ভবানন্দ সিংহ: অমানবিকতার সাক্ষী রইল কালিয়াগঞ্জ। টাকার অভাবে অ্য়াম্বুল্যান্স না পেয়ে মৃত শিশুকে ব্যাগে করে শিলিগুড়ি থেকে কালিয়াগঞ্জের বাড়ীতে ফিরলেন মৃত শিশুর অসহায় বাবা। ঘটনা জানাজানি হতেই জেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওই শিশুকে নিয়ে গিয়েছিলেন শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। সেখানেই ওই ৫ মাসের শিশুর মৃত্যু হয়। তার পরই শুরু হয় সমস্যা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন-আইসিএসইতে প্রথম স্থানে বর্ধমানের সম্বিত্, আইএসসিতে কলকাতার মান্য ও ভক্তিনগরের শুভম  


কালিয়াগঞ্জ ব্লকের মুস্তাফানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙ্গিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অসীম দেবশর্মার স্ত্রী যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছিল। পাঁচ মাস পর দুই শিশু সন্তানের অসুস্থ হয়ে পড়ে। গত রবিবার তাদের দুইজনকেই কালিয়াগঞ্জ ষ্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাদের উত্তরবঙ্গ  মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।



বৃহস্পতিবার এক শিশুকে নিয়ে বাড়ী ফিরে যায় অসীম দেবশর্মার স্ত্রী। চিকিৎসা চলাকালীন শনিবার রাতে মৃত্যু হয় অপর শিশুটির। পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক অসীম দেবশর্মা অর্থের অভাবে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কোন অ্যাম্বুলেন্স জোগার করতে পারেননি। শেষপর্যন্ত রবিবার ভোরে মৃত ছেলের মৃতদেহ একটি ব্যাগে ভরে বেসরকারি বাসে করে রায়গঞ্জ পৌছান। পরবর্তী সময়ে অপর একটি বাসে চেপে কালিয়াগঞ্জে ফেরেন। অসীম দেবশর্মা জানিয়েছেন, মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ৮ হাজার টাকা দাবী করে। এমনিতেই চিকিৎসা বাবদ ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। তাই বাসে করেই ছেলেকে নিয়ে বাড়ী ফিরেছেন।



এদিকে এই ঘটনার খবর পেয়ে কালিয়াগঞ্জের বিজেপি নেতৃত্ব কালিয়াগঞ্জ থেকে অ্যাম্বুলেন্স এর ব্যবস্থা করে মৃত সন্তান নিয়ে অসীম দেবশর্মাকে তার গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। বিজেপি নেতা গৌরাঙ্গ দাস বলেন, এটা খুবই কষ্টদায়ক ঘটনা। ঘটনার খবর পেয়েই কোন রাজনৈতিক ভাবে নয় মানবিকতার খাতিরে একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। অন্তত বাড়ী অবধি মৃত শিশুটিকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যেতে পারে শিশুটির অসহায় বাবা।  তবে এই ঘটনায় গরিব ও অসহায় মানুষের এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন গৌরাঙ্গবাবু।



তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নিতাই বৈশ্য বলেন, শিলিগুড়িতে ২ যমজ বাচ্চার একটি মারা যায়। সেই শিশুটিকে আনার যে প্রক্রিয়া তা অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। মিডিয়ার মধ্য দিয়েই তা জানতে পেরেছি। খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমরা যদি জানতাম তাহলে একটা চেষ্টা করতাম। আগেও এরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে কিছু বলা হয়নি। হাসপাতালে যদি দালাল চক্র থাকে তাহলে তা জানানোর জন্য পুলিস ফাঁড়ি রয়েছে। এরকম কোনও ঘটনা হলে তা পুলিসকে জানানো উচিত ছিল। হয়তো গ্রামের মানুষ তা হয়তো করে উঠতে পারেনি। 


শিশুটির বাবা অসীম দেবশর্মা বলেন, ডাক্তার বলল ইনফেকশন হয়েছে। রায়গঞ্জ থেকে শিলিগুড়ি ট্রান্সফার হয়েছিল। বড় বচ্চাটা সুস্থ হচ্ছিল, অন্যটা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ল। সেলাইন দেওয়া হয়েছিল। পাইপ দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছিল। এভাবেই ছিলাম। শেষপর্যন্ত বাচ্চাটা শনিবার রাতে মারা গেল। মারা যাওয়ার পর শিলিগুড়ি থেকে নিয়ে আসার সময়ে অ্যাম্বুল্যান্স ফ্রি পাইনি। কথা বলে জানতে পারি কালিয়াগ়্জ থেকেও কিছুটা যেতে হবে। মোট ৮ হাজার টাকা লাগবে। এরকম ২টো গাড়িকে বলেছিলাম। অত টাকা নেই। কীভাবে নিয়ে যাব। শেষপর্যন্ত শিলিগুড়ি থেকে বাসে চাপে নিয়ে এলাম। দুশো টাকা দিয়ে ব্যাগে করে বডি নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে এলাম। সেখান থেকে বাসে কালিয়াগঞ্জে এলাম। সেখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে বডি বাড়ি নিয়ে এলাম।


এদিকে, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সাফ কথা, শিশুটি মারা যাওয়ার পর তার বাবার য়ে অবস্থা খারাপ বা তার যে অ্য়াম্ুল্যান্স নিয়ে সমস্য়া হচ্ছে, বেশি টাকা চাওয়া হচ্ছে তা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি। যদি জানানো হতো তাহলে হয়তো কোনও ব্যবস্থা হতো। পাশাপাশি যে অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা বেশি চাকার দাবি করেছেন বলে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারণ উত্তরবঙ্গে মেডিক্যাল কলেজে বাইরের কিছু অ্যাম্বুল্য়ান্স এসে বেশি টাকা দাবি করেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)