চম্পক দত্ত: বিস্ফোরক মন্তব্য কেশপুরের দাপুটে নেতা মহম্মদ রফিকের। মন্ত্রী শিউলী সাহা থেকে শুরু করে জেলা কর্ডিনেটর অজিত মাইতি এবং ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আশীষ হুদাইত কাউকেই বিঁধতে ছাড়েননি তিনি। শিউলি সাহা ধান্দাবাজ, তোলাবাজ লোকদেরকে নিয়ে চলছে। তাঁর নাম বাদ দেওয়ার পেছনে ভূমিকা রয়েছে শিউলি সাহার। সেইসঙ্গে তিনি আরও বললেন, দলের পদ পেতে কে কত টাকা করে নিত।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার অন্তর্গত কেশপুরের ভোটার তিনি। নেতাও তিনি কেশপুরের। কিন্তু ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার লিস্টে প্রথম তালিকাতে তার নাম থাকলেও পরবর্তী ক্ষেত্রে লিস্ট থেকে তার নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।


বুধবারই ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা কমিটি ঘোষণা করেছে তৃণমূল। প্রথমে সেখানে সম্পাদক হিসেবে মহম্মদ রফিকের নাম থাকলেও পরে দেখা যায় ওই তালিকায় নামের পাশে ক্রস চিহ্ন দেওয়া রয়েছে। জেলা সভাপতি যখন কমিটি ঘোষণা করেন তখনও দেখা যায় যে তিনি মহম্মদ রফিকের নাম সম্পাদক হিসেবে বলেননি। পরে দেখা যায় মহম্মদ রফিকের নাম রয়েছে মেদিনীপুর সংগঠনিক জেলা কমিটিতে সম্পাদক হিসেবে। এই খবর পাওয়ার পরেই ক্ষুব্ধ মহম্মদ রফিক ক্ষোভ উগরে দেন দলেরই নেতৃত্বের বিরুদ্ধে।


তিনি বলেন, ‘বর্তমান জেলা সভাপতি দাসপুরের বাইরে কোনওদিন পার্টি করত না। আমি ১৯৭৯ সাল থেকে জেলার সাংগঠনিক পদে ছিলাম। ‘৯০ সালের অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। ‘৯৮ সাল থেকে তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। ২০০০ সালে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলাম। কেশপুরের ভোটার আমি। কি কারণে কি হয়েছে আমি তো সব খবর জানব না, তবে একটা কথা বলব আমার নাম তো মহম্মদ রফিক। জঙ্গলে পাহাড়ে সমুদ্র যেখানেই রাখুক আমি দলের হয়ে কাজ করব’।


তিনি আরও বলেন, ‘কেশপুরের ভোটার আমি। আমার গ্রামের ভোটার আমি। কেউ যদি কেশপুরকে শেষ করতে যায় তাহলে কারোর কিছু করার নেই’। তিনি এই বিষয়ে সরাসরি মন্ত্রী তথা বিধায়ক শিউলি সাহার দিকেই আঙ্গুল তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘শিউলি সাহা দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি করতে বাড়ির পাশে গেলেও আমাকে জানানো হয়নি’। শিউলি সাহা বাইরে থেকে আসা।


আরও পড়ুন: Rozgar Mela 2023: রোজগার মেলায় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে নিয়োগপত্র পেলেন ৭১০০০ চাকরিপ্রার্থী


২০১৬ সালে বিধানসভায় প্রার্থী হয় তখন ১ লক্ষ বেশি ভোটে জিতেছিল। ২০২১ সালে কেন ২২ হাজার ভোট ভোটে জিতেছিল সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘যখনই সাংগঠনিকভাবে অকর্মণ্য লোকদেরকে দিয়ে ৭২টা বাড়ি চুরি করা লোক তাকে নিয়ে এসে সঙ্গে ঘুরছে। এখন সত্য কথা বলা যাবে না, আমি তোলাবাজি করতে পারবো না। আমার দুই ছেলে সরকারি সার্ভিস করে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমার বাবার বিয়াল্লিশ বিঘা সম্পত্তি রয়েছে। আমার বাস ব্যবসা ‘৭৯ সাল থেকে আমার লরি ব্যবসা রয়েছে। আমি অন্যভাবে চলি। আমি ধান্দাবাজি করে গরিব মানুষদের কোনও পয়সা মেরে খাই না’।


তিনি জানিয়েছেন, ‘সঞ্জয় পান যখন ব্লক সভাপতি ছিল তখন এমপি ল্যাডের ৩০ শতাংশ ঘুষ খেত। ব্লক অঞ্চল সভাপতি করতে গেলে ৫ লক্ষ ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিতে হতো। শুভেন্দু অধিকারী তখন মেদিনীপুরে স্বর্বেস্বর্বা। আমি ওপেন মিটিংয়ে দলের চেয়ারম্যান দিনেন রায়, জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, সভাধিপতি সহ ১৩ জন কোর কমিটির আমি হেড ছিলাম। সেই সময় আমি ওপেন প্রতিবাদ করেছিলাম। শুভেন্দু অধিকারী সঞ্জয় পানকে জিজ্ঞেস করেছিল কি ব্যাপার তখন বলছে উপরে ভাগ দিতে হবে। অন্যায়ের সঙ্গে আমি আপোস করি না। তোলাবাজ ধান্দাবাজ লোকদেরকে নিয়ে চলছে শিউলি সাহা’।


লিস্টে নাম থাকা সত্ত্বেও বাদ দিয়ে দেওয়া বিষয়ে দলের কাউকে জানানোর কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘কাকে জানাবো দলে তো এখন জানানোর লোক তো এখন খুব কম। আমার সাংগঠনিক জেলার সভাপতির ক্ষমতা নেই। একদম ক্ষমতা বিহীন লোক। আর অজিত মাইতি কো-অর্ডিনেটর। অজিত মাইতির বুথে ২০২১ সালে কত ভোট পেয়েছে আমি দলকে জিজ্ঞাসা করছি এটা আমার প্রশ্ন। কেশপুর আমার গ্রামের আমার বুথের সব থেকে বেশি লিড দেওয়া হয়েছে’।


আরও পড়ুন: Kanch Nach | Katwa: ওপার বাংলার হারিয়ে যেতে বসা কাঁচ নাচ ফিরে আসছে কাটোয়ায়


তিনি জানিয়েছেন, ‘সরিয়ে দেওয়াটা কোনও ফ্যাক্টর নয়। দলের যেখানে খুশি থাকলেই হল। এক সময় রাজ্য যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম অতএব এগুলো কোনও ব্যাপার নয়। মনে কোনও আক্ষেপ নেই। এখন ইস্পাত হয়ে গিয়েছি। দল করতে গিয়ে একাধিক মিথ্যা মামলায় জেল যেতে হয়েছে। যারা ১০৭-এর মতন ছোট মামলাও কোনওদিন খায়নি তারা এখন দলের বড় বড় পদে রয়েছে। আক্ষেপ নয় আবারো বলছি ইস্পাত হয়ে গিয়েছি। এখন ধাক্কা খেতে খেতে এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গিয়েছি দল কি দিল না দিল তা যায় আসে না। তবে ১০০ শতাংশ তৃণমূলের আমি অন্ধ ভক্ত সৈনিক’।


তিনি আরও বলেন, ‘মেদিনীপুর জেলায় সব দীপক সরকারের দালাল’। কেন দীপক সরকারের বিরুদ্ধে একটাও অভিযোগ হয়নি সে প্রশ্নও তিনি তোলেন। এরপরে কি রাজনীতি করতে কেশপুরে যাবেন সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন ‘দল যদি বলে যাব না হলে কেন যাব আমি’।


এই বিষয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যুৎ ঘোষ বলেন, ‘মহম্মদ রফিক দলের পুরনো কর্মী এটা নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই এবং দলের এক সময়ের রাজ্য কমিটিরও দায়িত্বে বিভিন্ন পোস্টে ছিলেন। দল একটা জিনিস ভেবেছে যে ওর আসলে খেতুয়াতে বাড়ি, কেশপুরে। কিন্তু ও বর্তমানে মেদিনীপুর শহরের দুই নম্বর ওয়ার্ডে বসবাস করে এবং মেদিনীপুর শহরটা মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার মধ্যে পড়ে। আমার যেটা মনে হয় যে রাজনৈতিকভাবে কর্মকাণ্ড দুই জায়গাতেই ওর আছে। আমার মনে হয় ওর যদি মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদকের লিস্টে আছে, তার যদি আপত্তি থাকে রাজ্য কমিটির সঙ্গে কথা বলে ও যদি ঘাটাল সাংগঠনিক জেলায় থাকতে চায় তাহলে খুব একটা অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না। আমার মনে হয় রাজ্য কমিটির সঙ্গে কথা বললে তার ফয়সালা হয়ে যাবে’।


পুরো বিষয় নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি।


মহম্মদ রফিকের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহা। রফিক কথা বলেছেন অপ্রকৃতস্থ অবস্থায়। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘গোষ্টিবাজি করছেন, গোষ্ঠী তৈরি করছেন ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আশীষ হুদাইত’। তিনি বলেন, ‘জেলা সভাপতি বিধায়ক বা ব্লক সভাপতি কারোর সঙ্গে আলোচনা না করেই নামের তালিকা তৈরি করেছেন। অথচ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মিটিংয়ে বলেছিলেন সবার সঙ্গে আলোচনা করেই তালিকা তৈরি করতে হবে’। দুটো ঘটনা নিয়ে তিনি রাজ্য নেতৃত্বের কাছে চিঠি পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)