Jyoti Basu, Jyoti Basu Birthday: ময়দানে জ্যোতির্বলয়, মনেপ্রাণে মোহনবাগানি!
জীবদ্দশায় একবার মোহনবাগান কর্তাদের প্রতি কিছুটা রেগেও গিয়েছিলেন। ময়দানের তিন প্রধান ও বাকি দলগুলো বিদেশি ফুটবলার খেলানোকে মানতে পারেননি। চিন্তিত ছিলেন বাঙালি ফুটবলারদের ভবিষ্যতে নিয়ে।
মৌমিতা চক্রবর্তী, সব্যসাচী বাগচী
তিনি ছিলেন রাশভারী স্বভাবের। তাঁর হাসিমুখের ছবি কারও কাছে সযত্নে রাখা আছে বলে মনে হয় না। তবে রাজ্যের এহেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী (Ex Chief Minister of West Bengal) জ্যোতি বসু (Jyoti Basu) একটি বিশেষ জায়গায় প্রাণ খুলে হাসতেন। সেটা হল মাঠ। হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন। আদ্যন্ত মোহনবাগান (Mohun Bagan) সমর্থক 'জ্যোতি বাবু' প্রিয় দলের খেলা দেখতে গেলেই ওঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ একেবারে বদলে যেত! তাঁর ১০৯ তম জন্মদিনে সেই বিষয়ে স্মৃতিচারণ করছে জি ২৪ ঘণ্টা।
ছোটবেলা থেকেই রাইট ব্যাক পজিশনে খেলতেন। হিন্দুস্থান পার্কে ফুটবল ক্লাব তৈরি করেছিলেন। নাম ছিল ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট। তিনিই ছিলেন দলের অধিনায়ক। জ্যোতিবাবু ছিলেন বাঙাল মোহনবাগানি। খালি পায়ে খেলে সাহেবদের টিমকে হারাতে দেখে ছোটবেলাতেই মোহনবাগানের সমর্থক হয়ে যান।
তবে জীবদ্দশায় একবার মোহনবাগান কর্তাদের প্রতি কিছুটা রেগেও গিয়েছিলেন। ময়দানের তিন প্রধান ও বাকি দলগুলো বিদেশি ফুটবলার খেলানোকে মানতে পারেননি। চিন্তিত ছিলেন বাঙালি ফুটবলারদের ভবিষ্যতে নিয়ে।
প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসুর কাছে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেই, তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। যেন একেবারে শিশুদের মতো। জি ২৪ ঘন্টা-কে বিমান বসু বলেন, "রাজনীতির বাইরে জ্যোতি বাবুর ফুটবল নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ছিল। এবং সেটা মোহনবাগান কেন্দ্রিক। মাঠে না গেলেও তিনি নিয়মিত প্রিয় দলের খবর নিতেন।"
এই প্রসঙ্গে বিমানের আরও স্মৃতিচারণ, "একবার জ্যোতি বাবুর সঙ্গে মোহনবাগানের খেলা দেখতে গিয়েছিলাম। ম্যাচের কোনও একটা ঘটনা নিয়ে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। আবেগ নিয়ন্ত্রণে ছিল না। তিনি আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বড় চোখ নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন।"
প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ-মেরুন প্রীতি নিয়ে স্মৃতির ঝাঁপি উপুড় করে দিলেন মোহনবাগানের সচিব দেবাশিস দত্ত। তিনি বলেন, "জ্যোতি বাবু চেষ্টা করলেই মোহনবাগানের সদস্য হতেই পারতেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। এমনকি কোনওদিন ক্লাব তাঁবুতে পা পর্যন্ত রাখেননি। তবে একবার প্রদর্শনী ম্যাচ দেখতে ইডেন গার্ডেন্সে গিয়েছিলেন।" প্রয়াত ক্লাব সচিব অঞ্জন মিত্র ও সভাপতি টুটু বসুর সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বন্ধুত্ব ছিল। সেটাও জানালেন দেবাশিস।
মোহনবাগানের প্রতি প্রেমের জন্য তিনি একবার প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কেও আদালতে লড়াই করার অনুমতি দিয়েছিলেন। অনেক বছর আগে জ্যোতি বাবু ও সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিমানে দিল্লি যাচ্ছিলেন অঞ্জন মিত্র। সেই সময় সিপিএম অন্য কারও হয়ে আদালতে লড়ার অনুমতি দিত না।
অঞ্জন মিত্র একবার বলেছিলেন, ‘‘জ্যোতি বাবুর সঙ্গে অনেক অনেক স্মৃতি। এই মুহূর্তে একটা কথা মনে পড়ছে। আমরা একসঙ্গে দিল্লি যাচ্ছিলাম। সেই বিমানে ছিলেন জ্যোতি বাবুও। তখন দল অন্য কারও হয়ে আদালতে লড়ার অনুমতি দিত না। মোহনবাগানের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কেস আটকে ছিল। মাঝ আকাশে সোমনাথদা জ্যোতি বাবুর কাছে সেই কেস লড়ার অনুমতি চান। জ্যোতি বাবু হেসে বলেছিলেন, 'মোহনবাগানের বিষয় তোমাকে না করি কী করে!' তাঁর অনুমতি নিয়েই সবুজ-মেরুনের হয়ে কেস লড়েছিলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার।"
স্বভাবে গম্ভীর হলেও, মাঠ ভালবাসতেন। মোহনবাগানের প্রতি আন্তরিকতা ও আবেগ ছিল। পদের মোহ ছিল না।
আরও পড়ুন: Sourav Ganguly Birthday, Sourav Ganguly At 50: জন্মদিনের আগে ফের লর্ডসের ব্যালকনিতে মহারাজ
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)