চোখ ধাঁধানো `অমিত বৈভবে`র সভায় শহিদ স্মরণ `ফিকে`, ক্ষোভ বিজেপির একাংশে
যে জেলায় ৩ কর্মীর মৃত্যু ঘটেছে, সেখানে এত আয়োজন কেন, উঠছে প্রশ্ন।
অঞ্জন রায়
এত মানুষ! পুরুলিয়ার সভায় ভিড় দেখে রীতিমতো উজ্জীবিত হয়েছেন স্বয়ং বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি। পদ্ম শিবিরের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, শিমুলিয়ায় 'চরম বৈভবের' এই সভাই না কি অপাতত পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র সবচেয়ে 'বড় হিট'। তবে, এদিনের সভা ছিল মূলত 'শহিদ স্মরণে'। কিন্তু, সভার চৌহদ্দির মধ্যে কোথাও শহিদ বেদী বা তাঁদের প্রতিকৃতি তো চোখে পড়ল না! সভার আবহের মধ্যেও শহিদ স্মরণের লেশ মাত্র মালুম হয়নি! তবে এসব 'ছিদ্রান্বেষণ' কোনও বিরোধী দল করছে না। বরং বৃহস্পতিবারের সভার পর পদ্ম শিবিরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে এমন সব কথা।
সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুরুলিয়া জেলায় 'বেশ ভাল' ফল করেছে বিজেপি। এরপর দলের তিন যুবা কর্মীকে প্রাণ হারাতে হয়েছে বলে অভিযোগ গৈরিক শিবিরের। আরও পড়ুন- 'রবি ঠাকুরের সুর বদলেছে বোমার আওয়াজে', তোপ অমিতের
পুরুলিয়ার সেই তিন যুবকের জন্যই 'শহিদ স্মরণে'র আয়োজন। তবে এদিনের সভায় জগন্নাথ টুডু, দুলাল কুমার অথবা ত্রিলোচন মাহাতোর একটিও ছবিও দেখা যায়নি। শহিদদের উদ্দেশে পুষ্পস্তবক প্রদানেরও কোনও বালাই ছিল না। তবে, শহিদ পরিবারগুলির সঙ্গে মঞ্চেই করজোড় করেছেন অমিত শাহ। ব্যাস ওইটুকুই, বলছেন বিজেপিকর্মীদের একাংশ। তবে, বিজেপির শহিদ স্মরণের মঞ্চে শহিদদের সেভাবে স্মরণ না করা হলেও 'বৈভবের' কমতি ছিল না। আরও পড়ুন- বীরভূমে শাহের সভা বাতিল! কারণ জানালেন অনুব্রত মণ্ডল
এমনিতে বৃহস্পতিবারের আগে এত বড় রাজনৈতিক সভা অতীতে দেখেনি পুরুলিয়া। অমিত শাহর এদিনের সভার মন্ডপকে এক কথায় বলাই যায় কর্পোরেট মন্ডপ। সাধারণত, দেশের শিল্প সম্মেলন বা বিশ্ববাণিজ্য সম্মেলনের জন্য এমন কায়দায় তৈরি করা হয় মন্ডপ। লোহার বিম দিয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মীত এই মন্ডপ তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। এ জন্য দিল্লি এবং ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছিলেন কারিগররা। মন্ডপের সমস্ত উপাদন নিয়ে আসা হয়েছিল ঝাড়খণ্ড থেকেই। সভা চলা কালীন বৃষ্টি হলে যাতে জল না জমে তাই আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করার পাশাপাশি সর্বক্ষণের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষিত কর্মীদের রাখা হয়েছিল মন্ডপ চত্বরেই। মন্ডপে ছিল ৭টি জায়ান্ট স্ক্রিন। আরও পড়ুন- ২২ নয়! ‘২৩ আসনে জিতবে বিজেপি’, মমতাকে বিঁধে হুঙ্কার অমিতের
এসব দেখেই অমিতের সভাকে বিজেপির অনেকেই বলছেন 'অমিত বৈভবের সভা'। তবে, বিজেপি-তে অমিত শাহর এই মূহূর্তে যা গুরুত্ব তাতে এমন আয়োজন হওয়াই 'প্রত্যাশিত' ও 'হয়ে থাকে' বলে জানাচ্ছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। কিন্তু, তাতেও আপত্তি যাচ্ছে না রাজ্য বিজেপির-ই কিছু নেতার। তাঁদের প্রশ্ন তুলছেন, যে জেলায় ৩ কর্মীর মৃত্যু ঘটেছে সেই জেলায় এত আয়োজন কেন? সভা আয়োজনের এই বিপুল অর্থ কি শহিদ পরিবারগুলির হাতে তুলে দেওয়া যেত না? অমিত শাহ বৃহস্পতিবার রাতেই বাংলা ছেড়েছেন, তবে প্রশ্নগুলো রয়েই যাচ্ছে। আরও পড়ুন- দিলীপকে ভরসা দিয়ে বিমানে উঠলেন অমিত শাহ