরিয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে চাইছেন। কারণ ২১ বছরের ছেলেটার পায়ে যে এখন অনেক খেলা বাকি আছে।  


Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App