Kidney Selling Racket: `কিডনি দিলেই ১৫ লক্ষ`, বিক্রি করেও মেলেনি টাকা! রায়গঞ্জে ফের সক্রিয় পাচারচক্র? জোর চাঞ্চল্য...
Kidney Selling Racket: চার মাস আগে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে মাইজলির বর্মনের বাঁদিকে কিডনিটি দেন। তারপরে অভিযুক্ত রবি জালি তাকে প্রথমে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার পর দেড় লক্ষ টাকা চলতি মাসের ১ তারিখে দেবেন বলে জানান। কিন্তু টাকা চাইতে গেলে মাইজলি বর্মনকে মারধর করার পাশাপাশি মাথা ফাটিয়েও দেওয়া হয়।
ভবানন্দ সিং: রায়গঞ্জে ফের সক্রিয় কিডনি পাচারচক্র! আর্থিক অনটনের সুযোগ নিয়ে অর্থের লোভ দেখিয়ে এক গৃহবধূর কিডনি পাচারের অভিযোগে চাঞ্চল্য। কলকাতায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে এসে কিডনি কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। রায়গঞ্জ ব্লকের বিন্দোলের সেই "কিডনি বেচা গ্রাম" জালিপাড়াতে আবারও দালাল চক্র সক্রিয় বলে অভিযোগ।
বিন্দোলে ফের সক্রিয় কিডনি পাচারের চক্র! এবার ঋণের দায়ে জর্জরিত এক মহিলাকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি বিক্রি করে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে চাঞ্চল্য। অভিযোগ রায়গঞ্জের বিন্দোল গ্রামপঞ্চায়েতের জালি পাড়ার এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে। প্রতিশ্রুতি মত কিডনি বিক্রি করলেও টাকা মেলেনি, বরং টাকা চাইতে গেলে জুটেছে শুধুই বেধড়ক মার, আর প্রাণনাশের হুমকি বলে অভিযোগ। একপ্রকার বাধ্য হয়েই নিজের প্রাণ বাঁচাতে এদিক ওদিক ভাড়াবাড়িতে আশ্রয় নিয়ে লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রতারিত পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রী ওই মহিলা। অভিযোগ অস্বীকার অভিযুক্তের পরিবারের। তদন্ত করে কড়া প্রশাসনিক পদক্ষেপের আশ্বাস স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের।
উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ ব্লকের চৈনগর এলাকার বাসিন্দা মাইজলি বর্মনের অভিযোগ, দুই মেয়ের বিয়ের পর চারিদিকে ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে যান পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক কার্তিক বর্মন ও তার স্ত্রী মাইজলি বর্মন। এই সুযোগে কিডনি পাচারকারীরা তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের ঋণধার পরিশোধ করার উপায় হিসেবে মাইজলি কিডনি দিলে তার বদলে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে বলে জানায়। সেইমত মাইজলি বর্মন তার কিডনি দেওয়ার জন্য আগ্রহী হন। চার মাস আগে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে মাইজলির বর্মনের বাঁদিকে কিডনিটি দেন। তারপরে অভিযুক্ত রবি জালি তাকে প্রথমে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার পর দেড় লক্ষ টাকা চলতি মাসের ১ তারিখে দেবেন বলে জানিয়ে দেন মাইজলি বর্মনকে। রবি জালির কথা মতো মাইজলি চলতি মাসের ৪ তারিখে তার বাড়িতে গিয়ে টাকা চাওয়া মাত্রই মাইজলি বর্মনকে বেধড়ক মারধর করার পাশাপাশি মাইজলি বর্মনের ইঁট দিয়েছে মাথা ফাঁটিয়ে দেয় রবি জালি বলে অভিযোগ। গুরুতর জখম অবস্থায় মাইজুলি বর্মন রায়গঞ্জ গভারমেন্ট ও মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। জুন মাসে ৬ তারিখে মাইজুলি বর্মন সুস্থ হয়ে ভাটোল ফাঁড়িতে মারধর করার বিষয়টি নিয়ে রবি জালি ও তার মা প্রমিলা জালির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
আরও পড়ুন, WB Bypoll 2024: জুলাইতেই রাজ্যে ফের ভোট, দিনক্ষণ ঘোষণা কমিশনের!
তবে এই ঘটনায় রায়গঞ্জ থানার ভাটোল ফাঁড়িতে কিডনি বিক্রির লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। এদিকে রায়গঞ্জ ব্লকের বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েত ও আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি নেওয়া চক্র আবারও সক্রিয় হয়েছে বলে অভিযোগ। একটা সময় রায়গঞ্জ ব্লকের বিন্দোল গ্রামপঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা কিডনি পাচার চক্রের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এই চক্র ব্যাপক আকার ধারণ করে। যা নিয়ে গোটা রাজ্য তথা দেশে শোরগোল পড়ে যায়। এই কিডনি পাচার চক্রের মূল দুই পান্ডা রেজ্জাক ও কুদ্দুসকে গ্রেফতার করে পুলিস। তারপর ধীরে ধীরে এই পাচার চক্রের সক্রিয়তা কমতে থাকে। তবে ফের এই কিডনি বিক্রির অভিযোগ সামনে আসায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
দীর্ঘদিন কিডনি পাচার চক্র বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করে আসা সমাজকর্মী অশোক কুমার রায় বলেন, এই চক্র গত কয়েক বছর ধরে বন্ধ ছিল। যদি ফের এই চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে, তবে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। দরকার পড়লে আমরা ফের আন্দোলনে নামব। অন্যদিকে রবি জালির বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে বলে দাবি করেছেন রবি জালির ভাই তথা স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ছবি জালি। তার পালটা দাবি, ওই মহিলা তার দাদার কাছে টাকা পেতেন, যা নিয়ে কিছুদিন আগে ঝামেলাও হয়। তবে কিডনি বিক্রির সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই।এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে অভিযোগ বলে তার দাবি। তাঁর দাদা ও পরিবারকে বদনাম করার চেষ্টা করছে ওই মহিলা বলে তাঁর দাবি।
এলাকায় কিডনি পাচার চক্রের পান্ডাদের সক্রিয় হওয়ায় খবর পেয়েই হতবাক বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জিন্নাতুল খাতুন। তিনি বলেন, আমি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। প্রশাসনকেও এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলব। ওই মহিলা যদি ঘরছাড়া হয়ে থাকে, তবে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে আমি পদক্ষেপ নেব। তবে প্রশ্ন উঠছে, রায়গঞ্জ কি আবারও কিডনি পাচারের হটস্পট হয়ে উঠল? আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া গ্রামের সাধারণ মানুষকি আবারও একে একে এই ফাঁদে পা বাড়াচ্ছেন ? রায়গঞ্জ আলাদা পুলিস জেলা হওয়ার পরেও কেন অভিযোগ পেয়েও নির্বিকার পুলিস? আর্থিক অনটনে নিজের কিডনি বিক্রির পরেও প্রতারিত গৃহবধূ কেন ঘরছাড়া থাকবেন? কবে ঘুম ভাঙবে প্রশাসনের ? প্রশ্ন অনেক কিন্তু যার উত্তর এখনও অধরা।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)