Siliguri: ত্রিহানায় কাদের হানা? মালিক থেকে শ্রমিক সকলে চাইলেও কেন খুলছে না চা-বাগান?
Tirrihannah Tea Estate: মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের কথাচালালির মধ্যে মাঝে পড়ে কী বলছেন ত্রিহানার চা-শ্রমিকরা? বাগানকর্মী শেখর চিক বরাইক বলেন, আমরা চাই, বাগান খুলক। বাগান খুললে পেটে দানা পড়বে, না খুললে দানা পড়বে না। সরকারের কাছে তাই আবেদন, বাগান খোলার ব্যাবস্থা করা হোক।
নারায়ণ সিংহ রায়: বন্ধ চা-বাগান খোলা নিয়ে মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে নানা দিক থেকে কথা চালাচালি চলছে। কিন্তু এসবের মধ্যে পড়ে কী বলছেন ত্রিহানার চা-শ্রমিকরা? তাঁরা বলছেন, তাঁরা চান বাগান খুলক, কেননা বাগান খুললে পেটে দানা পড়বে, না খুললে পড়বে না। সরকারের কাছে তাই তাঁদের আবেদন, অচিরেই বাগান খোলার ব্যাবস্থা হোক।
আরও পড়ুন: Aadhaar Deactivation: ফের নামল আধার-আঁধার! এবার আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হওয়ার চিঠি পৌঁছল কালনাতেও...
কোন চা-বাগান? খোলা যাচ্ছে না ত্রিহানা চা-বাগান। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, চা-বাগান ও চা-শ্রমিকদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন একাধিক বার্তা দিয়েছেন, বারবার বাগান খোলার কথা বলেছেন, শ্রমিকদের বোনাস-সমস্যা মেটানোর পরামর্শ দিচ্ছেন, তখন তৃণমূলেরই শ্রমিক সংগঠনের এহেন কীর্তিতে কার্যত প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ত্রিহানা চা-বাগানের মালিকপক্ষের দাবি, চা-বাগানের পাশ থেকে বয়ে চলা বালাসন নদী থেকে বেআইনি ভাবে বালি-পাথর তোলা হয়। তারপর সেগুলি বাগানটিকে ব্যবহার করেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই পাচার আটকে দিতেই তৃণমূলের শ্রমিক নেতাদের রোষে পড়তে হয় বাগান কর্তৃপক্ষকে। যার জেরে বাধ্য হয়ে বন্ধ করতে হয় চা-বাগান। এরপর গত অক্টোবরে বোনাস নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। ১৯ শতাংশ বোনাসের বদলে ১৮ শতাংশ বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন বেঁকে বসে। বোনাস দেওয়া যায়নি। অভিযোগ, খেপিয়ে তোলা হয় শ্রমিকদের। জেলা আইএনটিটইউসি-র নেতাদের মদতেই বাগানে অস্থিরতা তৈরি করা হয়। এই পরিস্থিতিতে গত অক্টোবর থেকেই বাগানে অর্থনৈতিক অবরোধ শুরু হয়। তৈরি চা বাজারে পাঠানোর কাজও আটকে যায়। জানা গিয়েছে, বাগানেই এই মুহূর্তে পড়ে নষ্ট হচ্ছে ৮৫ হাজার কিলোগ্রাম চা। এ নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তাঁরা।
বাগানের তিনটি ডিভিশনের মধ্যে একটি লকআউট থাকলেও দুটি খোলা। ঝাবড়া ও মোহনলাল এই দুটি বাগানে কাজ চলছে। তবে মূল ডিভিশন ত্রিহানা বন্ধ থাকায় বিপাকে শ্রমিকরা। তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতা যদিও বলেছেন, তাঁরা বাগান খুলতে চাইছেন, কিন্তু মালিকপক্ষের সদিচ্ছার অভাবের কারণেই তাঁরা বাগান খুলতে পারছেন না। অপর দিকে, মালিকপক্ষের দাবি, তৃণমূল নেতাদের একাংশ বাগানে রটিয়ে দিচ্ছে, বিকল্প মালিকের খোঁজ দেবেন তাঁরা। ইচ্ছাকৃত ভাবেই বাগান খুলতে না দিয়ে ঝামেলা করা হচ্ছে।
ত্রিহানা চা-বাগানের অন্যতম ডিরেক্টর বিমল ঝাওয়ার বলেন, মূলত মাফিয়া কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্যই ত্রিহানাকে বন্ধ করে রাখছে শ্রমিক সংগঠনের একাংশ। ভুল বোঝানো হচ্ছে শ্রমিকদের। বোনাসকে কেন্দ্র করে প্রথমে সমস্যার শুরু। ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। আমরা বোনাস দিতে রাজি হই। ছয় শতাংশ বোনাস দেওয়া হয়েছে। বাগান যদি বন্ধ করে রাখে তাহলে কাজ কোথা থেকে হবে? ত্রিহানার তিনটে ডিভিশনের মধ্যে বাকি দুটো ডিভিশনে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে, তাহলে ত্রিহানা বন্ধ কেন? প্রশাসনকে সবটাই জানিয়েছি। বাগান মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে তালমিল খুব ভালোই থাকে। তবে অন্য কেউ কলকাঠি নাড়ছে। তবে তিনি পরিষ্কার করে দেন এই বলে যে, তাঁর মনে হয় না শাসকদল এখানে জড়িত, দলের শীর্ষ নেতারা হয়তো ঠিক ঘটনাটা জানেনও না। চার-পাঁচজনের একটি দল নিজেদের কোটি কোটি টাকার অবৈধ মাইনিংয়ের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ত্রিহানাকে ব্যবহার করছে। রাজ্যের কাছে অনুরোধ, গোটা বিষয়টি স্বচ্ছতার সঙ্গে খতিয়ে দেখা হোক।
দার্জিলিং জেলা আইএনটিটিইউসির সম্পাদক রঞ্জন চিক বরাইক বলেন, বোনাসকে কেন্দ্র করে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। ম্যানেজার বাগান ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এই নিয়ে বিস্তর আন্দোলন হয়েছে। মাসতিনেকের উপর বাগান বন্ধ। মালিকপক্ষ-সহ শ্রমিকপক্ষও বাগান খুলতে চায়। কিন্তু শ্রমিকদের কাছ থেকেই আইএনটিটিইউসির সভাপতি নির্জল-সহ বাগানের নেতৃত্বদের মধ্যে রাজেন, সুশীলরা নাকি বাগান খুলতে বাধা দিতে চাইছে বলে জানা গিয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছে আমার আবেদন, দ্রুত বাগান খোলার ব্যবস্থা করা হোক। যাঁরা বন্ধের পক্ষে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও অনুরোধ জানাব।
তবে শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি যে নির্জল দে-র প্রসঙ্গ তুলে ধরেন সংগঠনের সম্পাদক সেই নির্জল দে-কে ফোনে ধরা যায়। তিনি জানান, 'বাগান বন্ধের পক্ষে আমরা নই, কিন্তু শ্রমিকদের যে পাওনাগন্ডা রয়েছে, তা মিটিয়ে দিতে হবে।' এখানেই প্রশ্ন উঠছে, বকেয়া প্রায় ৩০ কোটি টাকা না মেটালে তাহলে কি বাগান খুলবে না? সে প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মেলেনি।
বাগানশ্রমিক সরস্বতী গৌর জানান, 'জানি না, বাগান কেন বন্ধ? বাগান থেকে আয় হচ্ছিল। ১৮ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশ বোনাসের সমস্যাকে কেন্দ্র করে সমস্যা শুরু হয়েছিল। আমরা চাই বাগান খুলুক, মালিকও চাইছেন, বাগান খুলুক কিন্তু দলই শেষ কথা বলছে। কিন্তু আমরা কী করে চালাব। বিভিন্ন জায়গায় সবারই কমবেশি ব্যাঙ্কঋণ রয়েছে। সেগুলি মেটানোই দায় হয়ে উঠেছে।' বাগানকর্মী শান্তি জানান, 'বাগানের দলের লোকেরাই বাগান বন্ধ করে রেখেছে। বোনাস তো পাইনি, উল্টে বাগানও বন্ধ। আমরা চাই বাগান খুকে যাক।'