kalipuja 2023: দামোদরের গভীর থেকে উদ্ধার কঙ্কালেশ্বরী! চৈতন্যদেবের সঙ্গে কী যোগ এই কালীর?
kalipuja in Bardhaman: কঙ্কালেশ্বরীকালী মূর্তি খুব প্রাচীন। অদ্ভুত এই কালীমূর্তি। মা এখানে কঙ্কালরূপিণী। এটি একটি অষ্টভুজা চামুণ্ডা মূর্তি। মূর্তিটি অনেকে বৌদ্ধ চামুণ্ডার রূপ বলেন। অনেকের মতে, এটি বৌদ্ধ আমলে তৈরি।
পার্থ চৌধুরী: কঙ্কালেশ্বরীকালী মূর্তি খুব প্রাচীন। অদ্ভুত এই কালীমূর্তি। মা এখানে কঙ্কালরূপিণী। এটি একটি অষ্টভুজা চামুণ্ডা মূর্তি। মূর্তিটির উচ্চতা প্রায় ১.৮ মিটার। কালীর এই চামুণ্ডা মূর্তিটি অনেকে বৌদ্ধ চামুণ্ডার রূপ বলেন। অনেকের মতে, এটি বৌদ্ধ আমলে তৈরি। মূর্তিটি দেখলে মনে হবে, পাথরের উপরে যেন নরকঙ্কালের রূপ অঙ্কিত। কঙ্কালসার মূর্তিতে মানবদেহের শিরা-উপশিরা-ধমনীর প্রত্যেকটি নিখুঁতভাবে খোদাই করা। মূর্তির গলায় নরমুণ্ডের মালা। কালো পাথরের খোদাই করা এই মূর্তির পদতলে শায়িত অবস্থায় আছেন মহাদেব। মূর্তির উপরে ডান দিকে হস্তী-মুণ্ড। মূর্তির নীচে ডান দিকে এক উলঙ্গ পুরুষ, তাঁর কাঁধে শবদেহ। বাঁ দিকে এক নগ্ন নারীমূর্তি।
আরও পড়ুুন: Bhoot Chaturdashi 2023 | kalipuja 2023: আজই জ্বালতে হবে ১৪ প্রদীপ! জেনে নিন দীপদানের সময়...
১৩২০ বঙ্গাব্দ বা ১৯১৩ সালে বর্ধমানের কাঞ্চননগর এলাকা ভেসে যায় দামোদরের বন্যায়। বন্যার জল নামতে দামোদরের গর্ভ থেকে উদ্ধার হয় কষ্টিপাথরের দেবীমূর্তি। কঙ্কালেশ্বরী কালী। তাঁকে প্রতিষ্ঠা করা হয় কাঞ্চননগরের পঞ্চরত্ন বিষ্ণুমন্দিরে। সেই থেকে এখানে কঙ্কালেশ্বরী কালীর আরাধনা হয়ে আসছে।
কাঞ্চননগরের এই মন্দির এক বিখ্যাত নবরত্ন কালীমন্দির। মন্দিরটি দু'হাজার বছরেরও বেশি পুরনো! বর্ধমানের মহারাজ বিজয়চাঁদ মহাতাবের উদ্যোগে মূর্তিটি কাঞ্চননগরের মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে সময় এই নবরত্ন মন্দিরে কোনও বিগ্রহ ছিল না। পাথরের কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠার দিন থেকে এখানে নিত্যপুজো শুরু হয়। কথিত আছে, এক ধার্মিক পরিব্রাজক কমলানন্দ মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি দামোদরের তীরে ধোপাদের কাপড় কাচার কাজে ব্যবহৃত পাথরটি উদ্ধার করেন। সেই পাথরেই খোদাই করা ছিল দেবীমূর্তি। এই পাথরের দেবীমূর্তি পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত হয় মন্দিরে।
শ্রীচৈতন্যের দাক্ষিণাত্য ভ্রমণের সঙ্গী ছিলেন কবি গোবিন্দ দাস। তাঁর জন্মভিটে রয়েছে এই কাঞ্চননগরেই। সেই জন্মভিটের কাছেই এই পঞ্চরত্ন বিষ্ণুমন্দির। আর সেখানেই অধিষ্ঠিত এই কঙ্কালেশ্বরী কালী।
প্রতিবছর কালীপুজোর দিন এই মন্দিরে বহু ভক্তের সমাগম হয়। রাতে ভক্তদের ভোগ খাওয়ানো হয়। বর্তমানে ট্রাস্টি বোর্ড পুজো ও মন্দিরের দেখভাল করে। সন্ধ্যায় পুজো শুরু হয়। সকালে মায়ের চিঁড়ে ভোগ, রাতে খিচুড়ি ভোগ। এখানে মায়ের বিশেষ ভোগও হয়।
আরও পড়ুুন: kalipuja 2023: জিভ কাটেননি এই কালী, পদতলে তাঁর ইতালির শাঁখ! পায়ের নিচ থেকে শিব উধাও কেন?...
এখানে কালী যেন একেবারে কঙ্কালসার! পাথরে খোদিত এবং মানবকঙ্কালের মতো দেখতে। বিগ্রহটি অষ্টভুজা, গলায় নরমুণ্ডমালা, পদতলে শিব। দেবীর দু'পাশে দু'জন সহচরীর মূর্তি। আটটি হাতে নরমুণ্ড, শঙ্খ, চক্র, ধনু, খড়্গ, পাশ ইত্যাদি। প্রতিমার দেহের শিরা-উপশিরার নিখুঁত ভাস্কর্য। কষ্টিপাথরে খোদিত কালীমূর্তির এই রূপের জন্যই এর নাম 'কঙ্কালেশ্বরী কালী'। শায়িত শিবের নাভি থেকে উৎপন্ন হয়েছে পদ্ম। সেই পদ্মের উপর দেবী বিরাজমান। তাঁর চালচিত্রে অঙ্কিত রয়েছে হাতি। প্রতিটি বিশেষ তিথিতে নিষ্ঠা-সহ দেবীর পুজো হয়। এখানে বলি হয় না।