চম্পক দত্ত: আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা দুশ্চিন্তা বাড়াল কৃষকদের। চরম উদ্বেগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনা ১ ও ২ নম্বর ব্লক এলাকার কৃষকেরা। পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষকেরা মূলত আলু চাষের উপরই নির্ভরশীল। এ জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল আলু। আর চন্দ্রকোনা এ জেলার আলুচাষের গড় হিসেবে পরিচিত। সেই আলুচাষে চলতি বছরের শুরু থেকেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে কৃষকদের।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: West Bengal Weather Update: বৃষ্টিতে ভাসবে বাংলা? একদিকে উচ্চচাপ বলয়, অন্য দিকে ঘূর্ণাবর্ত...


এবার আলু চাষের শুরুতেই ঘটে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। টানা বৃষ্টিতে সদ্য লাগানো আলুর জমি জলে ডুবে নষ্ট হয়। অনেক জায়গাতেই জমিতে লাগানো আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফের আলু চাষ করতে হয়। যার জেরে এবছর আলু চাষে বিলম্ব হয় এবং খরচও দ্বিগুণ হয়। 


তবে সেই খরচ সামলেই ফের আলু চাষ শুরুও করেন কৃষকেরা। এখন সেই আলু গাছের বয়স হয়েছে কোথাও দেড় মাস, কোথাও আড়াই মাস। এদিকে আলু গাছের বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হয়ে আলুর ফলন হতে-হতে তিন থেকে সাড়ে তিনমাস সময় লাগার কথা। এর মানে, দ্বিতীয় দফায় রোপণ করা আলু থেকে ফলন পেতে এখনও এক-দেড় মাস দেরি। 


কিন্তু এরই মাঝে আবার ব্যাঘাত। ফের চাষে বাধা। আবহাওয়ায় হঠাৎ পরিবর্তনের জেরে কয়েকদিন ধরেই টানা কুয়াশার দাপট, সঙ্গে মেঘলা আকাশ, রোদের তেমন দেখা নেই, রয়েছে বৃষ্টির পূর্বাভাসও। এই আবহাওয়া আলুর ফলনের পক্ষে অন্তরায়। এর উপর যদি আগামী কয়েকদিনে বৃষ্টি হয়, তবে আলুচাষের আরও ক্ষতি হবে।


এবং ইতিমধ্যেই চন্দ্রকোনা-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় মাঝারি বৃষ্টিও হয়ে গিয়েছে। আর এসবের জেরে শীত উধাও হয়ে গরম অনুভূত হতে শুরু করেছে। এহেন আবহাওয়া আলু চাষের পক্ষে মোটেও উপযুক্ত নয়, জানাচ্ছেন কৃষকরা। 


কৃষকদের দাবি, বেশ কয়েকদিন ধরে সারাটা দিনই কুয়াশায় ঢাকা থাকছে, দেখা নেই রোদের। হঠাৎ করে দুদিন ধরে শীতের দেখা নেই, আলু চাষের জন্য এই আবহাওয়া একেবারেই উপযোগী নয়। আর এতেই আলু গাছে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের রোগ, কুঁকড়ে যাচ্ছে পাতা, পচা ধসা ও গাছে হলুদ জাতীয় রোগ দেখা যাচ্ছে। কৃষকদের কথায়, এর ফলে আলুর ফলন কমবে, আলু গাছকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না, সময়মতো আলু গাছ না বাঁচিয়ে রাখতে পারলে আলুর ফলনও হবে না। তাই আলু গাছ বাঁচিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন কৃষকেরা। অতিরিক্ত খরচ করে দিতে হচ্ছে কীটনাশক। সব মিলিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় কৃষকেরা। কৃষকরা জানাচ্ছেন, এমনিতেই চলতি বছরে বৃষ্টির জন্য আলুচাষ অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছে। আলু চাষে এ বছর খরচ হয়েছে বিঘে পিছু ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বেশিরভাগ কৃষক চাষ করেছেন ঋণ নিয়ে। রাতের ঘুম উড়েছে তাঁদের।


এ বিষয়ে ঘাটাল মহকুমা-সহ কৃষি অধিকর্তা প্রশাসন শ্যামাপদ সাঁতরা বলেন, 'আমার সাব-ডিভিশনে আলু কভার করে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর। কিছু আলু লাগানো হয়েছিল তারপর বৃষ্টি হয়েছিল, কিছু আলু লাগাতে দেরি হয়েছে। ক্ষেত পরিদর্শন করে আমরা দেখেছি, আলু গাছের বৃদ্ধি বা কন্ডিশন ভালো আছে, সমস্যা নেই। কিন্তু কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া খারাপ যাচ্ছে, হালকা বৃষ্টি হয়েছে, মেঘলা আকাশ রয়েছে, কুয়াশা হচ্ছে, তাপমাত্রা বাড়ছে। এতে আলুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমরা তেমন কোনও রিপোর্ট পাইনি। তবে যেহেতু আবহাওয়া খারাপ, কুয়াশা হচ্ছে, চাষিদের বলব, আগাম সতর্কতা হিসেবে ৮-১০ দিন অন্তর ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে মাঠে কিছু কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।' 


আরও পড়ুন: Jalpaiguri: 'সকলের তরে সকলে আমরা'র কাঠামোতেই দাঁড়িয়ে ৫১ ফুট দীর্ঘ সরস্বতী প্রতিমা...


খারাপ আবহাওয়ার জেরে আলু চাষ করে কৃষকদের যাতে কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় সেজন্য তাঁদের করণীয় বিষয়গুলি বাতলে দিয়েছেন সহ কৃষি অধিকর্তা শ্যামাপদ সাঁতরা। পাশাপাশি কৃষি দফতরের তরফে এলাকাভিত্তিক প্রচারও করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)