ISL 2021: মাত্র ২৩ মিনিটে খেল খতম, SC East Bengal-এর বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করল Habas-এর ATK Mohun Bagan
এ বারের ডার্বি ৩-০ ব্যবধানে জিতে ড্যাং ড্যাং করে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক সেরে ফেললেন আন্তোনিও লোপেজ হাবাস।
এটিকে মোহনবাগান: ৩ (রয় কৃষ্ণা-'১২, মনবীর সিং-'১৪, লিস্টন কোলাসো-'২৩)
এসসি ইস্টবেঙ্গল: ০
সব্যসাচী বাগচী: মাত্র ২৩ মিনিটে খেল খতম! পুরনো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বাড়তি কিছু করে দেখানোর তাগিদে পারফর্মাররা অনেক ক্ষেত্রে মারাত্মক কিছু ভুল করে ফেলেন। গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যের (Arindam Bhattacharya) ক্ষেত্রেও কি সেটাই হয়েছিল! মর্যাদার 'বড় ম্যাচ'-এ মাঠে নেমে পুরনো দলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে এই বাঙালি গোলকিপারের 'ব্রেন ফ্রেড' হয়ে গিয়েছিল! প্রথমার্ধের মাত্র ২৩ মিনিটে তিন গোল হজম করে চলতি আইএসএল-এর (ISL 2021) প্রথম ডার্বি যুদ্ধ এটিকে মোহনবাগানের (ATK Mohun Bagan) কাছে হেরে বসল এসসি ইস্টবেঙ্গল (SC East Bengal)। তাও আবার ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার আগেই লজ্জার হার হজম করল লাল-হলুদ বাহিনী। ফলে এ বারের ডার্বি ৩-০ ব্যবধানে জিতে ড্যাং ড্যাং করে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক সেরে ফেললেন আন্তোনিও লোপেজ হাবাস (Antonio Lopez Habas)।
জঘন্য ডিফেন্স, খেই হারানো মাঝমাঠ ও আত্মবিশ্বাসকে টিম হোটেলের লকার রুমে রেখে এলে আর যাই হোক ডার্বি নামক চাপের ম্যাচ জেতা যায় না। এমন চাপের ম্যাচ জিততে হলে লাগে সাহস। দরকার সঠিক টিম কম্বিনেশনের। সেটা রবি ফাউলার থেকে শুরু করে এ বারের হোসে মানলো দিয়াজের (Jose Manuel Diaz) দলে বড্ড অভাব। এগারো জনের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হচ্ছে ওঁদের 'লাল-হলুদ' জার্সি গায়ে চাপানোর যোগ্যতাই নেই! শুরুতেই তিন গোল দেগে সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন রয় কৃষ্ণা, মনভীর সিং ও লিস্টন কোলাসো।
দুই কোচই কিন্তু জয়ের লক্ষ্য নিয়ে দল সাজিয়েছিলেন। অভিজ্ঞ হাবাস ৪-৩-৩ ছকে টিম সাজিয়েছেন। জনি কাউকোকে ফরোয়ার্ডে রেখে লিস্টন কোলাসোকে পিছন থেকে খেলালেন স্প্যানিশ কোচ। সেখানে মানলো দিয়াজ ৩-৪-৩ ছকে সাজিয়েছেন দল। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে প্রথম ম্য়াচ ড্র করার পর নাকি ডার্বি ম্যাচ জেতার জন্য মরিয়া লাল-হলুদ। রফিককে বাঁ প্রান্তে খেলিয়ে চমক দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন দিয়াজ। চিমা চুকুকে প্রথম দলে রাখেননি তিনি।
আরও পড়ুন: INDvsNZ: 'সুপার সাব' KS Bharat-এর কিপিং দেখে মুগ্ধ VVS Laxman
কিন্তু তাতে কি! শুরুতেই খারাপ ডিফেন্সের খেসারত দিল ইস্টবেঙ্গল। ডান দিক থেকে প্রীতম কোটালের বাড়ানো বল বক্সের মধ্যে বল পেয়ে যান রয় কৃষ্ণা। খেলার ১২ মিনিটে ১-০ করতে ভুল করেননি ফিজির 'গোলমেশিন'। এই গোল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে মাঝমাঠের সঙ্গে ডিফেন্সের কোনও বোঝাপড়াই গড়ে ওঠেনি। অরিন্দমের কিছুই করার ছিল না।
প্রথম গোল হজম করার পর লাল-হলুদ থিতু হয়নি। ঠিক এমন সময় দিয়াজের দলের দুর্বল মাঝমাঠের সুযোগ নিয়ে একক দক্ষতায় বল টেনে নিয়ে গিয়ে মনবীর সিংকে পাস বাড়ালেন জনি কাউকো। মাঠের বাঁপ্রান্ত ব্যবহার করে পঞ্জাব তনয়ের সেই গোলার মতো শট বাঁচানোর ক্ষমতা অরিন্দমের ছিল না। ফলে ১৪ মিনিটে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল সবুজ-মেরুন। সেই গোলের পরেই ক্যামেরায় ধরা পড়ল হাবাসের মুখ। যেখানে দেখা যাচ্ছে হাবাস যেন রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘের মতো উল্লাস করছেন!
১৪ মিনিটে দুই গোল খেয়ে লাল-হলুদের তখন বেহাল দশা। ঠিক এমন অবস্থায় ২৩ মিনিটে তৃতীয় গোল হজম করে বসল এসসি ইস্টবেঙ্গল। অবশ্য এই গোলের জন্য দায়ী অরিন্দম। গতিতে আসা বলকে শেষ মুহূর্তে তিনি অ্যালাও করতে চাইছিলেন না। সেই জন্য লিস্টন কোলাসোকে মাঠের ডানদিক থেকে বল নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখে তিনিও গোয়া থেকে আসা ফুটবলারের পায়ে ডাইভ দেন। কিন্তু সেটা করলে কি হবে! বল তখন অরিন্দমের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। এই সুযোগে অরিন্দমকে ডজ দিয়ে ফাঁকা গোলে বল জড়িয়ে সুন্দর ভাবে ৩-০ এগিয়ে দেন সবুজ-মেরুনকে।
সেই গোল খাওয়ার পর দলের শুধু মনোবলই ভাঙেনি। অরিন্দমও চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে গেলেন। ফলে মাঠে নামলেন শুভম সেন। অন্যদিকে লালরিনলিয়ানার বদলে নামলেন অমরজিৎ সিং খিয়াম। গত মরসুমের প্রথম ডার্বিতে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন তৎকালীন লাল-হলুদ অধিনায়ক ড্যানি ফক্স। আর এ বার অধিনায়ক অরিন্দম দলকে ডুবিয়ে ও নিজে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেন।
প্রথমার্ধে লাল-হলুদ দুটি বদল করতে বাধ্য হয়েছিল। দ্বিতীয়ার্ধেও খেলার চিত্র বদলায়নি। এটিকে মোহনবাগান ব্যবধান বাড়াতে না পারলেও, খেলার রাশ নিজেদের হাতেই রেখেছিলেন রয় ক্রিশ্না-হুগো বুমৌসরা। ৫৫ মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেন রাজু গায়কোয়াড়। সেটা ছিল লাল-হলুদের জন্য আরও বড় ধাক্কা। তবে রাজুর বদলে আদিল খান নামলেও লাভ হয়নি। ৫৯ মিনিটে আবার বদল ফুটবলার করলেন দিয়াজ। নেদারল্যান্ডসের ড্যারেন সিডওয়েলকে তুলে চিমাকে নামানো হল। কিন্তু সিডওয়েলের মতো চিমাও জ্বলে উঠতে পারলেন না। মনে জল এ যেন 'নকল চিমা'!
নামেই ডার্বি। গত মরসুমের পর এ বারও 'বড় ম্যাচ'-এ একাই খেলে গেল এটিকে মোহনবাগান। কোনও সুযোগ পেল না ও সুযোগ তৈরি করার মরিয়া তাগিদ দেখাল না এসসি ইস্টবেঙ্গল। ফলে ফের একটা ডার্বি জিতে হ্যাটট্রিক করলেন হাবাস ও তাঁর ব্রিগেড। আর সেটা মাঠের বাইরে বসে দেখে গেলেন দিয়াজ। হয়তো রবি ফাউলারও তাঁর পুরনো দলের এমন অসহায় আত্মসমর্পণ দেখেছেন।