নিজস্ব প্রতিবেদন: করোনাভাইরাস ঘটিত অতিমহামারীর কারণে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগগুলি। বিশ্বজুড়ে বহু দেশে লকডাউন হওয়ায় ছোট ব্যবসায়ী এবং অসগংঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিক-কর্মীদের উপর বড় খারাপ প্রভাব পড়েছে। কিছু ক্ষুদ্র উদ্যোগ এই সংকটের পরিস্থিতিকেও সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করে কাজ করে চলেছে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

করোনাভাইরাস ঘটিত মহামারীর বিরুদ্ধে যে ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য প্রায় ৫০০টি গ্রামীণ উদ্যোগ এখন মাস্ক তৈরি করছে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের আজীবিকা মিশনের অধীনে স্টার্ট-আপ ভিলেজ এন্টারপ্রেনরশিপ প্রোগ্রাম (এসভিইপি) বলে যে (সাব স্কিম) প্রকল্প রয়েছে, তার আওতায় মাস্ক তৈরি করছে গ্রামীণ উদ্যোগগুলি। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান হল, এন্টারপ্রেনরশিপ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (ইডিআইআই)। বস্তুত ইডিইই গ্রামীণ উদ্যোগগুলিকে ব্যবহার করে এই মাস্ক তৈরির কাজ বাস্তবায়িত করছে।


পশ্চিমবঙ্গে দিনহাটা, পাথরপ্রতিমা, মানিকচক ব্লকে এসভিইপি-র আওতায় প্রশিক্ষিত ৩৮টি গ্রামীণ উদ্যোগ দিনে প্রায় ৬০০টি মাস্ক তৈরি করছে। এই গ্রামীণ উদ্যোগগুলি এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪৯ হাজার মাস্ক তৈরি করে বিক্রি করেছে। 


এসভিইপি-র কর্মসূচিগুলি আহমেদাবাদের এন্টারপ্রেনরশিপ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (EDII)-এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। এই সংস্থা শিল্পোদ্যোগ নিয়ে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, গবেষণা এবং প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এসভিইপি-র মূল লক্ষ্যই হল, দেশের যুব সম্প্রদায়ের জন্য স্থায়ী স্বনিযুক্তির সুযোগ তৈরি করা এবং এ ধরনের স্বনিযুক্তি প্রকল্পগুলিকে নিয়ে একটা নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলায় উৎসাহ দেওয়া।


এসভিইপি-র মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোগ এবং যুব উদ্যোগপতিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁদের ব্যবসায়িক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য পাঠ দেওয়া হয়, যাতে তাদের উদ্যোগের দীর্ঘমেয়াদ ধরে স্থিরতা থাকে এবং তা বৃদ্ধির পথে এগোতে পারে।


দেশের ১৪ টি রাজ্যের ৬১ টি ব্লকে এই প্রোগ্রামের আওতায় ক্ষুদ্র উদ্যোগকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, আর তার মাধ্যমে এমন একটি পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে যে ব্যবস্থায় এই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলি আরও সমৃদ্ধ হতে পারে এবং স্থায়ী হতে পারে। ২০১৬ সালে এ ব্যাপারে চার বছরের কর্মসূচি রূপায়ণ শুরু হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত এর আওতায় ৩৭,৬৮৮ জন লোককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সেই সঙ্গে ৩৬,৩৭০ টি ক্ষুদ্র উদ্যোগকে এই প্রকল্পের আওতায় সাহায্য করা হয়েছে।


তবে বর্তমানে অতিমহামারীর কারণে কিছু ব্যবসা তীব্র সংকটে পড়েছে। কিন্তু বাজারে মাস্কের অপ্রতুলতার খবর শুনে এর মধ্যে কিছু ক্ষুদ্র উদ্যোগ তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে মাস্ক তৈরি করা শুরু করেছে। কয়েকজনের টেলরিং তথা সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ ছিল, ফলে তারা এখন মাস্ক তৈরি করা শুরু করে দিয়েছে। কিছু উদ্যোগ সেই কাজ শিখে নিয়ে উৎপাদন শুরু করেছে।



বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড এবং হরিয়ানার বিভিন্ন ব্লকে এসভিইপি-র আওতায় প্রায় ৫০০ টি প্রশিক্ষিত গ্রামীণ উদ্যোগ দিনে গড়ে আড়াই হাজার মাস্ক তৈরি করছে এবং বিক্রি করছে। এখনও পর্যন্ত তারা সবাই মিলে মোট সাড়ে তিন লক্ষ মাস্ক তৈরি করে বিক্রি করেছে। স্থানীয় ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মী তথা সরকারি কর্মী, ডাক্তার, পুলিশ, মিডিয়া, সাফাইকর্মী, স্বেচ্ছাসেবীদের তা সরবরাহ করা হয়েছে। এই মাস্কগুলি পরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করছে, সব রকম গুণমান বজায় রেখে যাতে কাজ হয় সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। এর ফলে যেমন মাস্কের অপ্রতুলতার সংকট কাটানো সম্ভব হয়েছে, তেমনই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলি নিয়মিত কিছু রোজগারের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছে।


বর্তমান মহামারী পরিস্থিতি গোটা দেশকে একটা বড় শিক্ষা দিয়ে গেল। তা হল, ক্ষুদ্র উদ্যোগ তৈরি করে তাদের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সবরকম চেষ্টা করতে হবে। সেটাই আখেরে কার্যকরী হয়ে উঠবে ভবিষ্যতের সঙ্কটের সময়ে।