WB Panchayat Election 2023: গণনার দিন রণক্ষেত্র ভাঙড়, গ্রেফতার `মূল অভিযুক্ত` আইএসএফের পঞ্চায়েত সমিতির জয়ী প্রার্থী
WB Panchayat Election 2023: গণনার দিন কাঁঠালিয়া স্কুলের গণনাকেন্দ্রের বাইরের এলাকায় রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। পুলিস-আইএস সংঘর্ষে ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। গণনাকেন্দ্রে আটকে পড়লেন আরাবুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে হাকিমুল ইসলাম
প্রসেনজিত্ সরদার: পঞ্চায়েত নির্বাচনের গণনার দিয়ে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল ভাঙড়ের কাঁঠালিয়া স্কুল। গুলি চালানায় মৃত্যু হয় ৩ জনের। গুলিবিদ্ধ হন এক পুলিস আধিকারিক। সেই ঘটনায় 'মূল অভিযুক্ত' ওহিদুল ইসলাম ওরফে ইদ্রিস আলি মোল্লাকে গ্রেফতার করল পুলিস। ভোগালি ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন ওহিদুল।
আরও পড়ুন-ভাঙড়ে গণনাকেন্দ্রের বাইরে তুমুল বোমাবাজি, গুলিবিদ্ধ অতিরিক্ত পুলিস সুপার
গতকাল রাতে উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর থেকে গ্রেফতার করা হয় ওহিদুলকে। গণনার দিন রাতে গণনাকেন্দ্রের বাইরে গুলি চলে। গুলিবিদ্ধ হন অতিরিক্ত পুলিস সুপার। পুলিস সূত্রে খবর, ওহিদুল একদিকে যেমন আইএসএফ নেতা তেমনি তিনি অঞ্চল সভাপতিও। গণনা কেন্দ্র গোলমালের পাশাপাশি মনোনয়ন পত্র দাখিলের সময়ে বিজয়গঞ্জ বাজারে যে গোলমাল হয়েছিল তাতেও অভিযুক্ত ওহিদুল। আজ তাকে বারুইপুর আদালতে তোলা হবে। তার সঙ্গে আর কারা জড়িত তা তদন্ত করে দেখছে পুলিস।
উল্লেখ্য, যে কাঁঠালিয়া স্কুলে গন্ডগোল হয়েছিল সেখানে একতদিন মোতায়েন ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই বাহিনী সরছে। খুলেছে স্কুল। কিন্তু এখনও আতঙ্কে শিক্ষক-পড়ুয়ারা। পরায় ২৭০০ পড়ুয়াদের মধ্যে আজ তাদের উপস্থিতি খুবই কম।
কী হয়েছিল গণনার দিন
গণনার দিন কাঁঠালিয়া স্কুলের গণনাকেন্দ্রের বাইরের এলাকায় রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। পুলিস-আইএস সংঘর্ষে ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। গণনাকেন্দ্রে আটকে পড়লেন আরাবুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে হাকিমুল ইসলাম। একের পর এক বোমা বিস্ফোরণে তুলকালাম কাঁঠালিয়া অঞ্চল। পুলিস রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়েছে বলে অভিযোগ করে আইএসএফের। অন্যদিকে, তৃণমূলের দাবি আইএসএফ পুলিস ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের উপরে হামলা চালিয়েছে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন অতিরিক্ত পুলিস সুপার ও তাঁর এক দেহরক্ষী।
ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকের কাঁঠালিয়া স্কুলে গণনা চলছিল। রাতে চলছিল জেলা পরিষদের গণনা। মোট ৩টি আসনের গণনা চলছিল। তার মধ্যে ২ আসনের ফল ঘোষণা হয়ে যায়। একটি আসনে জেতে আইএসএফ প্রার্থী। অন্যটিতে জেতেন তৃণমূল প্রার্থী। তৃতীয় আসনের কাউন্টিংয়ের সময়েই গন্ডগোলের সূত্রপাত। আইএসএফের তরফে দাবি করা হয়েছে ৫ হাজার ভোটে আইএসএফ এগিয়ে গিয়েছে বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনশোরের কিছু বেশি ভোটে তিনি হেরে গিয়েছেন বলে জানানো হয়। এতেই শুরু হয়ে যায় তৃণমূল ও আইএসএফ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ। কাউন্টিং সেন্টারের মধ্যেই দুপক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়ে যায়। পুলিস সূত্রে খবর সেইসময় গুলি চালনার ঘটনা ঘটে যায়। তাতেই গুলিবিদ্ধ হন অতিরিক্ত পুলিস সুপার পদমর্যাদার এক অফিসার। গুলি লাগে তাঁর হাতে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর দেহরক্ষীও গুলিবিদ্ধ হন।
ওই ঘটনার পরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত সেন্ট্রাল ফোর্সের জওয়ানরাও পাল্টা জবাব দেন। এতেই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় জনতা। তবে কাউন্টিং সেন্টার থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে তারা দাঁড়িয়ে পড়ে। চারদিকে অন্ধকার। ঘনঘন বোমা পড়তে থাকে। পুলিসের ওই রিট্যালিয়েটরি ফায়ারে কেউ আহত হয়েছে কিনা তা জানা যাচ্ছে না। তবে এটা জানা যাচ্ছে যারা আহত হয়েছেন তারা এলাকা থেকে বের হতে পারেননি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বারুইপুর পুলিস ডিরেক্টরের এসপি বিশাল একটি বাহিনী নিয়ে কাশীপুর থানায় রয়েছেন। আনা হচ্ছে আরও পুলিস। সবেমিলিয়ে পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
ওই গ্রেফতার নিয়ে তৃণমূলের আইটি সেলের ইনচার্জ দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, ভাঙড়ের গন্ডগোলটাই প্রি-প্ল্যানড। বিজেপি-তৃণমূল মদত ছিল। গণনার দিন এক পুলিস অফিসারের গুলি লাগে। এই আইএসএফ নেতা জড়িত ছিল। তাহলে কাদের প্রার্থী করে আইএসএফ।
অন্যদিকে, ওই গ্রেফতার নিয়ে ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি বলেন, যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি আমাদের একজন অঞ্চল সভাপতি ও পঞ্চায়েত সমিতির জয়ী প্রার্থী। ওকে বলা তুই তৃণণূলে জয়েন কর। তা না হলে তোর নামে মিথ্যে কেস দেব। পুলিস বহুবার ওর বাড়ি গিয়েছে। তল্লাশির নামে তোলপাড় করেছে। ফলে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। ওকে মিথ্যে কেস দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা আইনের সাহায্য নেব।