৭/৭, পুরসভার রায়ে তৃণমূলই এক নম্বর; প্রধান বিরোধী আসন হারাল বামেরা
কলকাতা: ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ৭ পুরসভার জয় 'উপহার' চেয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সুপ্রিমোকে খালি হাতে ফেরাল না কর্মী-সমর্থকরা। প্রত্যাশিতভাবেই সাত পুরসভার ফলাফল ঘোষণার শুরু হতেই শাসকদলের জয়জয়কার। উন্নয়নকে হাতিয়ার করে বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি হলদিয়া (বাম) ও কুপার্সক্যাম্পকে (কংগ্রেস) বিরোধীশূন্য করল তৃণমূল। ক্লিন সুইপ পেল দুর্গাপুরেও। পাশাপাশি, ঝাড়গ্রাম ও চাঁপদানি পুরসভার উপনির্বাচনেও জয় পেয়েছে তৃণমূল। তবে, তৃণমূলের চিন্তা বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরের উপস্থিতি। এই পরিস্থিতিতে সাত পুরসভার ফলাফলে গেরুয়া শিবিরের ভোটব্যাঙ্কের দিকেও নজর ছিল সবার। ধূপগুড়ি, বুনিয়াদপুর, পাঁশকুড়া পুরসভায় বাম-কংগ্রেসকে সরিয়ে বিরোধী আসনে সামনে উঠে এসেছে বিজেপি।
একনজরে রাজ্যের ৭ পুরসভার ফলাফল-
কুপার্স ক্যাম্প:
১২ ওয়ার্ডের কুপার্স ক্যাম্প পুরসভায় ১২টি আসনেই জিতে পুরসভার নিরঙ্কুশ দখল নিল তৃণমূল কংগ্রেস। কংগ্রেসের গড় কুপার্স ক্যাম্প থেকে কংগ্রেসকে ফিরতে হল খালি হাতে। কুপার্স ক্যাম্পের এই পালাবদলে মূল ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিল শঙ্কর সিংয়ের দলবদল। রাজ্যে পালাবদলের পর এই প্রথমবার কুপার্স ক্যাম্প পুরসভার দখল পেল ঘাসফুল শিবির। জয়ী তৃণমূল কাউন্সিলরের কথায়, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের স্বপ্নেই ভরসা রেখেছে মানুষ।"
হলদিয়া:
২৯ আসনবিশিষ্ট হলদিয়া পুরসভাতেও জয় হাসিল করল তৃণমূল। সবকটি ওয়ার্ডেই জিতল তৃণমূল কংগ্রেস। জেলাজুড়ে পরিবর্তনের হাওয়াতে বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটিতেও এবার ঘাসফুল ফুটল। ২০১২ সালেও হলদিয়া পুরসভা থেকে তৃণমূলকে ফিরতে হয়েছিল খালি হাতে। বোর্ড গঠন করেছিল বামেরা। ৪ বছরের মাথায় হলদিয়া পুরসভা এবার বিরোধীশূন্য। সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী বলেছেন, "মানুষ ভুল বুঝতে পেরেছে। আর তাই তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিগত বোর্ডগুলি কোনও উন্নয়ন করেনি। উন্নয়নের লক্ষ্যেই মানুষ মমতা ব্যানার্জির উপর আস্থা রেখেছেন।"
ধূপগুড়ি :
১৬ ওয়ার্ডের ধূপগুড়ি পুরসভায় তৃণমূল পেয়েছে ১২টি আসন। বিজেপির ঝুলিতে এসেছে ৪টি। বিজয় উল্লাসে মেতেছে দুই শিবিরই। একদিকে গত ৪ বছরের উন্নয়নকে হাতিয়ার করে যেমন ভোটে লড়েছিল তৃণমূল, তেমনই বিজেপির তরফে নির্বাচনী প্রচারে জোর দেওয়া হয় কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির উপর। এবারের ভোটে গতবারের থেকে একটি আসন বাড়িয়েছে তৃণমূল।
বুনিয়াদপুর:
১৪ ওয়ার্ডের বুনিয়াদপুর পুরসভাও শাসকদলের দখলে। ১৩টি ওয়ার্ডে জয় পেয়েছে তৃণমূল। একমাত্র ১২ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছে বিজেপি প্রার্থী। এই পুরসভায় প্রধান বিরোধী দলের আসন পেল বিজেপি।
পাঁশকুড়া:
১৮ আসনের পাঁশকুড়া পুরসভায় তৃণমূল ও বিজেপির প্রাপ্ত আসন সংখ্যা ১৭ ও ১। কেবল ৬ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছে বিজেপি। যদিও বিজেপির পক্ষে দাবি করা হয়েছে, আরও বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে জয় পেত গেরুয়া শিবির। শাসকদল ছাপ্পাভোট ও রিগিং করে ভোট হাতিয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। অধিকাংশ ওয়ার্ডেই তৃণমূলের পরেই রয়েছে বিজেপি। তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে বামেরা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এখানে কয়েকটি ওয়ার্ডে মাত্র ১০, ২০, ২৫ বা ৩০টি করে ভোট পেয়েছেন বাম প্রার্থীরা।
নলহাটি:
১৬ আসনবিশিষ্ট নলহাটি পুরসভায় একমাত্র খাতা খুলতে পেরেছে বামেরা। একটি আসনে জয় পেয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক। একটি আসনে জিতেছে বিজেপি। বাকি ১৪টি আসনেই জয় হাসিল করেছে ঘাসফুল শিবির। গতবারের নির্বাচনে ৯টি আসনে জিতেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেখান থেকে এবার এক ধাক্কায় অনেকটাই আসন সংখ্যা বাড়িয়ে নিল শাসকদল।
দুর্গাপুর:
৪৩ ওয়ার্ডের দুর্গাপুর পুরসভাতেও ক্লিন সুইপ পেল তৃণমূল। হলদিয়া ও কুপার্স ক্যাম্পের পর বিরোধীশূন্য হল দুর্গাপুরও। ৪৩টি ওয়ার্ডেই জিতে এবার বোর্ড গঠন শুধু সময়ের অপেক্ষা।