নিজস্ব প্রতিবেদন: কংগ্রেসের হাত ধরার প্রশ্নে তুলকালাম বেঁধেছিল সিপিএম-এর পার্টি কংগ্রেসে। আর এবার কংগ্রেস পার্টি জেরবার সিপিএম না তৃণমূল এই দ্বন্দ্বে। পশ্চিমবঙ্গে শতাব্দী প্রাচীন রাজনৈতিক দলটি কার সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলবে, দ্বন্দ্ব মূলত এই নিয়েই। ইতিমধ্যে এই প্রশ্নে কার্যত দুভাগ হয়ে গিয়েছে সিআইটি রোডের বিধান ভবন। পরিস্থিতি এমনই যে শুক্রবার দিল্লিতে দলের সভাপতি রাহুল গান্ধীকেও সাক্ষী থাকতে হল এই মতপার্থক্যের।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

গুরুদ্বার রাকাবগঞ্জ রোডে কংগ্রেসের সাবেক 'ওয়ার রুম'-এ প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠকের পরও সিপিএম না তৃণমূল, এই প্রশ্নের কোনও মীমাংসা হয়নি। কংগ্রেস সংস্কৃতি মেনে এ বিষয়ে যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে হাই কম্যান্ডই, বৈঠক মিটতেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বহু যুদ্ধের পোড় খাওয়া নেতা সোমেন মিত্র। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সংগঠনের অবস্থা শোচনীয় হলেও তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করে ভোটে লড়লে যে রাজ্যে কংগ্রেসকে আর টিকিয়েই রাখা যাবে না, 'রাহুলজি'কে তাও জানিয়ে দিয়েছেন শিয়ালদার 'ছোড়দা'। তৃণমূল বিরোধিতার লাইনে এদিন একসুর শোনা গিয়েছে অধীর চৌধুরী, সোমেন মিত্র, আবদুল মান্নান, দীপা দাশমুন্সিদের গলায়। তাত্পর্যপূর্ণভাবে এদিন অধীর রঞ্জন বলেছেন, "তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলালে যদি আর একজনও দল ছেড়ে যায়, তাহলে আর আমাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করবেন না"।


অন্যদিকে, মইনুল হকের মতো নেতা আবার তৃণমূলের সঙ্গে জোট করার পক্ষেই সওয়াল করেছেন রাহুলের সামনে। মইনুলের দাবি, ২০১৬ নির্বাচনের আগে তিনিও সিপিএম-এর সঙ্গে জোটের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। কিন্তু, জোট করে কোনও লাভই হয়নি কংগ্রেসের। বরং, সিপিএম-এর বিরুদ্ধে তাঁকে লড়তে হয়েছে বলেও অভিযোগ মইনুলের। তাই তিনি এদিন বলেছেন, রাজ্যে সিপিএম-এর সঙ্গে ফের জোট করা কংগ্রেসের জন্য আত্মহত্যার সামিল। এখানেই না থেমে তাত্পর্যপূর্ণভাবে মইনুল জানিয়েছেন, এরপরও দল যদি সিপিএম-এর সঙ্গে জোট করে, সেক্ষেত্রে তিনি আদৌ আর দলে থাকবেন কি না তা নিশ্চিত নয়। শুধু মইনুল নন, আবু হাসেমখান চৌধুরি এবং মৌসম বেনজির নুরের মতো কংগ্রেস নেতারাও রয়েছেন তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষেই। উল্লেখ্য, এদিন বৈঠকে অসুস্থতার কারণে উপস্থিত ছিলেন না মৌসম।


সূত্রের খবর, এদিন প্রত্যেক নেতার সঙ্গেই রাহুল গান্ধী আলাদা করে মিনিট তিনেক কথা বলেছেন। তবে, এখনও পর্যন্ত তৃণমূল না সিপিএম- এই প্রশ্নে তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। আসলে, কংগ্রেস হাই কম্যান্ড এখন কার্যত ধর্মসঙ্কটে পড়ে গেছে। প্রদেশ নেতৃত্বের একটা বড় অংশই বলছে, যদি ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেশি আসন জিততে চায়, তাহলে তৃণমূলের সঙ্গে জোট নিশ্চিতভাবে ভাল ফল এনে দেবে। কিন্তু, এর ফলে আবার রাজ্যে কংগ্রেসের প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া সংহগঠন একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। অন্যদিকে, সিপিএম-এর হাত ধরলে সংগঠনের নতুন করে কোনও ক্ষতি হবে না। তবে, লোকসভায় আসন জেতার তেমন আশাও থাকবে না। এই বাস্তবতার কথা হাড়ে হাড়ে বোঝে হাই কম্যান্ডও। ২০১৯-এ মোদীকে হারাতে ইতিমধ্যে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট বাঁধার পরিকল্পনা করছে কংগ্রেস। সেক্ষেত্রে লোকসভায় সংখ্যাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সঙ্গ এক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। কিন্তু অন্যদিকে, দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে দলের সংগঠনের স্বাস্থ্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখন দেখার স্বল্পমেয়াদি না কি দীর্ঘ মেয়াদি, কোন পথে হাঁটে কংগ্রেস। আরও পড়ুন- গৌরবের রিপোর্ট পেয়েই রাজ্য নেতৃত্বকে তলব রাহুলের