kalipuja 2023: মাথার খুলির উপর বসে চলে তন্ত্রসাধনা, কালীপুজো উপলক্ষে এই মহাশ্মশানে ভিড় জমান তান্ত্রিকরা
শোনা যায়, এক সময় এখানে শব সাধনাও চলত। লোকমুখে শোনা যায়, প্রতি রাতে এ তল্লাটে নাকি অপঘাতে মৃত ব্যক্তিদের আত্মা ঘুরে বেড়ায়। এক সময় আদিগঙ্গার পাড়ে ঘন জঙ্গল ঘেরা শ্মশানে কালীর আরাধনা শুরু করেছিলেন তান্ত্রিকরা।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বাংলার কালী সাধকরা গঙ্গার তটকেই বেছে নিয়েছিল কালীসাধনার ক্ষেত্র হিসেবে। নদী তীরবর্তী অঞ্চল যেকোন ধরণের সাধনার জন্যই উৎকৃষ্ট স্থান বলে বিবেচিত হয়। প্রান্ত সাধনার ক্ষেত্রে ত্রিভুজ আকৃতির ভূমি তন্ত্রসাধনার ক্ষেত্রে আদর্শ ভূমি হিসাবে বিবেচিত হয়। বহু কালী সাধকেরাই সাধনার স্থান হিসেবে আদি গঙ্গার পাড়কে নির্বাচন করেছিল। আদি গঙ্গার তীরে গড়ে উঠেছিল একাধিক কালী মন্দির। প্রায় কয়েকশো বছর আগে আদি গঙ্গার পাড়ে তৈরি হয়েছিল এই মন্দির।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মথুরাপুরের সাতঘরা ঠাকুরঝি গ্রামের যজ্ঞবাটি মহাশ্মশানে কয়েক’শো বছর ধরে পূজিত হয়ে আসছেন মা যজ্ঞেশ্বরী কালী। জনশ্রুতি রয়েছে, কোনও এক সময়ে বহু সন্ন্যাসী বা তান্ত্রিক সেই কালী ক্ষেত্রে সাধনা করতে আসত। সেই শ্মশানেই তৈরি হয়েছে এই মন্দির। শোনা যায়, এক সময় এখানে শব সাধনাও চলত। লোকমুখে শোনা যায়, প্রতি রাতে এ তল্লাটে নাকি অপঘাতে মৃত ব্যক্তিদের আত্মা ঘুরে বেড়ায়। এক সময় আদিগঙ্গার পাড়ে ঘন জঙ্গল ঘেরা শ্মশানে কালীর আরাধনা শুরু করেছিলেন তান্ত্রিকরা।
আরও পড়ুন, kalipuja 2023: রক্তভেজা মাটিতে অধিষ্ঠিতা ৬০০ বছরের কালী! কেন তাঁর মূর্তি নেই, বেদি নেই?
কালের নিয়মে জঙ্গল না থাকলেও এখনও শ্মশান চত্বরে নির্জন পরিবেশ। চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য সমাধি।অধুনালুপ্ত আদি গঙ্গার তীরে অবস্থিত এই শ্মশান। সেখানেই রয়েছে তিন চূড়া বিশিষ্ট মন্দির। সেখানেই পূজিত হন মা যোগেশ্বরী কালী। তন্ত্র মতে, নৈবেদ্য হিসেবে দেবীকে অর্পন করা হয় মদ, মাংস ও ছোলা। এক সময় ছত্রভোগ হয়ে নীলাচলে যাওয়ার পথে এই শ্মশানেই নাকি বিশ্রাম নিয়েছিলেন স্বয়ং চৈতন্য মহাপ্রভু। সেদিক থেকে বিচার করলে এই জায়গার বিশেষ মাহাত্ম্য।
আগে এই জায়গায় বৈরাগী সম্প্রদায়ের মানুষের সমাধি দেওয়া হত। অনেকের ধারণা, বৈরাগীরা সমাধিকে ‘যজ্ঞবাড়ি’ বলত, তাই এই এলাকার নাম হয়ে যায় যজ্ঞবাটি। পরবর্তী কালে অপঘাতে মৃত শিশুদের দেহ সমাধিস্থ করা হত এই জায়গায়। প্রাচীন এই শ্মশানকে ঘিরে রয়েছে নানা কাহিনী। মূলত সুন্দরবন এলাকার তান্ত্রিকরা তন্ত্র সাধনার জন্য এই শ্মশানে আসতেন। জঙ্গল ঘেরা পরিবেশে তন্ত্র সাধনা করতে প্রথম আসেন শিবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক তন্ত্র সাধক।
সেই সময়কালে সাধারণ মানুষেরা ভয়ে এই শ্মশানের সীমানা পার হত না। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়াতে সেই ভয় অনেকটাই ঘুছে গিয়েছে। এই কালী মন্দিরের বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে এই কালীমন্দিরে দশ মহাবিদ্যার রূপ ফুটে উঠেছে। এখনো বেল গাছ তলায় পঞ্চমুন্ডের আসন রয়েছে। যে আসলে বসে বহু সাধকেরা তারা তন্ত্র সাধনা ওরে সিদ্ধি লাভ করেছে। এই মহাশ্মশানে এখনও রয়েছে নর মন্ড যা দেখি রীতিমতো গায়ের শিহরণ জেগে উঠে।
এই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত অময় মুখোপাধ্যায় জানান, এই জায়গায় নীরবে তন্ত্রসাধকেরা কালীমূর্তি পূজা করত। কালী পূজার দিন বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা করা হয় তন্ত্র মতে এই পুজো সম্পন্ন করা হয়। কালীপুজোর দিন এখনো বহু সাধকেরা এই মহাশ্মশানে আসেন। নরমন্ড দের সেবা দেওয়ার পর মায়ের পুজো শুরু হয়। এখানে শিবা ভোগের ব্যবস্থা রয়েছে। মাকে আমিষ ভোগ নিবেদন করা হয়।
এই পুজোকে ঘিরে অনেক লোক শ্রুতি রয়েছে। কালীপুজোর দিনে বহু ভক্তবৃন্দ এই মন্দিরে ভিড় জমায়। এই বিষয়ে এক সাধক তপন গোস্বামী তিনি জানান, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যখন চক্র তীর্থে যাচ্ছিল তখন তিনি এখানে এসে তিনি বিশ্রাম করেন এবং যজ্ঞ করেনছিল। তিনি আনুমানিক ৫২৬ বছর পূর্বে তিনি এই অঞ্চলে এসেছিলেন। আদি গঙ্গার ধারা এখনো এই এলাকার মাটির নিচে থেকে বয়ে চলেছে। কালী পূজার দিনে মহাকালকে ভোগ নিবেদন করা হয়।
এই মহাশ্মশানে নানান অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী রয়েছে। এই মহাশ্মশানে এখনো নর মুন্ডুকে পূজিত করা হয়। তন্ত্রসাধকেরা এখনো এই মহাশ্মশানে তন্ত্রবিদ্যার সাধনা করার জন্য এই মহাশ্মশানে আসে। আগে ছাক বলিদান প্রথা থাকলেও কালের নিয়মে বলিদান প্রথা অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কালীপুজোয় এখনও এই এলাকার তান্ত্রিকেরা এই মহাশ্মশানে তাদের সাধনা করতে ভিড় জমায়। এই মহাশ্মশানের মা জাগ্রত মহাশ্মশানের মায়ের কাছে পুজো দেওয়ার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে লোকেরা ছুটে আসে।
আরও পড়ুন, kalipuja 2023: দামোদরের গভীর থেকে উদ্ধার কঙ্কালেশ্বরী! চৈতন্যদেবের সঙ্গে কী যোগ এই কালীর?
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)