Bankura: গরুকে খুঁটিতে বেঁধে মুখের সামনে রোমশ কোনও পশুর চামড়া দোলানো! কেন?
Bankura: ভাইফোঁটার দিনেই এই অনুষ্ঠান হয়। তবে ভাইফোঁটা আজ, বুধবার। উৎসবটি এবছর শুরু হয়েছে গতকাল মঙ্গলবারে। গরু খুঁটা উৎসবে সামিল হয়েছিলেন এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: রাঢ় বঙ্গ তথা বাঁকুড়ার অন্যতম লোক উৎসব 'গরু খুঁটা'। অন্যান্য আদিবাসী উৎসবের মতোই গরু খুঁটাও অত্যন্ত প্রাচীন এক উৎসব। বিশেষত জঙ্গলমহলে ভাইফোঁটার দিন থেকে উচ্ছ্বাস ও উত্তেজনায় ভর করে মানুষজন মেতে ওঠেন এই গরু খুঁটা উৎসব নিয়ে।
আরও পড়ুন: Bhaiphonta 2023 | Bhai Duj 2023: অন্য ভাইফোঁটা! হিন্দু বোন ফোঁটা দিলেন মুসলিম ভাইয়ের কপালে...
এবছর ভাইফোঁটা আজ, বুধবার পড়ায় উৎসব শুরু হয়েছে গতকাল মঙ্গলবারেই। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার নবজীবনপুরে প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে আয়োজিত গরু খুঁটা উৎসবে সামিল হয়েছিলেন এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন।
কী এই গরু খুঁটা উৎসব?
এই উৎসবে একটি সুপুষ্ট গরু নির্বাচন করে গরুটির গায়ে রঙিন ছাপ দিয়ে প্রথমে গরুটিকে পুজো করা হয়। তারপর গ্রামের এক প্রান্তের শক্ত খুঁটিতে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় এটিকে। তারপর গান গেয়ে, আদিবাসী বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে লোমযুক্ত কোনও পশুর চামড়া ক্রমাগত তার চোখের সামনে দুলিয়ে গরুটিকে উত্তেজিত করা হয়। এভাবেই আনন্দোৎসব পালন করেন আদিবাসী সমাজের মানুষজন।
এ দৃশ্য দেখলেই মনে পড়ে যায় দক্ষিণ ভারতের জাল্লিকাটু অথবা স্পেনের বুল ফাইটিংয়ের কথা। মনে হয়, এ যেন পশুর উপর অত্যাচারই। তবে, গরু খুঁটা ঠিক অত্যাচার নয়। এই সংস্কৃতির ইতিহাস জানতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে বহু বছর আগে।
জানা যায়, বহু বছর আগে রাত্রি হলেই এলাকাবাসীর গোয়ালে হানা দিত বাঘ-ভালুকের মতো হিংস্র পশু। আর তাতে অধিকাংশ সময়েই গোয়ালের খুঁটিতে বাঁধা অবস্থাতেই প্রাণ যেত পোষ্য গবাদি পশুটির। বন্য পশুদের অতর্কিত আক্রমণ থেকে গবাদি পশুদের বাঁচাতে, তাদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখাতেই শুরু হয়েছিল গরু খুঁটা উৎসব। খুঁটোয় বাঁধা অবস্থায় গরুটির চোখের সামনে অন্য পশুর চামড়া দুলিয়ে-দুলিয়ে তাকে উত্তেজিত করা হয়, রাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আগেকার সময়ে মনে করা হত, প্রাণীটি রেগে যাবে, রাগ করতে এবং রাগ দেখাতে শিখবে। এর ফলে, আখেরে ওই পশুটিরই লাভ হবে। এই ভাবনা থেকেই গরু খুঁটার মতো আয়োজন।
পূর্বপুরুষদের প্রথা মেনে আজও শহর এবং গ্রামাঞ্চলে পালিত হয় গরু খুঁটা। এই উৎসব দেখতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিড় জমান অজস্র সাধারণ মানুষ। আজ হয়তো আর বাঘের হানা হয় না। তবে প্রথাটা রয়ে গিয়েছে।