অমিত শাহের নির্দেশেই ডিজি-মুখ্যসচিবকে তলব, বিস্ফোরক অভিযোগ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের
বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার জি ২৪ ঘণ্টাকে বলেন অজয় ভাল্লা রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখেছেন। তার মধ্য়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ঢুকে পড়ছেন কীভাবে! উনি কে!
মৌপিয়া নন্দী, ডেপুটি এডিটর, জি ২৪ ঘণ্টা
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার কনভয়ে হামলা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর এবার নতুন মাত্রা পেল।
নাড্ডার কনভয়ের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল রাজ্য বিজেপি। এ ব্যাপারে রাজ্যপালের কাছেও ওই হামলা সম্পর্কে রিপোর্ট চাওয়া হয় কেন্দ্রের তরফে। গতকাল সেই রিপোর্ট পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল। তার পরেই রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্যের ডিজি ও মুখ্যসচিবকে ১৪ তারিখ তলব করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের সচিব অজয় ভাল্লার সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রকে তীব্র নিশানা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের চিফ হুইপ ও সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন- বৃহস্পতিবার দুপুরের আগেই মৃত্যু হয়েছে আরিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়ের
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সচিব অজয় ভাল্লাকে একটি চিঠিতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, সংবিধানের ৭ নম্বর সিডিউল অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি রাজ্যের বিষয়। তার পরেও কীভাবে রাজ্যের দুই অফিসারকে এভাবে তলব করা যেতে পারে! কেন্দ্র কী এভাবে রাজ্যের কোনও বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে! মনে হচ্ছে একেবারে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ও স্বারাষ্ট্র দফতরের মন্ত্রীর নির্দেশেই এরকম একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গত ১০ ডিসেম্বর ডায়মন্ড হারবারে যাওয়ার পথে নাড্ডার কনভয়ে হামলা হয়। এনিয়ে কল্যাণ বন্দ্য়োপাধ্যায় আরও লিখেছেন, নাড্ডার কনভয়ে জেড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা, বুলেট প্রুফ গাড়ি ছিল। তার পরেও তাঁর সঙ্গে ছিল ৩০টি গাড়ি, ৫০ বাইকের একটি বিজেপি সমর্থকদের দল। প্রশ্ন হল, যাঁর জেড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা রয়েছে তিনি কি এলাকার পুলিসকে কোনও খবর না দিয়ে ওই বিপুল লোকলস্কর নিয়ে যেতে পারেন! তাঁর কনভয় থেকে রাকেশ সিং নামে এক নেতা উত্তেজক স্লোগান দিচ্ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ৫৯টি মামলা রয়েছে। তিনি নাড্ডার কনভয়ে কী করছিলেন! নাড্ডাজি নিজে আইন ভেঙেছিলেন। এরকম এক পরিস্থিতিতে রাজ্যে ডিজি ও মুখ্যসচিবকে তলবের মধ্যে দিয়ে রাজ্য পুলিসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে কেন্দ্র। যেভাবে আপনি রাজ্যের দুই আধিকারিককে তলব করেছেন তাতে স্পষ্ট আপনি অমিত শাহের নির্দেশেই এসব কাজ করছেন। কেন্দ্র-রাজ্য ফেডারেল কাঠামো ভাঙার চেষ্টা হচ্ছে। রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির একটা পরিবেশ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। আপনার এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
আরও পড়ুন-সঙ্কটমুক্ত বুদ্ধবাবু, সোম বা মঙ্গলেই মিলতে পারে হাসপাতাল থেকে ছুটি
এখানেই থেমে থাকেননি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লাকে তিনি আরও লিখেছেন, আপনি রাজ্যের ৩ আইপিএস অফিসারকে সেন্ট্রাল ডেপুটেশনের জন্য ডেকেছেন। ওই ৩ আইপিএস অফিসারই ১০ ডিসেম্বর যেখানে নাড্ডার ওপরে হামলা যেখানে হয় সেই এলাকাতেই নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। এতে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় যে আপনারা ওই তিন অফিসারকে তুলে নিয়ে রাজ্য পুলিস মহলে চাপ সৃষ্টি করছে চাইছেন। সংসদের অধিবেশন এখন চলছে না। তাই দলের তরফে আপনাকে অনুরোধ, অমিত শাহর নির্দেশ কাজ করবেন না। কেন্দ্রীয় সরকারের একজন আমলা হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করুন।
জি ২৪ ঘণ্টাকে এনিয়ে কল্যাণবাবু বলেন, সংবিধানের ওপরে কেউ নন। কেন্দ্রের কোনও আমলা নন, অমিত শাহও নন। রাজ্য পুলিস যাতে কাজ করতে না পারে তার জন্যই একম ভয় দেখানো হচ্ছে। কেন্দ্রের এরকম পেশীশক্তি প্রদর্শন রাজ্য সহ্য করবে না।
উল্লেখ্য, আগামী ১৪ ডিসেম্বর ডিজি ও মুখ্য সচিবকে তলবের জবাবও দিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যসচিবের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি দীর্ঘ চিঠিতে রাজ্য সরকার জে পি নাড্ডার সফরে তাদের দায়িত্ব, ভূমিকা ও হামলা-পরবর্তী তদন্তমূলক কাজকর্মের বিস্তারিত খতিয়ান ব্যাখ্যা করে। এবং চিঠির একেবারে শেষে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়, যেহেতু রাজ্য সরকার গোটা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, ফলে মিটিংয়ে 'স্টেট অফিসিয়ালস'দের নিয়ে কেন্দ্রের বসাটা এই মুহূর্তে নিষ্প্রয়োজন।
এদিকে, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই চিঠির পাল্টা সমালোচনা করেছেন বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। জি ২৪ ঘণ্টাকে তিনি বলেন, অজয় ভাল্লা রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখেছেন। তার মধ্য়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ঢুকে পড়ছেন কীভাবে! উনি কে! আইন সম্পর্কে উনি কিছুই জানেন না। শুধুমাত্র হাওয়া গরম করার জন্যই এসব করছেন। আইন শৃঙ্খল রাজ্যের বিষয়। কিন্তু তার যদি ভেঙে পড়ে তাহলে কেন্দ্রে হস্তক্ষেপ করতেই পারে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এতে মাথা গলানোর কোনও এক্তিয়ারই নেই এখানে।