চম্পক দত্ত: NREGA প্রকল্পে গ্রামে ঢালাই রাস্তার কাজ শুরু হলেও মাঝ পথে কাজ বন্ধ। তাই রাস্তার কাজের টাকা গেল কোথায়? রাস্তাই বা কবে হবে প্রশ্ন এলাকাবাসীর। ঢালাই রাস্তা নির্মানের কাজ কয়েকবছর আগে থমকে যাওয়ায় স্থানীয় শাসকদল ও প্রশাসনের দিকেই আঙুল তুলেছেন এলাকাবাসী। আর এই ঘটনায় তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সহ একাধিক তৃণমূল নেতার নাম উল্লেখ করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে গ্রাম জুড়ে পড়লো বেনামি পোস্টার।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এলাকার সমস্যার সমাধানের জন্য বারে বারে ব্লক প্রশাসন থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কাজের কাজ কিছুই হয়নি এমনি অভিযোগ তুলে চরম ক্ষোভ ফুঁসছে তারা। যদিও বেশিরভাগ গ্রামের মানুষেরই দাবি দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাদের যাতায়াতের রাস্তাটুকু তৈরি করে দেওয়া হোক। জানা গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের জাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাকচা গ্রামে NREGA প্রকল্পে ঢালাই রাস্তার কাজ হবে বলে গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফ থেকে লাগানো হয়েছিল বোর্ড।


ঠিকাদারি সংস্থা রাস্তায় অল্প কিছু মালপত্র ফেলে রাস্তায়, লাগানো হয় বোর্ড। তাতে উল্লেখ করা হয় রামজীবনপুরের বাইপাস হতে সলিমুদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত ঢালাই রাস্তার কাজ, ২০২০-২১ অর্থবর্ষ, কাজের জন্য ৩ লক্ষ ৪৩ হাজার ১৪১ টাকা এই প্রকল্পের জন্য ব্যয় হিসেবে ধরা হয়েছে। আর সেই রাস্তার কাজেই প্রশাসনের চরম গাফিলতি এমনকি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুললো গ্রামের মানুষজন।


বাকচা গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, রাস্তার কাজ শুরু হতেই গ্রামের বেশ কয়েকজন মানুষের মধ্যে জায়গা সংক্রান্ত বিবাদ দেখা দেয়। সেই বিবাদ মেটানোর জন্য গ্রামের মানুষজন উভয় পক্ষ একাধিকবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনের তরফ থেকে সমস্যার সমাধানের কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। এদিকে রাস্তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়।


এদিকে ভালো রাস্তা না থাকায় বেশ কয়েক বছর ধরে চরম রাস্তার সমস্যায় ভুগছেন গ্রামের মানুষজনেরা। গ্রামের মানুষজনদের অভিযোগ, তারা জানতে পেরেছেন এই রাস্তার যে কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল সেই টাকাও তুলে নিয়েছেন ঠিকাদারি সংস্থা, গ্রাম পঞ্চায়েতের সহযোগিতায়। এক কথায় রাস্তা না করেই রাস্তার কাজের টাকা উঠল কি করে প্রশ্ন তুলছেন গ্রামের মানুষজন। এই ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে গ্রাম জুড়ে শাসকদলের প্রধান সহ একাধিক তৃণমূল নেতার নাম উল্লেখ করে গ্রামে পোস্টারিংয়ে। তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সহ একাধিক নেতার নাম উল্লেখ করে পোস্টারিং করা হয়েছে এই বাকচা গ্রামে।


পোস্টারে উল্লেখ করা হয়েছে, 'রামজীবনপুর বাইপাস থেকে সেলিমুদ্দীনের বাড়ি পর্যন্ত ঢালাই রাস্তাটি না করে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে কেন মুজিবুর রহমান, স্বদেশ প্রামাণিক, অরুন ধাড়া, অভিজিৎ ধাড়া, উমাশঙ্কর চৌধুরী, জবাব দাও’। সঙ্গে এও উল্লেখ রয়েছে, ‘৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা কি এনাদের পেটে?’


আরও পড়ুন: Ayan Sil: কেঁচো খুঁড়তে মিলল কেউটে! অয়ন শীলের অজানা বহু ফ্ল্যাট-অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেল ইডি


এই বিষয়ে জাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান স্বদেশ প্রামাণিক স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘এটি অনেক দিনের সমস্যা, জায়গা সংক্রান্ত লোকাল একটা সমস্যার জন্য আমরা অনেকবার বসেছি সমাধানের জন্য কিন্তু তা হয়নি। গ্রাম পঞ্চায়েতের যেহেতু নিজস্ব জায়গা নেই তাই মানুষের জায়গায় আলোচনার ভিত্তিতে রাস্তার কাজ করা হয়। আপনারা যেহেতু আবার এটি নিয়ে বলছেন তাই আবার গ্রামে গিয়ে কথা বলবো’। তবে পোস্টারিংয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।


এই নিয়ে চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, ‘বিষয়টি আমার নলেজে নেই আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। পঞ্চায়েতকে বলেছি রিপোর্ট দেওয়ার জন্য, অনিয়ম হয়ে থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘


আরও পড়ুন: Jalpaiguri: গ্রীষ্মের শুরুতেই তীব্র জলকষ্ট জলপাইগুড়িতে, সমাধানের আশ্বাস উপ প্রধানের


সরকারি উদ্যোগে গ্রামে ঢালাই রাস্তা নির্মন হবে তা যদি পঞ্চায়েতের জায়গা না থাকে তা সাধারণ মানুষের জায়গায় করতে হয় তাহলে শুরুতেই কেন তা মেটানো গেলনা? রাস্তা নির্মানের জন্য ওয়ার্ক অর্ডার সহ ঠিকাদার সংস্থাকে মালপত্র কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দও করা হয়ে যায় বছর দুয়েক আগে। তারপরও কেন সেই কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে থাকবে? এমনই সব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসনকে।


পাশাপাশি গ্রামে ঢালাই রাস্তাকে কেন্দ্র করে পঞ্চায়েত প্রধান সহ একাধিক নেতার নাম উল্লেখ করে পোস্টারিং হওয়ায় পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিড়ম্বনায় শাসকদল। জট কাটিয়ে গ্রামের মানুষের যাতায়াতের সুবিধায় বন্ধ থাকা ওই ঢালাই রাস্তার কাজ কবে পুনরায় শুরু হয় এখন সেটাই দেখার।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)