Murshidabad: বন্যার দুঃখস্রোতে খুশির তরঙ্গ শুধু নৌকাতেই! পুজোর মুখে তরণীশিল্পে প্লাবন...
Murshidabad: এই শাখা পদ্মার ওপারে ভারতীয় ভূখণ্ডে অনেকগুলি গ্রাম রয়েছে। রয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর কৃষিজমি। বর্তমানে মূল পদ্মায় জলস্তর বাড়ায় পদ্মার শাখানদীর সঙ্গে সঙ্গে নালাগুলিতেও ব্যাপক জল বেড়েছে। নালা উপচে কৃষিজমি জলমগ্ন হয়েছে। এমনকী কোথাও কোথাও গ্রামের সীমানা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে পদ্মার জল।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: কারও সর্বনাশ তো কারও পৌষমাস-- কথাটি বহু ব্যবহারে পচে গিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি যা, তাতে অন্য কোনও জুতসই তুলনা না পেয়ে এরই শরণ নিতে হচ্ছে। মুর্শিবাদের একাংশে ছবিটা তেমনই। কেমন ছবি?
শাখা-পদ্মার বুকে আছড়ে পড়ছে ছোট ছোট ঢেউ। ঘাটে তখন বাঁধা গোটাতিনেক নৌকা। একটু দূরেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বাঁশের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়েছে গোটাপাঁচেক তাঁবু। কাছে যেতেই দেখা গেল, তাঁবুর নীচে কোথাও চলছে শেষ মুহূর্তে নৌকা জোড়াতালির কাজ, কোনও তাঁবুর নীচে আবার এক মনে ডোঙা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা।
রানিনগর, সাগরপাড়া, জলঙ্গির শাখানদী, নালাগুলিতে জল বাড়ায় নদীপাড়েই এভাবে তাঁবু খাটিয়ে চলছে নৌকা-ডোঙা তৈরি, সঙ্গে সারাইয়ের ধুম। দ্রুত কাজ শেষ করতে ভাড়ায় আনা হচ্ছে নৌকা তৈরির কারিগরদের। মূল পদ্মা থেকে বেরিয়ে মুর্শিদাবাদের রানিতলা, রানিনগর, সাগরপাড়া, জলঙ্গির বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত হয়েছে পদ্মার এই শাখানদী। মূল পদ্মার বেশিরভাগ অংশ বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলেও শাখা পদ্মা ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্য দিয়েই বয়ে গিয়েছে।
এই শাখা পদ্মার ওপারে ভারতীয় ভূখণ্ডে অনেকগুলি গ্রাম রয়েছে। রয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর কৃষিজমি। বর্তমানে মূল পদ্মায় জলস্তর বাড়ায় পদ্মার শাখানদীর সঙ্গে সঙ্গে নালাগুলিতেও ব্যাপক জল বেড়েছে। নালা উপচে কৃষিজমি জলমগ্ন হয়েছে। এমনকী কোথাও কোথাও গ্রামের সীমানা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে পদ্মার জল। এই অবস্থায় মূল ভূখণ্ড থেকে নদী পেরনোর একমাত্র মাধ্যম হল নৌকা। আর তাতেই ভরা বর্ষায় বারবার যাতায়াতের জন্য প্রয়োজন পড়ছে আরও নৌকার। পাশাপাশি জল বাড়ায় মাছ ধরার জন্যও ডোঙার চাহিদা বেড়েছে। তাই প্রতি বছর বর্ষার আগে এখানে শুরু হয়ে যায় নৌকা তৈরির ব্যস্ততা। তবে এবারে বর্ষার মধ্যে হঠাৎ করে আরও জল বাড়ায় নৌকা, ডোঙার চাহিদা আগের থেকে আরও বেড়েছে।
পাশপাশি বেড়েছে নৌকার কারিগরদের কদর। শুধু যে স্থানীয় কারিগররাই কাজ করছেন তা নয়, চাহিদা থাকায় বাইরে থেকেও আনা হচ্ছে নৌকার কারিগরদের। দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরিতে নৌকা তৈরিতে হাত লাগাচ্ছেন তাঁরা। বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তৈরি হচ্ছে ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা। সাধারণত নৌকার ক্ষেত্রে বাবলা, কড়ুই, হিজল, মেহগনি কাঠের বেশি ব্যবহার হয়। তবে ছোট নৌকার ক্ষেত্রে কাঁঠাল গাছের কাঠও ব্যবহার করা হয়। কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরির পরে আলকাতরা, তারকাটা, গজাল, পাটা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এক একটি বড় নৌকা তৈরিতে আকার-আয়তনের প্রকারভেদে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার কাছাকাছি খরচ পড়ে। তবে জলে মাছ ধরার মতো ছোট ছোট ডোঙা নৌকাগুলি হাজার দুয়েকের মধ্যেই তৈরি করা যায়।