নিজস্ব প্রতিবেদন: এক একটি বনেদি বা প্রাচীন পুজোর এক একরকম গল্প-কাহিনী। যেমন এখানকার পুজোয় মা হঠাৎই এক বালিকারূপে দেখা দিলেন! 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার থানার অন্তর্গত ভবানীপুর গ্রামের ঝিংলেশ্বরী মন্দিরে সারা বছর ধরে উগ্ৰ তারা বিশালাক্ষী পূজা হয়। কিন্তু তা হলেও মহিষাদলের রাজা দেবপ্রসাদ গর্গের আদেশে দুর্গা পুজোর সময়ে এই মন্দিরেই ঘটপূজার মাধ্যমে  দুর্গাপুজোও হয়। এবং মায়ের পাশে বাসুদেবের মূর্তি থাকায় একই সঙ্গে জন্মাষ্টমীর পূজা করার নির্দেশও দেন তিনি।


আরও পড়ুন: Taki: টাকিতে ইছামতী-বক্ষে দুর্গাপুজোর বিসর্জন, দর্শকদের জন্যে বিশেষ নির্দেশিকা প্রশাসনের


মা এখানে আমিষভোজী! নিত্যদিন মাকে কাঁকড়া, মাছ ও মাংস রান্না করে ভোগ দেওয়া হয়। শোনা যায়, গ্ৰামজুড়ে এই একটিই কালীমন্দির! এবং মায়ের নির্দেশ অনুসারে গ্ৰামের কোনো প্রজারাই নাকি ওই মন্দির ছাড়া অন্য কোথাও কালীপূজা করার অধিকার নেই। গ্ৰামবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, এখানে মা খুবই জাগ্ৰতা! দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন মায়ের পুজো দিয়ে তাঁদের নিজ নিজ মনস্কামনা জানাতে। মায়ের কাছে ভক্তদের পায়রা দিয়ে পুজো দেওয়ার মানসিকও থাকে।



শোনা যায়, ভবানীপুর গ্রামটি একেবারে নদীর পাড় বরাবর হিঙ্গুলবন ছিল। প্রায় ৫০০ বছর আগে ওখানে কোনো একটি জাহাজ এসে আশ্রয় নেয় এবং জাহাজের নাবিকরা নাকি তামাক সেবন করছিলেন। হঠাৎ একটি বারো-তেরো বছরের মেয়ে এসে তাঁদের কাছে তামাক খাওয়ার আবদার জানায়। জাহাজের নাবিকরা তা শুনে অট্টহাসি করেন এবং তাকে তামাক দেওয়ার পরিবর্তে জাহাজে ওঠার জন্য কথা বলেন। মেয়েটি তাঁদের বলে, দেখো, আমি তোমাদের জাহাজে উঠলে তোমাদের ক্ষতি হতে পারে! মেয়েটি নিছক মজা করছে, এই মনে করে তখন নাবিকেরা তার কথা অগ্ৰাহ্য করে তাকে জাহাজে ওঠায়। জনশ্রুতি, সঙ্গে সঙ্গে জাহাজটি মাটিতে বসে যায় এবং বালিকারূপিণী মা জাহাজের মাস্তুলে অবস্থান করেন। এই রূপকথা অনুসারেই বর্তমানে মা ঝিংলেশরী মন্দির জাহাজের মাস্তুলের উপরেই অবস্থিত।


অন্য এক গল্পও এই পুজোর পিছনে আছে। তৎকালীন গ্রামের পতিবংশের এক সদস্যকে মা স্বপ্নাদেশে নাকি জানান, তিনি হিঙ্গুল বনে আছেন। সেই থেকেই মায়ের নাম হয়ে যায় 'মা হিঙ্গুলেশ্বরী'। তবে এর পরে কোনও অজ্ঞাত কারণে মায়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'মা ঝিংলেশ্বরী'। যাইহোক, পতিবংশের ওই সদস্য তো মায়ের পূজার্চনা শুরু করলেন। কথিত আছে, মন্দিরের সম্মুখে অবস্থিত একটি পুকুর থেকেই নাকি মাকে ভোগ দেওয়ার কাঁসার থালা-বাসন সব উঠে আসত। কোনো একদিন পতিবংশের ওই সদস্য মায়ের থালা বাসন চুরি করেন। এর ফলে মা অভিশাপ দিয়ে বলেন, পতিবংশের পরিবারে কোনো পুত্রসন্তান জন্মাবে না এবং একদিন পতিবংশ ধ্বংস হয়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে ঘটেও ঠিক তাই।


তবে, মায়ের পুজো তো বন্ধ হতে  পারে না! সেই কারণে পতিবংশের শেষ সদস্যা ভীমাদেবী ও ফুলেশ্বরী দেবী স্থানীয় মিশ্র এবং উত্থাসিনী এই দুই পরিবারকে পালা করে পুজোর দায়িত্ব দিয়ে যান। চিরাচরিত প্রথানুযায়ী আজও ঝিংলেশ্বরীর পূজার্চনা যথা নিয়মেই হয়। পাঁঠাবলির প্রথাও প্রচলিত। দশমীর দিন ভক্তদের মধ্যে ভোগ বিতরণ করা হয়।


(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)


আরও পড়ুন: Weather Today: মেঘলা আকাশে ভ্যাপসা গরম, মহালয়ার দিনেও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস রাজ্যে