কমলিকা সেনগুপ্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

দিদি চলে গিয়েছেন অনেক দিন আগেই। আজ চলে গেলেন ভাই। তবে কীর্ণাহারের বাড়িতে মুছে যায়নি দিদি-ভাইয়ের সেই খেলনা-বাটির স্মৃতি। প্রণব মুখোপাধ্যায় এক এক সিঁড়ি বেয়ে যতই উপরের দিকে উঠুক না কেন; বিদেশমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী থেকে বঙ্গ সন্তানের রাষ্ট্রপতি হওয়া, আর তা নিয়ে বাঙালির উন্মাদনা- এ সব কিছুই এসে যায় না দিদি অন্নপূর্ণ মুখোপাধ্যায়ের কাছে। হোক না তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি, দিদির চোখে আজীবন সেই ছোট্ট পল্টু হয়ে রইলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।


সালটা ২০১২। প্রণবের রাষ্ট্রপতি পদের শপথ নেওয়ার দিনক্ষণ পাকা। সেই খবরও পৌঁছে গিয়েছে কীর্ণাহার গ্রামে। প্রথম বঙ্গ সন্তান রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন, তার উপর কীর্ণাহার গ্রাম থেকেই, উচ্ছ্বাসের বাধ মানছে না গ্রামবাসীদের। যাকেই জিজ্ঞাসা করছি, প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন, আপনার কেমন লাগছে? তাঁদের একটাই কথা, এমন আনন্দের দিন জীবনে খুবই কম এসেছে। প্রণব যে তাঁদের ঘরের ছেলে, এ কথা আলাদা করে বলার ছিল না।


কীর্ণাহারে প্রণবের বাড়ি ঢুকে বিশ্বাসই হচ্ছিল না, এই বাড়ির সন্তানই দেশের রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন। বাড়ির দরজা ঠেলে ঢুকতেই চোখে পড়ল বিশাল ধানের মড়াই। কীর্ণাহারের আর পাঁচটা সাধারণ বাড়ির মতোই ভাবী রাষ্ট্রপতির বাড়ি। তবে, তখন সাজো সাজো রব। এমন কোলাহল পরিবেশ বছরে এক বারই দেখা যায়। তা হলো দুর্গাপুজো। দেশের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, ঠিক ষষ্ঠীর আগের দিন এসে নিজের হাতে বাড়ির পুজো করতেন। এর মধ্যে কোনও দেখনদারি ছিল না।  ছিল না ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি।



প্রণবের রাষ্ট্রপতি হওয়া শুনে বাড়িতে যেন কর্মযজ্ঞ চলছে। আর তাঁর দিদি দালানের এক কোণে বসে পুরো বিষয়টা দেখভাল করছেন। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই রাষ্ট্রপতি হচ্ছে, কেমন অনুভূতি আপনার? মুখের হাসি যেন ধরে রাখতে পারছিলেন না অন্নপূর্ণাদেবী। এক গাল হেসে বলেন, "আমার কাছে ও পল্টুই থাকবে। সে বার প্রথম যখন এমপি হলো, রাষ্ট্রপতির ঘোড়া দেখিয়ে আমায় বলেছিল, দেখ দিদি রাষ্ট্রপতির ঘোড়াদের কী আরামের চাকরি! কী আরামে থাকে তারা"। আমি সে দিন বলেছিলাম, দেখিস তুইও একদিন রাষ্ট্রপতি হবি। আজ আমার কথা সত্যি হয়ে গেলো। বলতে বলতে দু'চোখে জল ভরে আসে অন্নপূর্ণাদেবীর।


আরও পড়ুন- যানযন্ত্রণায় JEE পরীক্ষার্থীরা, নিজেরাই গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছলেন পরীক্ষা কেন্দ্রে


দিদির কথায়, পড়া পাগল ছেলে সে। তিন মাইল হেঁটে নদী পার করে স্কুলে যেত। নদী পার করার সময়ে কোমরে গামছাটা বেঁধে নিত। আর বই থাকতো মাথার উপর। আজ সে দেশের রাষ্ট্রপতি! এ কম গৌরবের কথা! মাইলের পর মাইল হাঁটার অভ্যেস সেই ছেলেবেলা থেকেই। তাই হয়তো দেশের সাংবিধানিক শিখরে ওঠার পথ এত সহজ হয়ে গিয়েছিল। তবে, দিদির সৈই 'দৈববাণী' কানে বাজতই. "দেখিস তুইও একদিন রাষ্ট্রপতি হবি।"