নিজস্ব প্রতিবেদন: বামন হয়ে সত্যি চাঁদ ছোঁয়া যায়, হাতেনাতে প্রমাণ দিলেন পবিত্র। বলা ভাল প্রমাণ করালেন তিনি। নিজে বামন না হলেও তাঁর সহকর্মী বামনদের নিয়ে এক অন্য লড়াইয়ে মেতে রয়েছেন অসমের পবিত্র রাভা।  


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

স্বপ্নকে শুধুমাত্র সম্বল করেই পথে নেমে পড়েছিলেন একদিন। নিজে দীর্ঘকায় হলেও খাটোকে কখনও খাটো করে দেখেননি। ছুঁতে চেয়েছিলেন আকাশ। তবে 'একঝাঁক' বামনকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চান ওই পথে। শুধুই কি তাঁর সখ? নাকি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে?



ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে পাশ করে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন পবিত্র রাভা। সেখানে বেশ কয়েকটা কাজও জুটিয়েছিলেন। কিন্তু মনে ধরেনি পবিত্রর। ফের বেরিয়ে পড়েন। নিজেই একটি নাট্যদল তৈরি করবেন বলে পরিকল্পনা করেন পবিত্র। যেমন ভাবা তেমনি কাজ! 'দাপন, দ্য মিরর' নামে একটি নাট্যদল তৈরি করে ফেললেন। অসমিয়ায় 'দাপন' মানে দর্পন। কিন্তু সেই দর্পনে প্রতিচ্ছবিতে একমাত্র নিজেকেই দেখতে পেতেন! পবিত্র দেখতে চেয়েছিলেন, এক ছাদের তলায় সে সব মানুষদের, যারা শুধু খর্বকায় বলে 'একঘরে' করে রাখে সমাজ। বিদ্রুপ, তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞাই যেন তাঁদের জন্মগত অধিকার। তাঁদের এই লাঞ্ছনা মেনে নিতে পারেননি পবিত্র। তিনি ঠিক করেন, তাঁর নাট্যদলে জায়গা পাবেন সেই সব বামনরাই। 'চাঁদ ধরা' নিয়ে বিদ্রুপ করতে যাদেরকে ধার করা হয়, তাঁরাই সত্যি একদিন চাঁদ ছোঁবে। এই ধনুকভাঙা পণ নিয়ে জোগাড় করতে থাকন বামন। চার বছর ধরে ঘুরে দেশের বিভিন্ন খুঁজে নিয়ে এলেন বেশ কয়েকজনকে। এই কাজ করতে গিয়ে বারবার বাধার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে, রটেছে কুত্সাও। কেউ বলেছে সার্কাস দলের 'দালাল'। তিনি কোনও কিছুতেই পাত্তা দেননি। ৩০-৩৫ জনের বামন নিয়ে দল তৈরি করেন পবিত্র।



আরও পড়ুন- শিলিগুড়ির গুগল-গার্ল, প্রশ্ন করলেই পাবেন উত্তর


২০১১ তে বামনদের নিয়ে যাত্রা শুরু পবিত্রের। আর পিছনে তাকাতে হয়নি। একের পর এক শিখর জয় করেছে 'দাপন, দ্য মিরর' নাট্য দল। অসমের উদালগুড়ির টংলায় তাদের নিয়ে আস্ত একটা বামন গ্রামও তৈরি করেন। প্রতিদিনের কাজকর্মের মাঝে নাট্যচর্চাই অন্যতম কাজ হয়ে দাঁড়ায় ওই গ্রামের বাসিন্দাদের। 


২০১১ তে শিলিগুড়ি এসেছিলেন রঞ্জিত দাস। সার্কাসের জোকারের কাজ করতেন রঞ্জিত। তিনি বলেন, “তখন মানুষ হাততালি দিত, এখনও দেয়। কিন্তু এখন সম্মান ও শ্রদ্ধা পাই। আমরা বামন হলেও ছোট নই। ভাল আছি।”



দলের অন্য এক সদস্য ম্যাক্স। ম্যাক্স বলেন, “নামটা বড় তাই ছোটো করে সবাই ম্যাক্স নামে ডাকে। আমি স্কুলে পড়াতাম। বামন বলে লোকে টিটকিরি দিত। কিন্তু, আমি লম্বা না হলেও আর পাঁচজনের মতোই সব কাজ করতে পারি। তা এই নাটকের মাধ্যমে লোককে বলছি। ২০১১ থেকে টংলার গ্রামে এই দলের সঙ্গেই রয়েছি। একটা সময় বাঁচতেই চাইতাম না। আর এখন নিজের শিল্পকর্ম আরও বেশি করে ছড়িয়ে দিতে চাই। বাঁচার রসদ আমাদের দলের নাটক।”


আরও পড়ুন- আন্দোলন ও হিংসার প্রভাবে বিপন্ন 'ব্র্যান্ড দার্জিলিং', তিন মাসে ক্ষতি ১০০ কোটির বেশি



নাট্য নির্দেশক পবিত্র রাভা


ঋত্বিক নাট্য উৎসবে বৃহস্পতিবার নাটক মঞ্চস্থ করল 'দাপন, দ্যা মিরর'। নাটকের নাম, কিনু কও (কী বলব)। অত্যন্ত সাবলীলভাবে নাটক মঞ্চস্থ করে আরও একবার দর্শকদের হাততালি কুড়িয়ে নিলেন নাট্যদলের সদস্যরা। নাট্য নির্দেশক পবিত্র রাভা জানালেন, “উপেক্ষিত বামনদের নিয়ে কিছু করার তাগিদেই কাজ শুরু করেছিলাম। সেই থেকে পথ চলা। এখনও চলছেই। দেশ জুড়ে শো করছি। খর্বকায় মানুষগুলিকে একত্রিত করেছি, বুঝিয়েছি, সাহস দিয়েছি। তাঁদের দুঃখ, বেদনাকে নাটকের মাধ্যমে প্রকাশ করেছি। আর চেয়েছি এদের তাচ্ছিল্য না করে সমাজ এদের নিয়ে ভাবুক। গত ছ’বছরে দারুণ সাফল্য পেয়েছে নাটক 'কিনু কও'। আগামী বছর নতুন আরও একটি নাটক মঞ্চস্থ করব আমরা। সেখানেও মুখ্য ভূমিকা নেবে বামনরাই।”


বামনদের কাছে পবিত্রই এখন 'চাঁদ সওদাগর'।