অরূপ লাহা: আইটিআই ডিপ্লোমা করেও কোনও চাকরি পাননি পূর্ব বর্ধমানের উচালনের বাসিন্দা সুজিত দাঁ। এখন ট্রাক্টর চালিয়ে রোজগার করেন। তবে মধ্যে কোনও চমক নেই। চমক হল, জন্ম থেকেই দুটো হাত নেই সুজিতের। ছেলের জন্ম দেওয়ার পর সন্তানকে দেখে জ্ঞাণ হারিয়েছিলেন সুজিতের মা। সেই সময় অনেকে যুক্তি দিয়েছিল শৈশবেই তাকে মেরে ফেলতে। সৌভাগ্যক্রমে তা হয়নি। এখন সেই সুজিতই সংসার চালাচ্ছেন অসাধ্য সাধন করে। তিনিই এখন অনেকের প্রেরণা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন-আধারের পর নয়া গেরো, এক পরিবারের একটাই আইডি! আসছে...


যৌথ পরিবারে বড় হয়েছেন সুজিত। ছোট বয়সেই বাবা স্বপন দাঁকে হারান। বাড়িতে বিধবা মা পুতুলদেবী-সহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। সুজিত জানিয়েছে,হার না মেনে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার প্রেরণাটা ছোট বয়সে তাঁকে যে ব্যক্তি যুগিয়েছেন তিনি হলেন গ্রামের মাষ্টারমশাই শক্তিপদ ভট্টাচার্য্য। পায়ে পেনসিল গুঁজে দিয়ে হাতে করে পা ধরে ওই মাষ্টারমশাই তাঁকে লেখা পড়া শিখিয়েছেন। তার পর থেকে পায়ে করে লিখেই 
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পাশাপাশি আইটিআই (ITI) সার্ভে ডিপ্লোমা কোর্সও সম্পূর্ণ করেছেন। সুজিত দাঁ জানান, তিনি আইটিআই পাস করার পর ডিভিসির চাকরির পরীক্ষায় বসে পাসও করেন। প্যানেলে তাঁর নামও উঠেছিল। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্য রাজনীতিতে পালাবদলের পর সব কোথায় কী হয়ে যায় তার কিছুই তিনি জানতে পারেননি।



পড়াশোনা শেষ করে চাকরি না পেয়ে ঘরে বসে থাকেননি সুজিত। পরিচিত চালকের সাহায্য নিয়ে তিনি দুই পা দিয়েই ট্র্যাক্টর চালানো শেখেন । সুজিত জানান,ট্র্যাক্টর চালিয়েই তিনি  প্রথম  উপার্জন করা শুরু করেন। এখন ট্র্যাক্টর চালানোর পাশাপাশি ধানের ব্যবসাও করেন। সম্প্রতি খুড়তুতো ভাইয়ের সঙ্গে পার্টনারশিপে স্পেয়ার পার্টসের ব্যবসাও শুরু করেছেন বলে সুজিত জানান। কিন্তু দোকানে ব্যবসার খাতা সারা ,খরিদ্দারকে মালপত্র দেওয়া এসব কাজ করেন কিভাবে? উত্তরে সুজিত জানান, এই সবকিছু তিনি পায়ে করেই করেন। আর অ্যানন্ড্রয়েড ফোন পায়ে ধরে নিয়েই তিনি অন্যের সঙ্গে কথা বলেন। এমনকি  হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক এইসবও তিনি পায়ে করেই করেন। খাওয়া দাওয়া করতে সমস্যা হয় না? এর উত্তরে সুজিত জানান ,বাড়িতে থাকলে মা খাইয়ে দেন। বাইরে থাকলে চামচ পায়ের আঙুল দিয়ে ধরে নিয়ে খাবার তুলে খান।


বিশেষভাবে সক্ষম সুজিত দাবি করেন,”পা দিয়ে তাঁকে  সবকিছু করতে হয় বলে তাঁর কোন আক্ষেপ নেই। বরং নিজেকে নিয়ে তিনি গর্ববোধ করেন। কারণ হাত না থাকলেও শুধমাত্র দু’পা দিয়েও যে জগতের সবকিছুকে জয় করা যায় ,সেটা তিনি করে দেখাতে পরেছেন”। এত কিছুর পরেও সুজিত দাঁয়ের আক্ষেপ,’সরকার বা প্রশাসন  কেউ তাঁর পাশে দাঁড়ালো না ।কোথাও একটা স্থায়ী চাকরি পেলে তাঁর অনেক উপকার হতো। 



মা পুতুলদেবী বলেন,’’ছেলেকে জন্ম দেবার পর যখন দেখি আমার ছেলের দু'টি হাতই নেই। তখন আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি ।জ্ঞান ফেরার পর শুধুই কেঁদেছি।অনেক ব্যঙ্গ বিদ্রুপ  আমায়  সহ্য করতে হয়েছে।পরিবারের সবাই পাশে ছিল বলে ছেলে সুজিত সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে“। পায়ে করে লেখাপড়া শিখে ছেলে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা যখন দেয় ওই মাসেই আমার স্বামী মারা যান। পুতুলদেবী গর্বের সঙ্গে বলেন, “নিজের  প্রচেষ্টায় ও ঈশ্বরের কৃপায়  আজ আমার ছেলে সুজিত শুধু নিজেই সাবলম্বী হয়নি,অন্য প্রতিবন্ধীদেরও জীবন সংগ্রামের দিশা  দেখাচ্ছে“।


সুজিতের ছোট কাকু তুলসী দাঁ বলেন,“দু’হাত  না থাকা অবস্থায় ভাইপো সুজিত জন্মানোর পর অনেকেই ওকে প্রাণে মেরে দেবার যুক্তি দিয়েছিল।কিন্তু বাড়ির প্রথম  সন্তানের  জীবন কেড়ে নেওয়ার যুক্তি তাঁরা কেউ মানেননি । আজ ভাইপো তাঁর দুটি পা-কে সম্বল করেই  সাবলম্বী হয়েছে। সাধারণ মানুষ দু'হাতে করে যা যা করে তার ৯০ শতাংশ সুজিত পায়ে করেই করে“। তুলসীবাবু জানান,সরকার বা প্রশাসন কোথাও একটা স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করে দিলে ভাইপো সুজিতের খুবই উপকার হতো। 


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 


https://play.google.com/store/apps/details?id=com.zee24ghanta.news