জেলা সভাপতি দিলীপের বিরুদ্ধে এবার সুর চড়ালেন সাংসদ অপরূপা, হুগলি তৃণমূলে আরও স্পষ্ট হল `ফাটল`
`সাংসদকে না জানিয়েই তাঁর এলাকায় কর্মসূচি, কোনও আলোচনা না করেই যা করার করছেন।`
নিজস্ব প্রতিবেদন : প্রবীর ঘোষাল, বেচারাম মান্নার পর এবার তৃণমূল হুগলি জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন সাংসদ অপরূপা পোদ্দার। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্ব যখন দলীয় সংহতির বার্তা দিচ্ছেন, তখন হুগলির ছবিটা অবশ্য উল্টো। সেখানে সংহতির বদলে বিভেদের ছবিটাই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
লোকসভা নির্বাচনে হুগলিতে বিজেপির ফল ভালো হয়। এরপরই তপন দাশগুপ্তকে সরিয়ে দল জেলা সভাপতি করে দিলীপ যাদবকে। প্রথমে কিছুদিন ঠিকঠাকই চলছিল। তবে কিছুদিন পর থেকেই জেলায় দিলীপ বিরোধীরা একজোট হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সরব হতে শুরু করেন। উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল বরাবরই দিলীপ বিরোধী। তপন দাশগুপ্তের সঙ্গেও দিলীপের সম্পর্ক মধুর ছিল না। ধনিয়াখালীর বিধায়ক অসীমা পাত্র, হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না, চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার, জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক স্নেহাশিষ চক্রবর্তী, আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দাররা দিলীপের বিরুদ্ধে একজোট হয়। দিলীপকে সভাপতির পদ থেকে সরাতে তাঁরা একাধিক গোপন বৈঠক করে বলেও তৃণমূল অন্দরের খবর। তবে তা ছিল দলের মধ্যেই।
দিলীপের বিরুদ্ধে প্রথম সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন প্রবীর ঘোষাল। তাঁর অভিযোগ ছিল, জেলা সভাপতির জন্য উপদল তৈরি হচ্ছে। বিধায়কদের প্রধান্য না দিয়ে তাঁদের এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি করছেন সভাপতি। এরপর গতকাল উত্তরপাড়ায় তৃণমূলের কর্মী সম্মেলনে বেচারাম মান্নাও সভাপতির বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি বলেন, "কেউ যদি খেটে দল করে থাকা কর্মীদের বঞ্চিত করেন, তাহলে প্রয়োজন পড়লে কর্মীরা তাঁকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবেন। সেই পরিবেশ হুগলি জেলায় তৈরি হয়েছে।" প্রকারান্তরে বেচারাম বুঝিয়ে দেন, সিঙ্গুর আন্দোলনে উত্তরপাড়ার নেতাকে দেখা যায়নি।
এরপরই আজ আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দার সরাসরি অভিযোগ করেন, "জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন যে সবসময় দলের নির্দেশ মানি। দল যা বলে তাই শুনে চলি। আমি ওনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই। দল কি ওনাকে বলেছে যে, আরামবাগের সাংসদের সঙ্গে কথা না বলেই তাঁর এলাকাতে সম্মেলন করতে? যেমন গতকাল পুরশুড়াতে সম্মেলন করেছেন বলে শোনা গিয়েছে। অথচ সেটা আমরা জানি না। পুরোনো দিনের কর্মীরা দুঃখ করছেন যে তাঁদের জানানো হয়নি। উনি তারকেশ্বরেও কিছুদিন আগে প্রোগ্রাম করলেন, অথচ আমাকে সাংসদ হিসেবে কিছুই জানানো হয়নি। উনি খানাকুলেও প্রোগ্রাম করলেন, সেখানেও জানানো হয়নি। দল কি ওনাকে বারণ করেছেন যে হুগলি জেলার মধ্যে আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদকে না জানিয়ে প্রোগ্রাম করতে? আমরা দলকে ভালোবাসি। দলের ঐক্যবদ্ধ সৈনিক হিসাবে ২০২১-এ একসঙ্গে লড়ব। কিন্তু উনি কেন এরকম করছেন, সেই উত্তর উনিই দিতে পারবেন! আমরা হুগলি জেলার ১৮টা আসনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপহার দিতে চাই। আমরা চাই দলের শক্তি বৃদ্ধি হোক। কিন্তু দলের তৃণমূল স্তরের কর্মীরা ঝিমিয়ে পড়ছে! কবে কমিটি করবেন? এখনও কিছুই করছেন না সভাপতি। কোনও আলোচনা না করেই যা করার করছেন। আমরা মিটিং করছি ব্লক সভাপতি, এমএলএ-দের নিয়ে। একইসময়ে আরেকটা পাল্টা মিছিল হচ্ছে আমাদের জেলা সভাপতিকে নিয়ে। এতে মানুষের কাছে ঠিক বার্তা যাচ্ছে না।"
আরও পড়ুন, রাতভর কেশপুরে বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে বোমাবাজি! কাঠগড়ায় তৃণমূল