Karar Oi Louho Kapat: `রহমানের কারার ওই লৌহকপাট বাংলা সংস্কৃতি ও ইতিহাসের উপর আঘাত`, তীব্র প্রতিবাদ গিরীন কন্যার!
গানের মর্মবস্তুকেই পালটে দেওয়া অসমীচীন। এই গানের একটা ইতিহাস আছে। গানটি গম্ভীর কিন্তু আবেগদৃপ্ত। এই গানটি শ্রতিমধুর কিন্তু হৃদয়ের তন্ত্রীতে বিদ্রোহের ইঙ্গিত জাগায়। এর সাথে জড়িয়ে স্বাধীনতার তীব্র আবেগ।
পার্থ চৌধুরী: নজরুল সংগীত 'কারার ওই লৌহকপাট' গান নিয়ে বিতর্ক। বিতর্ক এ আর রহমানের সুর নিয়ে। সেই বিতর্ক প্রসঙ্গে এবারে মুখ খুললেন নজরুলগীতি শিল্পী এবং গিরীন চক্রবর্তীর কন্যা চন্দা চট্টোপাধ্যায়। 'কারার ওই লৌহকপাট' গানে নতুন সুর এ আর রহমানের কালোয়াতি বাংলা সংস্কৃতির উপর আরও একটা আঘাত বলেই মনে করেন তিনি। এখন জানার বিষয়, কে এই গিরীন চক্রবর্তী? যে গানটা শুনে বাঙালি বড় হয়ে উঠেছে; যে গানটা শুনলেই হৃদয়ের গভীরে জেগে ওঠে প্রতিবাদের শপথ; দেশপ্রেমের আবেগ, সেই গানেরই প্রথম রেকর্ড করেন নজরুল সুহৃদ গিরীন চক্রবর্তী।
চন্দা মনে করেন, এ আর রহমান এই গানের লিরিক্সটুকুও পড়েননি। পড়লে এই রকম কাজ তাঁর মত নামী শিল্পীর হাত থেকে বের হত না। এটা একটা প্রতিবাদের গান। চন্দার বাবার 'কাজীদার গান'। তবে তিনি এও মনে করেন, যুগের সঙ্গে গানের পরিবেশন পালটাতেই পারে। কিন্তু গানের মর্মবস্তুকেই পালটে দেওয়া অসমীচীন। এই গানের একটা ইতিহাস আছে। গানটি গম্ভীর কিন্তু আবেগদৃপ্ত। এই গানটি শ্রতিমধুর কিন্তু হৃদয়ের তন্ত্রীতে বিদ্রোহের ইঙ্গিত জাগায়। এর সাথে জড়িয়ে স্বাধীনতার তীব্র আবেগ।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে স্বদেশ প্রেমের পটভূমিকায় এই গানটি কবি নজরুল ইসলাম রচনা করেন ১৯২১ সালে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ কারাগারে থাকাকালীন তাঁর পত্নী বাসন্তী দেবীর অনুরোধে কবি নজরুল এই গানটি লেখেন। বাসন্তী দেবী গানটি প্রথম বাঙলার কথা পত্রিকায় প্রকাশ করেন। গানের আদি শিল্পী গিরীন চক্রবর্তী। গানটি কলাম্বিয়া রেকর্ড ১৯৪৯ এবং এইচএমভিতে ১৯৫০ সালে গিরীন চক্রবর্তীর কন্ঠে ধারণ করে। ভারত বিশেষত বাংলায় স্বাধীনতার আন্দোলনে এই গান ছিল প্রেরণার উৎস। ৭০-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও এই গান ছিল অক্সিজেন।
১৯৪৯ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন সিনেমায় গিরীন চক্রবর্তী 'কারার ওই লৌহকপাট' গানের প্রচলিত সুরটি প্রয়োগ করেন। সুরটি জনমানসে সমাদৃত হয়। জহির রায়হানের 'জীবন থেকে নেওয়া' সিনেমাতেও এই সুরটি-ই রাখা হয়। গানটি কবি লিখেছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রীর অনুরোধে। তাঁরা জেলে এই গানটি গাইতেন বলেও জনশ্রুতি আছে। ইংরেজ সরকার 'ভাঙার গান' বাজেয়াপ্ত করলে মূল সুরটি হারিয়ে যায়। ইংরেজ শাসনের সমাপ্তি ঘটলে গিরীন চক্রবর্তী এতে সুরারোপ করেন। ততদিনে কবি বাকরুদ্ধ!
গত ৭৪ বছরে এই সুরে আর কেউ নতুন করে হাত লাগাননি। এবারে হাত লাগালেন এ আর রহমান। যদিও চন্দা মনে করেন, রহমানের মত লেজেন্ড এই গানে কাজ করায় আবার নতুন করে আলোচনার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু বাংলা গানের আবেগ এবং এই গানের দৃপ্ত ভঙ্গিমার প্রতি সুবিচার হল না। এর প্রতিবাদ হচ্ছে। আর সেটা হওয়া উচিত।
কাজী নজরুলের চেয়ে বয়সে অনেক ছোট হলেও বাংলাদেশের ব্রাক্ষণবাড়িয়া গ্রামের প্রতিভাবান যুবক গিরীন চক্রবর্তী ছিলেন 'কাজীদা'র অভিন্নহৃদয় বন্ধু। গায়ক, সুরকার, আড্ডাবাজ, কুস্তিগির গিরীনের সঙ্গে 'কাজীদা'র অন্তরঙ্গতার অনেক গল্প ছিল তখন। লোকসঙ্গীত এবং অনেক অন্য গান এবং নজরুলগীতির শিল্পীও ছিলেন গিরীন। তাঁর অনেক গান আজও পপুলার। তাঁর সুর করা জনচিত্তজয়ী নজরুলগীতির মধ্যে আছে 'মোরা আর জনমে'; 'বনবিহঙ্গ যাওরে উড়ে'; 'আজি আকাশ মধুর'; 'নদী এই মিনতি তোমার কাছে'; 'আমি কুল ছেড়ে চলিলাম', 'কাবা জিয়া রাতে'। এছাড়াও নজরুলের অনেক ইসলামিক গানের সুরকার ছিলেন গিরীন।
তাঁর অনেক লেখা-সুর করা লোকগান কালের গন্ডি পেরিয়ে আজও জনপ্রিয়। প্রচুর রিমিক্সও হয়েছে তার। সেই নামী শিল্পী, সুরকার চলচ্চিত্রবেত্তা গিরীন চক্রবর্তী আজ বিস্মৃতির আড়ালে। মফস্বল বর্ধমানে বসে চর্চার ধারাটুকু বাঁচিয়ে রেখেছেন একমাত্র কন্যা। তিনি মনে করেন বাংলা ও ভারতের নতুন প্রজন্মের কাছে দেশপ্রেমের পবিত্র আবেগকে সঞ্চার করা প্রয়োজন। কিন্তু এভাবে নয়।
আরও পড়ুন, Karar Oi Louho Kapat: নজরুলের 'কারার ঐ লৌহকপাট'-এর অর্থই নষ্ট হয়ে গিয়েছে! কটাক্ষের মুখে রহমান
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)