মনু্ষ্যত্বের শিক্ষা দেয় দশ বছরের পিতৃহারা এই শিশু, টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে টাকা দিল প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে
টাকা দিয়ে ছোট্ট প্রথমপ্রিয় কথা , ` প্রধানমন্ত্রীকে টাকা দিলাম। আমার টাকায় গরিবরা খাবে।`
নিজস্ব প্রতিবেদন: দশ বছরের প্রথমপ্রিয় রায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বয়স হয়তো অল্প, কিন্তু মনুষ্যত্বের নিরিখে অনেক বয়স্ক মানুষকে আজ এক লহমায় পিছনে ফেলে দিল সে। খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছে, মা ছাড়া আর কেউ নেই তার। আর মাকে সঙ্গে নিয়েই আলিপুরদুয়ারের ভোলারডাবরির এই ছোট্ট ছেলেটি যা করে দেখাল, তাতে বাহবা দিচ্ছে গোটা রাজ্য।
কামনা রায় একমাত্র ছেলে প্রথমপ্রিয়কে নিয়ে জীবনযুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন । একমাত্র ছেলেই তাঁর বেঁচে থাকার রসদ ।
কামনা রায়ের স্বপ্ন ছেলে যেন মানুষের মত মানুষ হয় । পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ছেলেকে সেই শিক্ষাই দিয়ে চলেছেন মা। দশ বছরের প্রথমপ্রিয়র মনুষ্যত্বের বিকাশ যে ইতিমধ্যেই ঘটে গেছে. তা টের পাননি নিজের মা-ও ।
আক্রান্ত চিকিত্সক, এবার রোগী ভর্তি বন্ধ হয়ে যেতে পারে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে
বিশ্ব জুড়ে করোনা আতঙ্ক । চলছে মৃত্যু মিছিল। আমাদের দেশে লাফিয়ে মৃতের সংখ্যা । প্রতিদিন মায়ের সঙ্গে বসে টিভিতে এই খবর দেখছে প্রথমপ্রিয় । প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর কাছে সবরকম সাহায্য চেয়েছেন। দেশের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর এই আর্তি নাড়া দিয়েছে দশ বছরের শিশু মনকেও। মনে মনে সে ভেবে ফেলে দেশের জন্য কিছু করতে হবে । মায়ের কাছে বায়না ধরেছিল প্রধানমন্ত্রীকে টাকা দেবে। সামান্য আয়ে ছেলেকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছেন কামনা । ছেলের আবদার মেটাতে পারেননি তিনি । দিনকয়েক আগে মা দেখেন ছেলে তার জমানো টাকার বাক্স খুলে টাকা গুনছে। দু বছর ধরে স্কুলের টিফিন খরচ বাঁচিয়ে এগারোশ টাকা জমিয়েছে দশ বছরের প্রথমপ্রিয়। কোন কিছু না ভেবে মাকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার বাড়ির কাছেই ব্যাঙ্কে যায়। সেই জমানো টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করে ছোট্ট প্রথমপ্রিয় । ছোট্ট এই শিশুর মানসিকতায় বাকরুদ্ধ ব্যাঙ্কের কর্মীরা । সব কাজ ফেলে ব্যাঙ্কের কর্মীরা প্রথমপ্রিয়র স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে এগারোশো টাকা দান করে তৃপ্তির ছাপ প্রথমপ্রিয়র চোখেমুখে।
টাকা দিয়ে ছোট্ট প্রথমপ্রিয় কথা , " প্রধানমন্ত্রীকে টাকা দিলাম। আমার টাকায় গরিবরা খাবে।"
ছেলের এই কাজে চোখের জল ধরে রাখতে পারেন নি মা । গর্বিত মা জানান ," আজ মনে হচ্ছে আমার প্রার্থনা ভগবান শুনেছে । আমি চাই পড়াশোনার করে প্রকৃত মানুষ হোক আমার ছেলে । কোনদিন যেন মনুষ্যত্ব আর মূল্যবোধ না হারিয়ে ফেলে।"
দশ বছরের প্রথমপ্রিয়র কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে লকডাউন চলাকালীন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এলাকার অসহায় মানুষগুলোর দিকে ।