Mukesh Kumar, WI vs IND: কতটা আন্তরিক ছিলেন বিরাট-রোহিত? অকপটে জানালেন অভিষেকে দাপট দেখানো মুকেশ
ছেলে বড় ক্রিকেটার হতে পারে, ভারতীয় দলে সুযোগ পেতে পারে, কখনও এমনটা মনে করতেন না মুকেশের প্রয়াত বাবা কাশীনাথ সিং। গতবছর ব্রেন স্ট্রোকে মারা যান মুকেশের বাবা কাশীনাথ। নিজে ট্যাক্সি চালালেও, ছেলেকে সরকারি চাকরির জন্য পড়াশোনা করার কথা বলতেন। সেই ছেলেই এবার জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েই টেস্ট অভিষেক ঘটিয়ে উইকেটও তুলে নিলেন।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: তখন চলতি টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শুরু হয়েছে। কার্ক ম্যাকেঞ্জির (Kirk McKenzie) ব্যাটের কানায় লেগে বল উইকেটকিপার ঈশান কিশানের (Ishan Kishan) গ্লাভসে জমা হতেই গর্জে উঠলেন মুকেশ কুমার (Mukesh Kumar)। ঈশ্বরকে জানালেন ধন্যবাদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ (West Indies) সফরে সুযোগ পেতেই তাঁর স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ পেরিয়েছিল। আর এবার সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অভিষেক ঘটিয়েই প্রথম ইনিংসে নিলেন ৪৮ রানে ২ উইকেট। প্রথম উইকেট পাওয়ার পরেই বিরাট কোহলি (Virat Kohli) ও রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) এসে জড়িয়ে ধরেছিলেন মুকেশকে। ঘটনার পর অনেকটা সময় কেটে গেলেও বিশ্বাসই হচ্ছে না বাংলার (Bengal) জোরে বোলারের। চতুর্থ দিনের খেলা শেষে সতীর্থ মহম্মদ সিরাজকে (Mohammed Siraj) সেটাই জানিয়েছেন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) নতুন সদস্য।
মুকেশ বলেছেন, "উইকেট পাওয়ার পর বিরাট ও রোহিত ভাই এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। মনে হচ্ছিল আমি অন্য জগতে রয়েছি। টিভিতে এত দিন ধরে মানুষটাকে দেখেছি। সে কি না এসে আমাকে জড়িয়ে ধরছে! খুব ভালো লেগেছে ওই মুহূর্তটা।"
প্রাণহীন পিচেও টানা একই লাইন-লেংথে বল করে গিয়েছেন মুকেশ। দু’টি উইকেটও পেয়েছেন তিনি। টানা একই লেংথে বোলিং প্রশংসিত হয়েছে। মুকেশ সেই সম্পর্কে সিরাজকে বলেছেন, "যখন তুমি (সিরাজ) এবং জেডি (জয়দেব উনাদকাট) ভাই বল করছিলে, তখনই রোহিত ভাই বলেছিল এই পিচে সহজে উইকেট পাওয়া যাবে না। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমি সেটা শুনেই একই জায়গায় ধারাবাহিক ভাবে বল করে গিয়েছি।"
ছেলে বড় ক্রিকেটার হতে পারে, ভারতীয় দলে সুযোগ পেতে পারে, কখনও এমনটা মনে করতেন না মুকেশের প্রয়াত বাবা কাশীনাথ সিং। গতবছর ব্রেন স্ট্রোকে মারা যান মুকেশের বাবা কাশীনাথ। নিজে ট্যাক্সি চালালেও, ছেলেকে সরকারি চাকরির জন্য পড়াশোনা করার কথা বলতেন। সেই ছেলেই এবার জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েই টেস্ট অভিষেক ঘটিয়ে উইকেটও তুলে নিলেন।
বিহারের গোপালগঞ্জের কাকরকুণ্ডে জন্ম মুকেশের। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে বিহারের হয়ে প্রতিনিধিত্বও করেছেন। ছোট বেলায় স্বপ্ন দেখতেন আর্মিতে যোগ দেওয়ার। চেষ্টাও করেছিলেন। শারীরিক পরীক্ষায় তিন–তিনবার ব্যর্থ হন। ২০১২ সালে এক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন মুকেশ। এরপর বাবা তাঁকে কলকাতায় এসে কাজ করার কথা বলেন। কলকাতায় এসে কাজ করার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলাও চালিয়ে যান মুকেশ। সেখান থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন। সেই স্বপ্ন এবার পূরণ হল।
২০১৪ সালে বাংলার 'ভিশন ২০২০' প্রোজেক্টের জন্য ট্রায়ালে ডাক পান মুকেশ। বোলিংয়ের জন্য তাঁকে যখন ডাকা হয়েছিল, তিনি বাথরুমে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত পরে মুকেশকে বোলিং করার সুযোগ দেওয়া হয়। তাঁর বোলিংয়ে মুগ্ধ হয়ে 'ভিশন ২০২০' শিবিরে মুকেশকে সুযোগ দেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ওয়াকার ইউনিস। ক্লাব ক্রিকেটে দুরন্ত বোলিং করে ২০১৫ সালে বাংলার সিনিয়র দলে সুযোগ পান মুকেশ। আর তাই মুকেশের কাছে 'গড ফাদার' হলেন মহারাজ। সেই শুরু। এরপর মুকেশকে ফিরে তাকাতে হয়নি।
একটা সময় পুষ্টির অভাবে 'বোন এডিমা' হয়ে যায়। ক্রিকেট খেলা তো দূর, ঠিক ভাবে হাঁটতেও পারতেন না। ক্রিকেট কিট ছিল না। সেটা মনোজ তিওয়ারি দিয়েছিলেন। ক্রিকেট কেরিয়ার জুড়ে ঝড়-ঝঞ্ঝা এসেছে, কিন্তু কোনও কিছুই মুকেশকে দমাতে পারেনি। ছোট থেকেই মুকেশ একটা স্বপ্ন দেখতেন। ভারতীয় দলের জার্সিতে তিনি খেলবেন। অবশেষে বঙ্গ পেসারের স্বপ্নপূরণ হল। দেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে লাল বল হাতে রানআপ নিয়েই খাতা খুলে ফেললেন মুকেশ।