নিজস্ব  প্রতিবেদন:   রাস্তার ধারে পড়ে রয়েছে  এক মহিলা। বছর তেত্রিশ বয়শ। পরনে জিন্স টপ,  হাতে  নোয়া। মাথার পিছন দিয়ে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। পাশে বসেই হাউ হাউ করে কাঁদছেন এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তির বুক ফাঁটা কান্নার আওয়াজ শুনেই বিষয়টিতে নজর পড়ে স্থানীয়দের।  কাঁদতে কাঁদতে প্রায়ই সম্বিত্ হারাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তি।  চোখেমুখ জল দেওয়ার পর কিছুটা ধাতস্ত হয়ে তিনি জানান, স্ত্রীকে নিয়ে স্কুটি কিনতে যাচ্ছিলেন। স্ত্রীর ব্যাগেই ৩৫ হাজার টাকা রাখা ছিল। দুই যুবক পিছন থেকে এসে ব্যাগটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করছিল। স্ত্রী বাধা দেওয়ায় গুলি করে চম্পট দেয় তারা। তার স্ত্রীর মাথার পিছনে গুলি লাগে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

উত্তর ২৪ পরগনার  বারাকপুর সংলগ্ন নোয়াপাড়ায় ইদানীং দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য মাত্রা ছাড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাই ওই ব্যক্তির কথা বিশ্বাসই করে নিয়েছিলেন।  শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই বা কেন, দুঁদে পুলিস কর্তাদেরও রীতিমতো ঘোল খাইয়ে ছেড়েছিলেন নোয়াপাড়ার বাসিন্দা সুখবীর সিং। কিন্তু নাটকের  ক্লাইমেক্সে এসেই ফাঁস হল পর্দা।


আরও পড়ুন: তুমি আমাকে বুঝলে না, এই অনুচ্চারিত শব্দ বুঝেছে  আদালত, এই দম্পতির বিয়ে বাঁচাতে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ বীরভূমের বিচারকের


এ তো কোনও দুষ্কৃতীদের কর্ম নয়, বরং গোটা ঘটনাটিই ওই মহিলার স্বামী সুখবীর সিংয়ের সাজানো। তারই কথায় রয়েছে একাধিক অসঙ্গতি। অ্যাপ ক্যাব চালক সুখবীর সিংকে চেপে ধরে পুলিস। রাতভর চলে জেরা। ম্যারাথন জেরার মুখে ভেঙে পড়েন সুখবীর সিং।  স্ত্রীকে খুনের কথা স্বীকার করেন তিনি। উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।  বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের সন্দেহের জেরেই স্ত্রীকে খুন করেন তিনি।


বছর কয়েক আগে রাজশ্রী চট্টোপাধ্যায়কে বিয়ে করে অ্যাপ ক্যাব চালক সুখবীর সিং। ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু ভালোবাসার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় সন্দেহ।  ক্যাব চালক হওয়ায় মাঝেমধ্যেই রাতে বাড়ি  ফিরতে দেরি হত সুখবীরের।  তাঁর মনে হতে থাকে, এলাকারই কোনও যুবকের সঙ্গে প্রেম করছেন রাজশ্রী।



সারাক্ষণ মোবাইলে ব্যস্ত থাকা, খুটিনাটি বিষয়েই অশান্তি- এই সবে স্ত্রীয়ের প্রতি সন্দেহ আরও গাঢ় হতে থাকে। তাই স্ত্রীকে শেষ করে দেওয়ার প্ল্যানটা মনে মনে ছকে ফেলেছিল সে। আর এক্ষেত্রে এলাকায় দুষ্কৃতীরাজ নিয়ে স্থানীয়দের যে অভিযোগ, তারই  ফায়দা   নিতে চেয়েছিলেন সুখবীর।


আরও পড়ুন: ঘরে মা, বাবা ও মায়ের পুরুষ বন্ধু! পুজোর বাজার সেরে ফেরার পর তিন জনকে ঘরের মধ্যে যে অবস্থায় দেখলেন ছেলেমেয়ে


পলতার একটি শোরুমে স্কুটি কিনতে যাওয়ার নাম করে স্ত্রীকে নিয়ে বেরোন সুখবীর। পলতার একটু দূরে  নির্জন এলাকায় পকেট থেকে বন্দুক বার করে স্ত্রীকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। এক গুলিতেই খেল খতম! এরপরই নাটক শুরু হয় সুখবীরের। স্ত্রীয়ের দেহের পাশে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসায় ছিনতাই এর গল্প ফাঁদে সুখবীর।


নাটক তো নাটকই! প্রথম দিক কিছুটা বিশ্বাস অর্জন করলেও দুঁদে পুলিস কর্তাদের চোখে ধুলো দিতে পারেননি সুখবীর। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে, বন্দুক কোথা থেকে জোগাড় করলেন তিনি? মনে করা হচ্ছে,  টাকার বিনিময়ে ওই বন্দুক ভাড়া করেছিলেন সুখবীর। এক্ষেত্রে তৃতীয় কোনও ব্যক্তির বুদ্ধিতেও এই কাজ করতে পারেন সুখবীর। অন্য একটি সূত্র মারফত্ জানা যাচ্ছে, রাজশ্রীর নামে থাকা ফ্ল্যাট হাতাতেই এই কাজ করছেন সুখবীর। জেরা চলছে।